মিথ্যা, সত্যের কাপড়-চোপড় নিয়ে পালিয়ে গেছে। সত্য তাই লোকলজ্জায় কুয়োর ভেতর আশ্রয় নিয়েছে।

👉👉 মিথ্যা এখন সত্যের পোশাক পরই সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর সত্য লজ্জায় অন্ধ কুয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
আমরা সব কিছু জেনে বুঝে ও মিথ্যার মায়ায় আসক্ত হই। নিচের চমৎকার গল্পটি পড়ুন আর ভাবুন…

👉👉নিন্মের ছবিটি নগ্ন।
এটি Jean Leon Gerome নামক একজন চিত্রকরের পেইন্টিং। ১৮৯৬ সালে আঁকা এই ছবিটা ঊনিশ শতকের একটি লোক কথাকে ভিত্তি করে আঁকা হয়েছিলো। যার শিরোনাম ছিলো-
“The truth is coming out of the well.”

👉👉গল্পটা ছিল এরকম –
একবার সত্য এবং মিথ্যা পরস্পরের সঙ্গে দেখা করলো কিছু বিষয়ে মীমাংসার তাগিদে। হাঁটতে হাঁটতে তারা চলে গেলো একটা কুয়োর পাশে।

মিথ্যা বললো, দেখো, কী পরিষ্কার জল। চলো আমরা দুজনে মিলে এখানে গোসল করে নেই ।

বলাবাহুল্য সত্য বিশ্বাস করেনি মিথ্যার কথা। নিজে পরখ করে দেখলো। যখন দেখলো কুয়োর জল সত্যিই পরিষ্কার তখন মিথ্যার প্রস্তাবে রাজী হলো।

দুজনে পোশাক ছেড়ে নেমে পড়লো কুয়োর মধ্যে। গোসল করার মাঝখানে মিথ্যা কুয়ো থেকে উঠে এসে সত্যের পোশাক পরে পালিয়ে গেলো।

খানিকক্ষণ অপেক্ষা করার পর মিথ্যাকে ফিরতে না দেখে সত্য উঠে এলো কুয়ো থেকে। না, মিথ্যা তো কোথাও নেই, পোশাকও নেই। রাগে অন্ধ হয়ে সত্য বের হলো মিথ্যাকে খুঁজতে, কিন্তু নগ্ন সত্যকে দেখে ছিঃ ছিঃ ধিক্কার করলো সভ্য মানুষেরা। এমন কী তেড়েও এলো অনেকে। অসভ্য, বর্বর, ইতর, সমাজবিরোধী, রাজাকার ইত্যাদি বলে গালাগালি শুরু করল অনেকেই। কেউ কেউ নেতৃত্ব দিয়ে সত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দিল। কেউ কেউ ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই বলে মিছিল করা শুরু করল।

সত্য অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তাদের বোঝাতে না পেরে, নিজের সম্মান রক্ষার্থে, রাগে দুঃখে অপমানে ফের কুয়োয় নেমে গেলো।

তারপর থেকে সত্যকে আর কখনও কেউ দেখেনি।
এখন দুনিয়াতে সত্যের পোশাক পড়ে ঘুরে বেড়াতে
যাকে দেখেছে সে আসলে সত্যের পোশাক পরা মিথ্যা!
সে এখন সব জায়গায় বিরাজ করছে।
অফিসে-আদালতে, রাজনীতিতে-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে!
সংসারে সর্বত্র এখন মিথ্যার অবাধ বিচরণ আর সে সব সময় সত্যের পোশাক পড়েই চলাফেরা করে।

রাবেতা আলমে আল ইসলামি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

রাবেতা আলমে আল ইসলামিয়া’র লগো।

📕📘 সৌদি আরবের প্রাণকেন্দ্র মক্কা এবং মদিনার মধ্যবর্তী একটি সুন্দর উপত্যকায় অবস্থিত “রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী” মুসলিম বিশ্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও দাতব্য সংগঠন। ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার ও সভ্যতা প্রচার-প্রসার, ইসলামের ওপর আরোপিত সন্দেহ ও সংশয়ের অবসান, মুসলিম বিশ্বে সৃষ্ট সংকট নিরসন এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য মানবিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে ১৮ মে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি।
সৌদি আরবের তৎকালীন যুবরাজ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ এবং পরে তিনি বাদশাহ হন এবং তারই উদ্যোগে মক্কা জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী এবং পবিত্র নগরীতেই তার প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। তবে পৃথিবীর একাধিক রাষ্ট্রে সংগঠনটির অফিস ও কেন্দ্র রয়েছে।

রাবেতার সম্মেলন কক্ষ

২২টি সদস্য দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করা রাবেতার বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৪০ এবং পৃথিবীর ৩৮টি দেশে ৫৩টি শাখা অফিস রয়েছে এর।
রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর প্রধান লক্ষ্য ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা; বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ইসলামের বিশ্বাস, বিধান, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানো; বিশেষত মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়া সংশয়, বিভ্রান্তি ও চিন্তার ব্যাধিগুলো দূর করে উম্মাহকে সুরক্ষা দেওয়া। পৃথিবীব্যাপী শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সুরক্ষা, অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং মুসলিম বিশ্বে সৃষ্ট সংকট নিরসনে কাজ করছে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী। পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার বিস্তার, মুসলিম দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয়, মসজিদ-মাদরাসা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা, সামাজিক সচেতনতা তৈরি, অমুসলিমদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহর অগ্রগতি সাধন সংগঠনটির অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

সাংগঠনিক কাঠামোতে মহাসচিবই রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। সংগঠনের সাধারণ সভায় সদস্য দেশের প্রতিনিধি, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমান মহাসচিব মুহাম্মদ দিন আবদুল করিম ঈসা। তিনি সৌদি আরবের সাবেক আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রী।

তবে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর নীতিনির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে ৬০ সদস্যের সংগঠনের উচ্চতর কমিটি। মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত উচ্চতর কমিটির সিদ্ধান্তই সংগঠনের নির্বাহী আদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা রাবেতা ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বাস্তবায়ন করে। উচ্চতর কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সৌদি আরবের প্রধান মুফতি। এই কমিটির কোনো সদস্য মারা গেলে বা সদস্য পদ শূন্য হলে কমিটির অন্যান্য সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে নতুন সদস্য গ্রহণ করা হয়।
গত বহু বছর ধরে শুরু করে আজ পর্যন্ত (এপ্রিল ২০২৪) এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রখ্যাত আলেম ও বিজ্ঞ ফকিহ, ভারতীয় উপমহাদেশের আলেমদের শিরোমনি সৈয়দ কামাল উদ্দিন জাফরী।
রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হলো ‘আল মুতামারিল ইসলামিল আম’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
এই সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরা মুসলিম উম্মাহর সমকালীন বিভিন্ন সংকটের সমাধান এবং আগামী দিনের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।
রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর একটি বহুল প্রশংসিত কার্যক্রম হলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদ নির্মাণ করা। ১৯৭৫ সালে স্বাক্ষরিত সংগঠনের নীতিমালার আলোকে একটি উচ্চতর কমিটি এই কার্যক্রম পরিচালনা করে।

📕📘এ ছাড়া রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর সাহিত্য ও সংস্কৃতি,
ফিকহুল ইসলামী (ইসলামী আইন),
সিরাত (নবী-রাসুলদের জীবনচরিত),
হিফজুল কোরআন,
ত্রাণ ও সহযোগিতা বিষয়ক পৃথক কমিটি রয়েছে। সদস্য দেশগুলোতে নিজ নিজ লক্ষ্য বাস্তবায়নে এসব কমিটি কাজ করে থাকে।

📘📕 তবে বর্তমান সত্য হলো, এত আশা ভরসা ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটির কার্যক্রম এখন শুধু পবিত্র কোরআন ছাপানো আর পৃথিবীর কোথাও কিছু মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা।

মুসলিম বিশ্বের ও মুসলমানদের স্বার্থ এখানে খুব কম দেখা হয় বর্তমানে। বর্তমান সৌদি প্রশাসন ও রাজতন্ত্র যেহেতু মাদখালি মতবাদে বিশ্বাসী ও সেই অনুযায়ী চলে তাই রাবেতা আলমে আল ইসলামিয়া ও সেই একই পন্থা অবলম্বন করে চলতে বাধ্য হয়। কারণ বাইরে সদস্য রাষ্ট্রগুলো এবং সেখানকার প্রতিনিধিরা তেমন কিছু বলতে পারেনা সৌদি আরবের দাপটের জন্য।

যে রাবেতা আলমে আল ইসলামিয়া তৈরি হয়েছিল একটি ইসলামিক সংস্কৃতি ও ইসলামিক অর্থনীতি ব্যবস্থা বিশ্ববাসীকে উপহার দেওয়ার জন্য, সেই ইসলামী সংস্কৃতির পায়ে কুঠারাঘাত করে খোদ সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিনেমা হল এবং সুদি ব্যাংক।

মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া প্রসঙ্গে।

📕📘ইসলাম হল একটি পূর্ণাঙ্গ এবং স্বাভাবিক জীবন বিধানের নাম। এখানে বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি উভয় চরমপন্থা সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য।
আমাদের সমাজের একদল লোক মহিলাদেরকে জোরপূর্বক মসজিদে এবং ঈদগাহে নিতে চায় আরেকদল লোক হুজুর-পূর্বক বের করে দিতে চায়। দুটোই চরমপন্থা। ইসলাম সবসময় স্বাভাবিক এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন করার তাগিদ দিয়ে থাকে এবং এটাই হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নত।।

ইসলাম কারো গোত্রীয় সম্পদ নয় বরং এটি একটি সার্বজনীন জীবন বিধান!! আমার আপনার মত ও চিন্তা- চেতনার বাহিরে গেলেই কি অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে হবে? গালাগাল শুরু করতে হবে??
এ স্বভাব তো প্রকৃত মু’মিনের স্বভাব নয়।
এটা মূলতঃ মুনাফিকের স্বভাব।

আপনি আমি দ্বি- মত করুন, করতেই পারি। তবে নোংরা ভাষায় নয়? বর্তমান সময়ে এই ফেতনার যুগে মহিলারা মাসজিদ ও ঈদগাহে যাবে কি না, এটা একটি ইখতেলাফি অর্থাৎ মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা। একদল আলেম পরিপূর্ণ পর্দা পালনের শর্তে যায়েজ বলেছেন। আরেক দল আলেম নিরুৎসাহিত করেছেন।
কোনো আলেমই না জায়েজ বলেন নি। না জায়েজ বলবেন কিভাবে- স্বয়ং রাসূল সা, বলেছেন – তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে তাঁর মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না বলেছেন এবং এই কথা মজুদ আছে সহীহ মুসলিম হাদিসে।
👉👉রাসূল সাঃ যুগে নারীরা মাসজিদে যেতেন, সাহাবাগণের যুগে মাসজিদে যেতেন, এখনও মাসজিদে হারাম ও মাসজিদে নববীতে নারীরা উপস্থিত হন। সারা পৃথিবী থেকে আসা হাজার-হাজার নারীকে ঈদের জামায়াতে নামাজ পড়েন। পৃথিবীর শত-শত রাষ্ট্রে জুমু’আর দিন ও ঈদগাহে নারীরা উপস্থিত হন। এ নিয়ে সেখানে কোনো কথা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে একদল আলেম ইসলামকে তাদের গোত্রীয় সম্পদ বানিয়ে নিয়েছে। কারো কথা মনমতো না হলে চরম নিকৃষ্ট মনোভাব পোষণ করে , এবং বলতে দ্বিধা নেই যে এই কাজটি করে থাকে হানাফী মাযহাবের একটি ফিরকা সেটি হলো কওমি দেওবন্দী ও তাবলীগী ফিরিকা।
অপরদিকে আমাদের আহলে হাদিস মাযহাবের ভাইরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক খেপে গিয়ে তাদেরকে কাফের পর্যন্ত ফতোয়া দিয়ে বসে থাকে। এই হল অবস্থা।

👉👉হ্যাঁ, আমরাও নিঃসন্দেহে একমত যে, বর্তমান এই ফেতনা ফাসাদের যুগে নারীদের নামাজ মাসজিদের চেয়ে ঘরে উত্তম, ঘরের চেয়ে কুঠুরিতে উত্তম, এবং এ কথাগুলো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
কিন্তু জুমু’আ ও ঈদ এক্ষেত্রে ভিন্ন। কারণ এ দুটো ঘরে পড়ার নামাজ নয়, উপরন্তু এখানে খুতবার নাসীহা শুনা থেকে নারীরা বঞ্চিত হতে হয়। তাই তামাম পৃথিবীতে মাসজিদ সমূহে নারীদের জন্য আলাদা স্থান রাখা হয়।

আমি পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে গিয়েছি। সব দেশের মাসজিদে ছোট্ট পরিসরে হলেও “মুসাল্লান নিসা/ওইমেন প্রেয়ার রুম”- দেখছি। শুধু বাংলাদেশ ব্যতিক্রম।
তবে বাংলাদেশের বায়তুল মোকাররম মসজিদ, নিউমার্কেট মসজিদ, গুলশানের আজাদ মসজিদ, গাউসুর আজম মসজিদ সহ শুধু ঢাকা শহরেই দুই শতাধিক মসজিদে এখন মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা আছে এবং দেশে মডেল মসজিদগুলোতে মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
তবে যেহেতু নারীরা এখন বাইরে বের হয় চাকরির জন্য ও বিভিন্ন কাজে-কর্মে তাই রাস্তাঘাটের পাশে এবং শহরে ও অফিস আদালতের ধারে কাছে প্রত্যেক মসজিদেই নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রাখা এবং তাদের ফ্রেশ হওয়ার ব্যাবস্থা রাখা খুবই।

পর্দা সহ বউ হজ্জ ও ওমরায় যেতে পারে, বাংলাদেশে উল্টো ফাতওয়া দেওয়া হুজুরেরা বউ নিয়ে মাসজিদে হারামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, পর্দা সহ বউ নিয়ে মার্কেটে যায়, বাপের বাড়ি যায়, হাসপাতালে যায়, মাসতুরা তাবলীগে যায়, কোথাও উল্টো ফাতওয়া নেই!
শুধু জুমু’আ ও ঈদগাহে উল্টো ফাতওয়া কেন রে ভাই??
এখানেও কি আমাকে এখন নবী- রাসূল, সাহাবী ও আওলিয়া বিদ্বেষী বলে গালি দিবেন??
দিতে থাকেন তাতে কোন সমস্যা নেই।।
একদিকে আপনার আমাকে গালাগালি করেন অন্যদিকে আহলে হাদিস মাযহাবের বাইরেও আমাকে গালাগালি করে।।
অবশ্য নবী-রাসূলগণের সুন্নতের মধ্যে অন্যতম একটি সুন্নত হল মারপিট ও গালাগালি সহ্য করা। আল্লাহ আমাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন আমিন।
গালাগালি করেন, that’s okay।
মুখ আছে বলে যান,
কলম আছে লিখে যান- সত্য কথা বলা থেকে এক চুলও সরাতে পারবেন না। ইনশা আল্লাহ। অত্যন্ত আমার শক্তি থাকা অবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত ইনশাল্লাহ না।
মনে রাখবেন আমিও ওমর ,আলী, খালিদ সালাউদ্দিন আইয়ুবীর উত্তরসূরী।

📕📘স্বাভাবিক অবস্থায় মা বোনদের জন্য কোন নামাজ আদায়ের জন্যই মসজিদে /ঈদগাহে যাওয়া জরুরি নয় ;বরং মসজিদ অপেক্ষা ঘরে নামাজ আদায় করাই উত্তম। হ্যাঁ, একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে তারা মসজিদে যেতে পারবে এবং নামাজ পড়তে পারবে৷
তবে ঈদের জামাতে ও মসজিদে জুমার নামাজে উপস্থিত হতে পারেন এবং হওয়া উচিত দুইটি কারণে প্রথমত খুতবা শোনার জন্য দ্বিতীয়তও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সুন্নত ও ইসলামী সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য।। ইসলামী সংস্কৃতিকে সম্মান করা এবং ধরে রাখা ও বিরাট বড় নেকির কাজ।।

📘📘জুমা এবং ঈদের নামাজ ব্যতীত আর রাস্তাঘাটে অফিস আদালতে অথবা শহরে ভ্রমণ থাকা অবস্থা ব্যতীত নারীদের ঘরে নামাজ পড়া সর্বোত্তম।।
এই বিষয়ে কয়েকটি হাদিস নিচে দেওয়া হল–

উম্মে হুমাইদ আস সাআদী রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাই। নবী করীম সাঃ উত্তরে বললেন,
‘আমি ভালো করেই জানি, তুমি আমার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে নামাজ আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোনো রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের বা এলাকার মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের বা এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার পিছনে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর ঐ মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয়। এবং মৃত্যু পর্যমত সেখানেই নামাজ আদায় করতে থাকে।’ –মুসনাদে আহমাদ ৩৭/৪৫।

আরেকটি হাদীস দেখা যায়–
আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত। তিনি দেখেছেন- আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ মহিলাদের মসজিদে থেকে বের করে দিতেন। আর বলতেন যে, মসজিদের চেয়ে তোমাদের জন্য ঘরই উত্তম।
–মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫২০১,মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ, হাদীস নং-৪২৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৫৪৪১,আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫।

আমরাতা বিনতে আবদির রহমান বলেন-রাসূল সাঃ এর সহধর্মীনী হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন-যদি রাসূলুল্লাহ সাঃ মহিলাদের এখনকার অবস্থা জানতেন, তারা কি করে? তাহলে তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছে।
ইয়াহইয়া বলেন-আমি আমরাতাকে বললাম-বনী ইসরাঈলের মহিলাদের কি মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে? তিনি বললেন-হ্যাঁ।
সহিহ মুসলিম -১/১৮৩, হাদীস নং-১০২৭,সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫৬৯,মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৯৮২,মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-২৫৯,সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৫৪০

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর মৃত্যুর পর মুসলিম নারীরা এমন কিছু পোশাক পড়তেন, যার কারনে আম্মাজান হযরত আয়শা রাঃ একথা বলেছেন?
আর বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়শা রাঃ কী বলতেন?
তাই শুধু মসজিদে গেলেই হবে না। ঈদের নামাজে কিংবা জুমার নামাজে অথবা বিশেষ তারাবির নামাজে মহিলারা কোরআন শোনার জন্য নসীয়ত শোনার জন্য মসজিদে যেতেই পারেন এবং তাদেরকে সেখানে বাধা দেওয়া উচিত নয় বরং মাঝেমধ্যে নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে অবশ্যই স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে এবং শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য যেতে হবে। ফ্যাশন প্রদর্শনের জন্য কিংবা অন্য মহিলাদের সাথে গল্প গুজব করার জন্য বা বাহাদুরি করার জন্য বা নিজেদেরকে প্রদর্শন করার জন্য যাওয়া বড় রকমের গুনাহের কাজ। যা আজকাল মূলত হয়ে থাকে। আর এই জন্যই কিছু কিছু মোহাক্কেক আলেমগণ এই ফেতনার যুগে মসজিদে যেতে নিষেধ করে থাকেন এবং তাদের কথার মধ্যে যুক্তি আছে।
উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে একথা পরিস্কার যে, মহিলাদের ঈদগাহে ও মসজিদে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও এটি পছন্দনীয় নয়।

একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন যে,নবী সাঃ এর -যুগেই মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার তাগিদ তো দূরের কথা, উৎসাহও ছিল না; বরং কেবল অনুমতি ছিল। উৎসাহ কিংবা তাগিদ ছিল মর্মে কোনো একটি বর্ণনাও দেখতে পাওয়া যায় না।
তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মহিলাদের কে ঈদের নামাজে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলেছেন ঋতুপতি থাকা অবস্থায় এমনকি নিজের ওড়না না থাকলে অন্যের ওড়না ধার হলেও।
কিন্তু সেখানে প্রেক্ষাপট ছিল। তখন মুসলিমদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য তাই মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য এবং মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য আর কাফেরদের নিকট মুসলিমদের সংখ্যাকে বড় করে দেখানোর জন্য আর বিশেষ করে ইসলামের সেই প্রাথমিক যুগে নারীদেরকে ইসলামের বিষয়ে শিক্ষা দান করার জন্য সেখানে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল বলতে হয়। তাছাড়া ওই সময় আজকের দিনের মত ফিতনা ছিল না।
আজকাল তো এমন অনেক দেখা যায় যে মাহফিলে যাওয়ার নাম করে সিনেমা হলে চলে যাচ্ছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে। অথবা মসজিদে যাওয়ার নাম করে শপিং করতে যাচ্ছে কিংবা বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।

তৎকালীন সময়ে মুসলিম মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি ছিল নিম মুক্ত কয়েকটি কারণে। তবে বিশেষ করে কওমি দেওবন্দী আলেমগণ বলে থাকেন যে এই হাদীসগুলো রহিত হয়ে গেছে। আসল কথা হচ্ছে আমাদের দেশের কওমি ও দেওবন্দী আলেমদের একটি স্বভাব হল তাদের মতের বিপক্ষে গেলেই তারা হাদিসগুলোকে রোহিত হয়ে গেছে বলে ফতোয়া দিয়ে থাকে। অপরদিকে আমাদের বিশেষ করে বাংলাদেশের আহলে হাদিস মাযহাবের ভাইদের আরও একটি স্বভাব হল তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেও হাদিসগুলোকে জাল কিংবা অত্যন্ত দুর্বল বলে ফতোয়া দিয়ে থাকে।।
এভাবে উভয় দল সহি হাদিসকে অস্বীকার করে নিজেদের মত প্রতিষ্ঠার জন্য অনেকেই সংগ্রামের মধ্যে লিপ্ত হয় এমনকি বাহাস মুনাজারা করে তারা ইসলামকে বিধর্মীদের কাছে হাসির বস্তুতে পর্যন্ত পরিণত করে। এবং অনেক সময় মারামারি করে আহত নিহত হয়।।
👉ইমাম তাহাবী রহঃ বলেন, মহিলাদের ইসলামের প্রথম যুগে জামাতের উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানগণের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা।
–মায়ারিফে মাদানিয়াহ, শরহে তিরমিযী)

👉ইমাম আইনী রহঃ বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগ ফিতনা ফাসাদ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা একেবারেই বিপরীত। বর্তমান যুগ নারীদের বিরত রাখা তো দূরের কথা নিজেরাই এই সমস্ত ফিতনা-ফাসাদ থেকে বেঁচে থাকা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

👉মূলতঃ মহিলাদের মসজিদে জামাতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়ার কারণ হিসেবে তা’লীম অর্থাৎ ইলম অর্জন করাকেও উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বুখারী শারীফের ৯১৫ নং হাদিসের বর্ণনা দ্বারা।
উম্মে আতিয়া রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন আমাদেরকে বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হতো, আমরা কুমারী মেয়েদেরকে, এমনকি ঋতুবর্তী মহিলাদেরকেও নিয়ে ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের পিছনে থেকে তাদের তাকবীরের সাথে সাথে তাকবীর পড়তাম এবং তাদের দোয়ার সাথে সাথে আমরাও ঐ দিনের বরকত ও পবিত্রতা লাভের দোয়া করতাম।’

এ হাদিসে এবং অন্যান্য আরও হাদিসে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, ঋতুবর্তী মহিলাগণও ঈদগাহে উপস্থিত হতো। অথচ শরীয়তে ঋতুবর্তী মহিলাদের জন্য নামায সম্পূর্ণ হারাম।
সুতরাং তাদের ঈদগাহে বা জামাতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি যদি শুধুমাত্র নামাজের জন্য হতো, তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ ঈদগাহে উপস্থিত হতো না। মূলতঃ প্রথম যুগে নামাজসহ সকল অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, তালীম বা রাসূল সাঃ এর খুতবা থেকে এবং বিভিন্ন আলেমদের খুতবা থেকে ইলম বা জ্ঞান গ্রহন করা।
মোটকথা ওই সময় ওহী নাযিল হচ্ছিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিত্যনতুন আদেশ নিষেধ নাযিল হতো তা যেন পুরুষ মহিলা সকলে সমভাবে জানতে পারে সে কারণে তাদেরও উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল। এবং উপস্থিত হওয়া দরকার ছিল।।

তবে এই অনুমতিটাও ছিল শর্ত সাপেক্ষে।
👉পরিপূর্ণ পর্দাসহ গোটা শরীর আবৃত অবস্থায় বের হবে।
👉ঝনঝনানিপূর্ণ অলঙ্কার তথা ঘুঙ্গুর নুপুর ইত্যাদি পরে বের হতে পারবে না। এবং বেপর্দা বের হতে পারবে না তাছাড়া হাদিসে স্পষ্ট বলা আছে যদি কারো কাছে বড় ওড়না না থাকে তাহলে অন্যের কাছ থেকে ওড়না ধার নিয়ে যাবে কিন্তু বেপর্দা যেতে পারবে না
👉সাজগোজ ও সুগন্ধি সহ বের হতে পারবে না।
👉অঙ্গভঙ্গি করে চলতে পারবে না।
👉পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে রাস্তার একপাশ হয়ে চলবে।
👉 অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না।
👉সবচেয়ে মুখ্য বিষয় হল, তাদের এ বের হওয়াটা ফেতনার কারণ হতে পারবে না।
—আবু দাউদ হাদিস নং ৫৬৫, বযলুল মাজহূদ ৪/১৬১!!
উল্লেখ্য যে বর্তমান যুগেও এবং এই ফিতনা-ফাসাদের দিনে এসেও যদি এসব শর্ত পাওয়া যায় তবে মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে অনুমতি দেয়ার অবকাশ অবশ্যই আছে। এবং এই জাতীয় শর্ত পূরণ হলে তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দেওয়া মোটেও ঠিক নয় বরং উৎসাহিত করা উচিত।।
তাছাড়া মসজিদে গেলে ছোট ছোট বাচ্চারা মায়ের সাথে মসজিদে যাবে এবং সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করবে এবং মসজিদের প্রতি তাদের একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হবে এটাও একটা ভালো দিক রয়েছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা কেরামের যুগের পর যখন উক্ত শর্তগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে তখন সাহবায়ে কেরাম তা উপলব্ধি করতে পেরে মহিলাদের মসজিদে গমনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছেন অনেক এলাকাতে অনেক সাহাবী।
শুধু রাসূল সাঃ এর সময়ের প্রাথমিক যুগের আমল গুলো নিয়ে ফতোয়াবাজি করে ফেতনা সৃষ্টি করলে হবে না বরং সাহাবাগণের আমল গুলো আমাদেরকে দেখতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সাহাবাগণকে অনুসরণ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই সাহাবায়ে কেরামের প্রজ্ঞাপুর্ণ বিষয়গুলোকে আমাদের গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
এটা তো স্বতসিদ্ধ বিষয়ে যে, নবী সাঃ এর কথা কিংবা কাজ সাহবায়ে কেরামের রাঃ চাইতে বেশি কেউ বুঝেছে বলে দাবি করা কিংবা তাদেরকে আদর্শ মনে না করা নিতান্ত মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।

📘📘নিম্নে সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যসমূহ থেকে কিছু বক্তব্য উল্লেখ করা হল-

👉আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
যদি রাসুলুল্লাহ সাঃ বর্তমানকালের মহিলাদের অবস্থা দেখতেন তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন। যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনি ইসরাইলের মহিলাদেরকে।’ –সহীহ বুখারী ১/২৯৬!

👉আবু আমর শাইবানি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি.কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। (আলমুজামুল কাবির ৯৪৭৫, মজমাউযযাওয়াইদ ২/৩৫) আল্লামা হাইছামি বলেন, এই রেওয়ায়তের সকল বর্ণনা কারী সিকাহ-নির্ভরযোগ্য।

👉জুবাইর ইবন আওয়াম রাযি. তাঁর পরিবারের কোন নারিকে ঈদের জামাতে যেতে দিতেন না। — মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবাহ ৫৮৪৬।
📕📕 আসল কথা হলো মহিলাদের মসজিদে যাওয়া জায়েজ এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে মসজিদে যাওয়া উচিত। তাছাড়া আমার দেশের শহরের মসজিদগুলোতে এবং রাস্তার পাশের মসজিদগুলোতে যেখানে মানুষ দূরে জার্নি করে সেই প্রত্যেকটি মসজিদে মহিলাদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রাখা খুবই জরুরী কেননা আজকাল মহিলারা প্রায় বাইরে বের হয় বিভিন্ন প্রয়োজনে।
মহিলাদেরকে ডেকে ডেকে মসজিদে নিয়ে আসা যেমন একটি চরমপন্থা অতদ্রুপ মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করাটাও একটি চরমপন্থা বরং সামাজিক স্থিতিশীলতার দিকে লক্ষ্য রেখে এবং যাতে ফেতনা-ফাসাত সৃষ্টি না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা খুবই জরুরী।।
ঈদের নামাজের খুতবা শোনার জন্য,
জুমার নামাজের খুতবা শোনার জন্য,
ইসলামী সংস্কৃতিকে ধারণ করার জন্য।
মাঝেমধ্যে মহিলাদের উচিত বাচ্চাদের নিয়ে মসজিদে আসা। তবে অবশ্যই পর্দা ও শালীনতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর উদ্দেশ্য থাকতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সুন্নতের প্রতিষ্ঠা।।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন।

আয়াত এবং তেলাওয়াত, পবিত্র কোরআনের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা।

📕📘 আয়াত ও তেলাওয়াত (বাক্য এবং তা পাঠ করা) এর ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বারবার তাকিদ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন। সেই বিষয়গুলো মুফাসসিরগণ তাদের গবেষণা ও লেখনীর যারা তুলে ধরেছেন বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিভিন্ন বই-পুস্তক ও তাফসীর গ্রন্থ সমূহে।
নিচে তেলাওয়াত এবং আয়াত এর বিষয়ে আলেমদের গবেষণালব্ধ একটি মোটামুটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো–

📕📘#তেলাওয়াত
“তেলাওয়াত” শব্দটি কুরআনের বেশ কিছু জায়গায় ব্যবহার হয়েছে। তবে এই শব্দটির আক্ষরিক অর্থ এবং ব্যবহারিক মর্মার্থ দ্বারা কুরআন না বুঝে পড়াকে বোঝানো হয়নি। বরং এই শব্দটি কুরআনে ব্যবহার করা হয়েছে, জানার জন্য পড়া এবং জানিয়ে দেওয়ার জন্য পড়াকে বুঝাতে।

— অর্থাৎ কুরআনের কথাগুলো পড়ে জানা এবং মানুষকে জানানো ও বোঝানো এবং এর মাধ্যমে মানুষের লাইফ স্টাইলকে সংশোধন করা, পবিত্র করা, আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান এবং দিকনির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের লাইফ স্টাইলকে সাজানো এবং আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত, স্বাস্থ্য সম্মত করা। আল্লাহর বলা জ্ঞান অনুযায়ী নিজেকে সংশোধন ও বাস্তবসম্মত করা। মানুষকে আল্লাহর বলা কুরআনের কথাগুলো শোনানো এবং এর মাধ্যমে মানুষের জীবন বাস্তবতা সম্পর্কে জানানো, কুরআনের কথা শুনিয়ে মানুষকে জ্ঞান এবং হিকমাহ্ (বাস্তব পদ্ধতি) শিক্ষা দেওয়া, ইত্যাদি বুঝাতে কুরআনে তেলাওয়াত শব্দটি ব্যবহার হয়েছে।

অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে তেলাওয়াত শব্দটির ব্যবহারিক মর্মার্থ দ্বারা কুরআন না বুঝে পাড়াকে বোঝানো হয়নি। বরং এই শব্দটি দ্বারা কুরআনের কথাগুলো জানার জন্য পড়া এবং জানিয়ে দেওয়ার জন্য পড়া বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।

শব্দটি দ্বারা বুঝায়, বর্ণনা করা, শোনানো, জানিয়ে দেওয়া, আবৃত্তি করে শুনিয়ে দেওয়া। উদ্দেশ্য হলো: কোন বিষয় সম্পর্কে সরাসরি আল্লাহর বক্তব্য কি এবং এবিষয়ে আল্লাহর দিকনির্দেশনা কি; তা জানিয়ে দেওয়া। আল্লাহর আলোচনা বা বর্ণনা শুনিয়ে দেওয়া। তাঁর বলা আইন ও দন্ডবিধি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া এবং এর মাধ্যমে সংশোধন ও পবিত্র করা।

এ বিষয়টি সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে কুরআনের এই আয়াতের কথাগুলো ভালোভাবে দেখা যেতে পারে —-

  • সূরা বাকারা-129, 151,
  • সূরা ইমরান-164,
  • সূরা যুমার-71
  • সূরা ত্ব’লাক-11,
  • সূরা জুমা-2,
  • সূরা মারইয়াম-73,
  • সূরা ইউনুস- 15,
  • সূরা ক্বলম- 15,
  • সূরা মুমিনূন- 66-
  • সূরা জাসিয়া- 6,

📕📘 এবার আসা যাক #আয়াত এর ব্যাপারে। আয়াত অর্থ বাক্য বা বাক্যাং। আর এই বাক্যগুলোকে ইংরেজিতে ভার্স বলা হয়। প্রতিটা আয়াত বা ভার্স আলাদা আলাদা মনোভাব ও অর্থ প্রকাশ করে থাকে। এবং সার্বিক একটা বিষয়কে উপস্থাপন করার জন্য অনেকগুলি ভার্স বা আয়াত একত্রে প্রয়োজন হতে পারে।
“আয়াত” শব্দটি কুরআনের প্রায় দুই শতাধিক জায়গায় ব্যবহার হয়েছে। যার অর্থ প্রমাণ, নিদর্শন, দলিল, চিহ্ন, সূত্র, আলামত, বাস্তবতার নির্দেশক, নিশানা ইত্যাদি। আয়াত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো বিষয়ের দিকনির্দেশনা, আলোচনা বা বর্ণনা, যা কোন বিষয়ের বৈজ্ঞানিক, আধুনিক, মানবিক, সামাজিক কিংবা এককথায় সার্বিক বাস্তবতা বোঝার জন্য সূত্র এবং মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। যখন কোন কিছু দেখে ও বুঝে কিংবা জেনে, আল্লাহর সত্যতা কিংবা তাঁর আলোচনা, তাঁর হুকুম ও দিকনির্দেশনার বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা, যথার্থতা এবং এর সত্যতা উপলব্ধি করতে পারা যায় তখন তাকে আয়াত বলা হয়।

কোন কিছু প্রমাণ করার জন্য যেসব উপাদানগুলো; প্রমাণ, দলিল কিংবা প্রয়োজনীয় সূত্র হিসেবে কাজ করে, সেইসব উপাদানকেই বলা হয় আয়াত বা নির্দেশক।

অন্যভাবে বলতে গেলে: যে বাস্তবতা দেখা বা প্রত্যক্ষ করার কারণে; বুঝা বা জানার কারণে এবং যে মৌজেযা বা অলৌকিকতা উপলব্ধি করার কারণে তা অস্বীকার করার আর কোনো সুযোগ থাকে না, তাকে আয়াত বা নিদর্শন বলা হয়।

এছাড়াও বলাযায় যে, যখন কোন বিষয়ের সত্যতা প্রমাণ করার জন্য অন্য কোন বিষয় এসে সেখানে আলামত বা চিহ্ন হিসাবে কাজ করে, তখন তাকে আয়াত বলা হয়।

কোন বিষয়ের সত্যতা এবং যথার্থতা বোঝার জন্য যখন অন্য কোন কিছু এসে সেখানে প্রত্যক্ষ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়, যা সত্য প্রমাণের জন্য নির্দেশক হিসেবে কিংবা নিশানা বা নিশানী হিসেবে কাজ করে, তখনই তাকে আরবিতে আয়াত বা নিদর্শন বলা হয়।

যেমন প্রকৃতিতে যে বাস্তবতা রয়েছে তাও আয়াত বা আল্লাহর নিদর্শন। যা আল্লাহর সত্যতাকে প্রমাণ করে, অর্থাৎ এর সৃষ্টিকর্তাকে প্রমাণ করে। ঠিক একই ভাবে কুরআনের কথাগুলো নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আল্লাহর সত্যতাকে প্রমাণ করে। যেহেতু কুরআনের আয়াত বা কথাগুলো অস্বীকার করার কোন সুযোগ কিংবা সূত্র মানুষের হাতে নাই বা নেই।

অর্থাৎ কুরআনের কথাগুলোকে আয়াত বা নিদর্শন বলার কারণ হলো এটি একদিকে নিজেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে দলিল বা প্রমাণ হিসাবে কাজ করে। আবার অন্যদিকে প্রকৃতি, বিজ্ঞান এবং মানুষের জীবন বাস্তবতাও, কুরআনের কথাগুলোর সত্যতার বিষয়টিকে প্রমাণ করে দিতে এবং বাস্তবে দেখিয়ে দিতে সহায়তা করে।

যখন কোনো মাধ্যম কিংবা প্রয়োজনীয় উপাদান দ্বারা কোন কিছু বুঝতে পারা যায়, উপলব্ধি করা যায়, কোন বিষয়ের সত্যতা এবং যথার্থতা বোধগম্য হয় এবং যা নিজেও প্রমাণ, নিদর্শন বা দলিল হিসেবে কাজ করে, তাকেই আয়াত বলা হয়।

বিস্ময়কর কিছু বাস্তবতার কারণে কিংবা অলৌকিক কিছু উপলব্ধি করার কারণে সত্যকে সত্য হিসেবে বুঝে নেওয়া। যার ফলে তা অস্বীকার করাকে, দুঃসাহস দেখানোর স্বামীল বলে গণ্য করা হয়। এজন্যই তাকে আয়াত বা নিদর্শন বলা হয়। ফলে যা অন্তর থেকে অস্বীকার করার আর কোন সুযোগ থাকে না। তারপরেও যদি তা কেউ অস্বীকার করে, তবে এটাকে যৌক্তিকভাবে একগুঁয়েমি স্বভাব বলা হয় এবং কুরআন এই আচরণকে সুস্পষ্ট কুফর হিসেবে গণ্য করে অর্থাৎ সে পূর্ণ কাফের হয়ে পড়বে। এজন্যই কুরআনের কথাগুলোকে বলা হয় “আয়াত”।

বিষয়টি সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে কুরআনের এই আয়াতের কথাগুলো ভালোভাবে দেখুনঃ-

-সূরা জাসিয়া- 3-6
-সূরা যারিয়াত- 20
-সূরা নাযিয়া- 20
-সূরা আশ শুআরা- 4, 8, 15, 67, 121, 154, 158, 190, 197,
-সূরা হুদ- 59, 64, 96,
-সূরা যুখরুফ- 48,
-সূরা দুখান- 33,
-সূরা ইউনুস- 5-7, 21, 24, 74, 92, 97,
-সূরা আন‌’আম-4, 21, 25, 35, 37, 39, 97, 99, 109, 126,
-সূরা সাজদা- 26,
-সূরা সাবা- 15, 33,
-সূরা মায়েদা 114,
-সূরা ইমরান -13, 86, 183, 190,
-সূরা ইয়াসীন- 33, 97,
-সূরা আনফাল-58,
-সূরা বাকারা-164, 211, 259,
-সূরা আম্বিয়া-5
-সূরা ত্বহা- 47,54, 56, 72, 127, 128, 133, 134,
-সূরা মুমিন- 13, 22 23, 28, 34, 50, 56, 78, 81, 82,
-সূরা হামিম সাজদাহ- 39, 53,
-সূরা বনী ইসরাঈল- 1, 12, 13, 59, 98, 101-102,
-সূরা শূরা- 32, 33, 35,
-সূরা আনকাবূত- 44, 49, 50,
-সূরা মুমিনূন- 30, 45, 50,
-সূরা রুম- 20-25, 49, 47, 58,
-সূরা নামল- 12-13, 52, 86
-সূরা হজ্জ-36,
-সূরা কাসাস- 35-36,
-সূরা যুমার- 42,
-সূরা লোকমান- 32,
-সূরা কাহাফ- 9,17, 59, 105-106,
-সূরা নাহল- 11-13, 44, 64, 79, 105,
-সূরা ইউসূফ- 7, 35,105,
-সূরা আ’রাফ- 58, 73, 103, 126, 133, 136, 146, 147, 174, 203,
-সূরা ইব্রাহীম- 5, 81, 75,
-সূরা রাদ- 2-3, 9, 27, 38,
-সূরা ক্বলম- 15

📕📘মহান আল্লাহ্ তা’আলা সূরা আল কামার চারটি আয়াতে বারবার বলেনঃ-
“আমি এই কোরআনের কথাগুলোর মর্ম বোঝা মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছি । অতএব তোমাদের মধ্যে কি কেউ আছে যে কোরআনের পথ-নির্দেশ গুলো বা কথাগুলো বুঝতে চায় ?
—সূরা কামার- আয়াত- 17, 22, 32 এবং 40

📕📘সূরা মুহাম্মদ এর – আয়াত-24 নং আয়াতে আল্লাহ মোটামুটি ধমকের সুরে বলেন–
“”তোমরা আমার এই কোরআনের কথাগুলো নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করছো না কেন ? তোমাদের অন্তর কি তালাবদ্ধ”” ?
আয়াতের শেষে “তোমাদের অন্তর কি তালাবদ্ধ” এই বাক্য দ্বারা আল্লাহ ওই সমস্ত লোকদেরকে তিরস্কার করেছেন যারা কোরআন নিয়ে গবেষণা করে না এবং চিন্তা ভাবনা করে না আর কোরআন কি বলেছে কি আদেশ ও নিষেধ করেছে তা থেকে তারা শিক্ষা লাভ করে না।

📕📘আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কোরআনের সূরা ইয়াসীন-70 এবং সূরা ফাতির-22 নং আয়াতে বলেন–
মৃত লাশের জন্য আমি এই কুরআনের কথাগুলো পাঠাইনি।
কবর বাসীদেরকে আপনি আমার এই চূড়ান্ত লাভ-ক্ষতি সংক্রান্ত কুরআনের কথাগুলো শোনাতে পারবেন না। এটি পাঠিয়েছি জীবিতদেরকে দিকনির্দেশনা জানিয়ে দিতে। অথচ আজকাল দেখা যায় যে মৃত মানুষকে কোরআন শোনানো হচ্ছে। কবরের পাশে গিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা হয় এবং মানুষ মারা গেলে তার চারপাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। অথচ জীবিত থাকা অবস্থায় সেই লোকটার কাছে কোরআন পড়া হতো না এবং এমন বহু জীবিত লোক আছে যাদের কাছে কোরআন পড়া হলে তারা রাগ হয় এবং তারা সেখান থেকে সরে পড়ে।

পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদা-44, 45, 47 নং আয়াতে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা বলেন—
“”যারা আমার পাঠানো আইন বা বিধান অনুযায়ী বিচার মীমাংসা করে না, সবকিছুর পরিচালনা বা কর্ম পরিকল্পণা গ্রহণ করে না, তারা তো পূর্ণ কাফের, পূর্ণ জালেম, পূর্ণ ফাসেক।
অতএব এখানে তিনটি আয়াত দ্বারা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল যে যারা পবিত্র কোরআনের আইন ও বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে না এবং জমিনের মধ্যে আইন তৈরি করে না বরং বড় বড় আইন সভা ও সংসদ বানিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো আইন তৈরি করে তারা কাফের পাপাচারি এবং জালিম।
মুফাসসিরগণ বলেছেন আল্লাহ তিনটি আয়াতে তিন প্রকার লোকের কথা এই জন্য বর্ণনা করেছেন যে,
যারা আল্লাহর আইনের বিপরীতে আইন তৈরি করে স্বেচ্ছায় এবং যারা মনে করে যে বর্তমানে সেই 1400 বছর আগের আইন চলবে না তারা মূলত সরাসরি কাফের।
আর এই কাফেরদের আবাসস্থল হল অনন্তকাল জাহান্নাম। তারা যতই কালেমা পড়ুক যতই নামাজ রোজা যাই কিছু করুক যদি আল্লাহর আইনের বিপরীতে অথবা আল্লাহর আইন এর বিকৃত সাধন করেন নতুন কোন আইন তৈরি করে আইন সবার মাধ্যমে অথবা যে কোন ভাবে তবে তারা কাফের হিসেবে গণ্য হবে।।
মুফাসসিরগণ ওই সমস্ত লোককে এই আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী জালিম হিসেবে বর্ণনা করেছেন যারা এই আইনগুলো অত্যন্ত খারাপ এবং মানব রচিত জেনেও এই আইন দিয়ে বিচার ফায়সালা করে অর্থাৎ হাকিম ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি হয়ে বিচার ফায়সালা করে। কিন্তু তাদের ইচ্ছা ছিল না আল্লাহর বিরোধী আইন দিয়ে বিচার ফায়সালা করার তবে তারা বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তাদেরও যদি ইচ্ছা থাকে যে এই আইন গুলি ইসলামী আইনের চেয়ে অনেক ভালো তবে তারাও সরাসরি কাফের হয়ে যাবে।
এখানে তিনটি আয়াতের মধ্যে একটি আয়াতে বলা হয়েছে যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না আইন তৈরি করে না তাদেরকে পাপাচারী বলা হয়েছে। এখানেও যারা নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাকিম ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে অথবা বিচারক হয়ে আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে আইন দেওয়া ইচ্ছা ছিল না কিন্তু দিতে বাধ্য হচ্ছে অথবা এই চাকরি করছে বলে দিচ্ছে তারা এখানে পাপাচারি হবে কিন্তু কাফের হবে না। তবে যদি তারা স্বেচ্ছায় এই আইনগুলোকে মেনে নেয় এবং তাদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না হয় তবে তারাও সরাসরি কাফের হিসেবে গণ্য হবে।।।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সূরা হাক্কাহ্-44-46 নং আয়াতে বলেন—
“নবী যদি তার নিজের কোনো কথা আমার নামে কুর‌আনের ভেতরে চালিয়ে দিত, তাহলে আমি তার হাত চেপে ধরতাম, তার কণ্ঠনালী কেটে ফেলে দিতাম এবং তোমাদের কেউই তাকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারতে না!

পবিত্র কোরআনে,সূরা ফাতির- আয়াত-37 নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে–
“”হে জাহান্নামিরা (জুলুমকারীরা) আমি “আল্লাহ্” কি তোমাদেরকে দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্যে এতটা সময় সুযোগ বা বয়স দেয়নি ? যাতে তোমাদের যে কেউ আমার এই কুরআনের কথাগুলো জেনে নিতে চাইলে সে জেনে নিতে পারত ? তোমরা নিজেদেরকে শুধরে নিতে চাইলে শুধরে নিতে পারতে” ?

কুরআনুল কারীমের সূরা ফুরকান-30 নং আয়াতে আছে–“”তারপর রাসূল (সাঃ) হাশরের মাঠে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করে বলবেন ( নালিশ করে বলবেন ) হে আল্লাহ্ এই জাতি কুরআনের কথাগুলোকে বাদ দিয়ে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল “”!

আল্লাহ জাল্লা শানুহু সূরা ত্ব’হা-124 নং আয়াতে বলেন—
“যারা আমার এই কুরআনের কথাগুলো পড়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবে; আমি তাদের আশা, চিন্তা চেতনার সীমা এবং সফলতা বিষয়ক ধারণাকে অতি সংকীর্ণ করে দেব!

সূরা আর রাহমানের বর্ণিত দুই সাগরের অন্তরালের ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

📕📘দুই সাগরের অন্তরাল ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ

👉👉 দুই সাগরের অন্তরালের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
“তিনি প্রবাহিত করেন দুই সমুদ্র, যারা পরষ্পর মিলিত হয়, কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যাারা অতিক্রম করতে পারে না। অতএব,তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে”
–সূরাহ আর-রহমান : ১৯-২১

👉👉পৃথিবীর জ্ঞানী মানুষ বিশেষ করে যারা এই সুফল নিয়ে গবেষণা করে ওই তাবৎ মানুষের নিকট একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, দুই সগারের মিলনস্থলে অন্তরালেও আল্লাহর নিদর্শন বিদ্যমান। যা কার্যত দু’টি সাগরকে পৃথক করে রাখে এবং স্ব স্ব সাগরের নিজস্ব তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, ঘনত্ব ইত্যাদি স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখে। দু’টি সাগরের মিলনস্থলে পানি ছোট একটি সমসত্ত্ব এলাকা গঠিত হয়, যা দু’টি সাগরের বৃহত্তর এলাকার পানিকে মিশ্রিত হতে দেয় না। আর এই প্রত্যেক শ্রেণীর পানিতে ভিন্ন রকম স্বাদ, ভিন্ন রকম প্রাণী এবং ভিন্ন রকম জীবন ব্যবস্থা রয়েছে।
পৃথিবীর এক প্রান্তের নদীতে বা সমুদ্রে যে সকল প্রাণীরা বসবাস করে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের নদীর সমুদ্রে সেই সকল প্রাণী ও জীবজন্তু বসবাস করে না। আমাদের বাংলাদেশের দুই একটি নদীতে কেবল ইলিশ মাছ পাওয়া যায় অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নদী সমুদ্রে বহু চেষ্টা করেও তা উৎপাদন করা সম্ভব নয়।।
আবার সারডিন মাছ বাংলাদেশের সমুদ্রে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু মাছ শ্যালমন বাংলাদেশে কোথাও পাওয়া যায় না।
প্রত্যেক শ্রেণীর পানির ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট আছে। দুই সাগরের কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল উপাদানেরও বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান যা সাম্প্রতিক কালে জানা গেছে মাত্র।
এই পানির অন্তরালের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, সেগুলোতে বৈদ্যুতিক পজিটিভ ও নেগেটিভ আকর্ষণ বিশিষ্ট লবণের স্থূলাণু রয়েছে।
যার কারণে সদৃশ আকর্ষণ বিশিষ্ট পানি তার পার্শস্থ পানি থেকে দূরে সরে থাকে। এবং নিজেকে আলাদা করে রাখে।।
এই সূক্ষ্ম জ্ঞান অবশ্যই আরবের নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ সাঃ এর ছিল না। নিশ্চয়ই তাকে কেউ একজন জানিয়েছেন। আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে এত সুক্ষ জ্ঞান একজন নিরক্ষর মানুষ তো দূরের কথা তৎকালীন একজন জ্ঞানী মানুষ ও জানতেন না। তাহলে একজন লেখাপড়া না জানার লোক এ কি করে হঠাৎ করে এমন গভীর প্রজ্ঞা পূর্ণ কথা বলা শুরু করলেন???
নিশ্চয়ই তাকে কেউ একজন জানিয়েছেন।
আর তিনি আল্লাহ। যিনি তার দূত জিব্রাইল আঃ কে পাঠিয়ে একজন নিরক্ষর নবীকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন যে জ্ঞান পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর কেউ কোনোদিন আয়ত্ত করতে পারবেনা এবং সম্ভবও নয়।।

যাই হোক, বিজ্ঞানীদের অভিমত হলো এই পজিটিভ ও নেগেটিভ আকর্ষণের কারণেই দুই পানির মধ্যে অন্তরাল সৃষ্টি হচ্ছে এবং এটাই বিভিন্ন শ্রেণীর পানির মধ্যে আনুভূমিক উঁচু-নীচু লম্বা পর্দা সৃষ্টি করছে।
বর্তমান শতাব্দী তথা স্যাটেলাইটের যুগে সমুদ্রতত্ত্ববিদগণ আবিষ্কার করেছেন যে, বিভিন্ন শ্রেণীর লোনা পানির মধ্যে অন্তরাল রয়েছে। আর এই তথ্যটি আল-কুরআন ১৫শ বছর পূর্বেই আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সঃ এর মাধ্যমে প্রকাশ করেছে স্বয়ং আল্লাহ। যা সূরাহ আর-রহমানের উক্ত আয়াতসমূহের তথ্য সম্বন্ধে খুবই সূক্ষ্ম ও নিপুঁণ বর্ণনা দিয়েছে।
সুতরাং পবিত্র সেই সুমহান প্রভু, যিনি ইরশাদ করেনঃ “এই কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো রচনা নয়, পক্ষান্তরে তার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে এটা তার সমর্থন এবং তার বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তা জগতসমূহের প্রভূর পক্ষ হতে”। –সূরাহ ইউনুস : ৩৭!!
👉👉তথ্য সূত্র : সৃষ্টিতত্ত্বে আল্লাহর অস্তিত্ব, কুরআন-সুন্নায় বিজ্ঞানের অলৌকিক তথ্যÑকুরআন-সুন্নায় বৈজ্ঞানকি তথ্য গবেষণার আন্তর্জাতিক কমিশন (অনু. মো. মুহসিন) পৃঃ৪১-৪২।

মাদ্রাসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও গ্রহণযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়।

মুসলিমদের মাদ্রাসার ইতিহাসঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
#মাদ্রাসা আরবি শব্দ এর বহুবচন মাদা-রিস।
আরবি শব্দ দারসুন থেকে এটি উদ্ভূত, এর অর্থ পাঠ। মাদ্রাসা মূলত মুসলিমদের অধ্যয়ন-অধ্যাপনা গবেষণা ইত্যাদির স্থান বা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সাধারণ অর্থে মাদ্রাসা হচ্ছে আরবি ভাষা ও ইসলামি বিষয়ে শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।
মাদ্রাসা শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান ছিল সাফা পর্বতের পাদদেশে সাহাবী যায়েদ-বিন-আরকামের বাড়িতে, যেখানে স্বয়ং রসুল (স:) ছিলেন এর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ছিলেন তাঁর কয়েকজন অনুসারীগণ কয়েকজন সাহাবী।
হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে নববি’র পূর্বপাশে স্থাপিত হয় মাদ্রাসা আহলে সুফ্ফা। শিক্ষক ছিলেন উবাদা ইবনু সামিত আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন আবু হুরাইরাই (রাঃ) মু‘আজ ইবনু জাবাল গিফারি (রাঃ) প্রমুখ আরো অনেক সাহাবি।
মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে ছিল
কুরআন,
হাদিস,
ফারায়িজ, (জমি ও জ্যামিতিক হিসাব ও বন্টন পদ্ধতি)
চিকিৎসা,
বংশ শাস্ত্র,
তাজবিদ , (প্রমিত উচ্চারণ এবং বিভিন্ন উচ্চারণ রীতি)
অশ্ব চালনা,
যুদ্ধবিদ্যা, (এই অশ্ব চালনা এত সামরিক যানবাহন পরিচালনা এবং যুদ্ধবিদ্যা বর্তমানে পৃথিবীর মূল পাঠ্য বিষয়)
হস্তলিপি বিদ্যা, (যা বর্তমানে লিপিকলা হিসেবে চিহ্নিত)
শরীর চর্চা ইত্যাদিও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।(শরীরচর্চা চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবং বর্তমানে সমস্ত দুনিয়া জুড়ে এই শরীর চর্চার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে)
উপরোক্ত বিষয়গুলো একই সাথে পাঠ্য দান করা হতো।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো ইসলামের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে মদিনা নামক ছোট্ট নগর রাষ্ট্রের মধ্যে মসজিদ ভিত্তিক যে মাদ্রাসা তথা বিদ্যালয় চালু হয়েছিল এবং সেখানে যে সকল সাবজেক্টের উপর বিদ্যা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো তা আজকাল বহু আধুনিক বড় বড় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া হয় না।

নবুওয়্যাতের প্রথম দিন থেকে উমাইয়া বংশের শাসনামলের প্রথম ভাগ পর্যন্ত প্রায় একশ বছর সময়কালকে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রথম পর্যায় ধরা হয়।

বাংলায় মাদ্রাসার প্রবর্তনঃ
বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী ১১৯৭, মতান্তরে ১২০১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার রাজধানী গৌড়ে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন।

সুলতান গিয়াসুদ্দীন একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ১২১২ খ্রিষ্টাব্দে। পরবর্তীকালে তাঁর বংশধর সুলতান দ্বিতীয় গিয়াসুদ্দীনও একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। মাদ্রাসা দুটির নাম যথাক্রমে গৌড় ও লাখনৌতী মাদ্রাসা।

হোসেন শাহ ও তাঁর পুত্র নুসরত শাহ গৌড়ে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। এসব মাদ্রাসার অনেকগুলির ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান।
ঢাকায় মাদ্রাসা স্থাপনঃ
১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে সুবাহদার শায়েস্তা খানের উদ্যোগে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে একটি মাদ্রাসা ও মাসজিদ নির্মিত হয়।
নবাব জাফর মোরশেদ আলি খান স্থাপন করেন মুর্শিদাবাদ মাদ্রাসা। যার ভবনটি কালের সাক্ষী হিসেবে এখনও অটুট রয়েছে।
১১৭৮ হিজরি সালে জমিদার মুন্সি সদরুদ্দীন আল মুসাভী বুহার গ্রামে বর্ধমান মাদ্রাসা স্থাপন করেন এবং লখনৌ ( ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী) থেকে আগত মাওলানা আব্দুল আলি বাহারুল উলুমকে শিক্ষক নিযুক্ত করেন। নওয়াবী আমলে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য সরকার এগুলির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ লাখেরাজ জমি বরাদ্দ দিত। মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য সরকার ভাতা ও বৃত্তি দিত।

বয়কট

বয়কট!
একটি আতঙ্ক মিশ্রিত শব্দ।
এই শব্দটি বিশেষ করে জালিমদের হৃদয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেয়।। মজলুম জনসাধারণের একটি প্রিয় ও সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হল এই বয়কট। সমস্ত দুনিয়া জুড়ে যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ মজলুম সেহেতু বয়কট শব্দটা সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দ এর মধ্যে একটি।
জালিম এবং খারাপ সম্প্রদায়কে সোজা করার জন্য বয়কটের চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র আর কিছুই নেই।।

👉👉সর্বজন পরিচিত শব্দটি অভিধানভুক্ত হওয়ার পেছনে রয়েছেন এক ইংরেজ ভদ্রলোক, যাঁর নাম #চার্লসকানিংহামবয়কট।

তাঁর কীর্তিকলাপের জন্য তাঁকে একঘরে করছিলেন আয়ারল্যান্ডের বর্গাচাষিসহ স্থানীয় লোকজন। বয়কটের এই একঘরে হওয়ার ঘটনা তখন প্রচারমাধ্যমেও আসে, যা কালক্রমে যুক্ত হয় অভিধানেও।

👉👉১৮৮০ সালের কথা সেটা। চার্লস কানিংহাম বয়কট ছিলেন খাজনা আদায়ের দায়িত্বে। সে বছর ফসলের ফলন কম হওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। সে আশঙ্কা আমলে নিয়ে ১০ শতাংশ খাজনা মওকুফের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু চাষিরা দাবি তোলেন ২৫ শতাংশ মওকুফের। চাষিদের দাবি অগ্রাহ্য করেন লর্ড আর্নে।

এদিকে বয়কট আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে এক কাণ্ড ঘটান। তিনি ১১ জন বর্গাচাষিকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেন। সরব হয়ে ওঠে স্থানীয় লোকজন। সরব হওয়ার পেছনে অবশ্য কারণও আছে।

সে সময়টায় আয়ারল্যান্ডের ভূমি সংস্কারের পক্ষে লড়ে যাচ্ছিলেন আইরিশ রাজনীতিবিদ চার্লস স্টুয়ার্ট পার্নেল (১৮৪৬-১৮৯১)। তিনিই কোনো এক ভাষণে বলেছিলেন, কোনো জমি থেকে বর্গাচাষিকে উচ্ছেদ করা হলে, সে জমি যেন অন্য চাষিরা বর্গা না নেন। মালিকপক্ষ উচ্ছেদের হুমকি দিলে অহিংসভাবে তাঁকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

বয়কটের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন সেই কৌশল বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর গৃহকর্মী থেকে দিনমজুরেরা কাজ বর্জন করেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে থাকেন। এক সময় দেখা যায়, স্থানীয় ডাকঘরের পিয়নও চিঠি সরবরাহ বন্ধ করেছেন।

বয়কট চেষ্টা করেন অন্য এলাকা থেকে লোক এনে চাষবাসের কাজ করানোর। সে উদ্যোগও সফল হয়নি তাঁর। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকেন বয়কট। হালের ‘ভাইরাল’ হওয়ার মতো এই ঘটনা তখন ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়, ফলাও করে প্রচার করা হয় গণমাধ্যমে। বর্জন ও একঘরের সমার্থক হয়ে ওঠেন ‘বয়কট’, যা কালক্রমে যুক্ত হয় অভিধানেও। কিন্তু কে এই চার্লস কানিংহাম বয়কট?

বয়কট এক বিচিত্র চরিত্রের মানুষ। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের নরফোকের এক গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের ব্ল্যাকহিথ এলাকার একটি বোর্ডিং স্কুলে। স্কুলজীবন থেকেই বয়কটের ফৌজি জীবনের প্রতি ছিল দুর্নিবার আকর্ষণ। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সেই আকর্ষণের টানে ১৮৪৮ সালে দক্ষিণ লন্ডনের উলউইচে অবস্থিত রয়্যাল মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন। বছরখানেক পর পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে মিলিটারি একাডেমি ছাড়তেও হয় তাঁকে। কিন্তু হাল ছাড়েন না বয়কট।

পরিবারের সহায়তায় ১৮৪৯ সালে ৪৫০ পাউন্ডে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ক্যাপটেন পদ পেয়ে (ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে পদ কেনার সুযোগ ছিল) যান তিনি। পদাতিক বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। যোগ দেন ৩৯তম ফুট রেজিমেন্টে। কিছুদিনের মধ্যে রেজিমেন্টের সঙ্গে বদলি হয়ে বয়কট চলে আসেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে। শুরু হয় আয়ারল্যান্ডের জীবন।

১৮৫১ সালের আগস্টে অসুস্থ হয়ে পড়েন বয়কট। প্রায় ছয় মাস রোগে ভোগার পর বয়কট তাঁর সেনাবাহিনীর পদ বিক্রি করে দেন। সে বছরই বিয়ে করেন মেরি অ্যান দুনেকে। টিপেরারি কাউন্টিতে খামার ইজারা নিয়ে আয়ারল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আয়ারল্যান্ডের উত্তরাধিকার সনদ পাওয়ার হওয়ার পর দেশটির পশ্চিম উপকূলীয় মায়ো কাউন্টির একটি দ্বীপে চলে যান বয়কট।

মায়ো কাউন্টিতে তাঁর জীবনের ইতিহাস তো ‘বয়কট’ শব্দেই মিশে আছে!

সূত্র: উইকিপিডিয়া।

চিনির গল্প, Story of sugar

👉👉শুরুটা হল ক্রুসেডের সময়। উইলিয়াম অফ টাইরে কিংডম অফ জেরুসালেমে গিয়ে দেখলেন সেখানে লবনের মত সাদা একধরনের পাউডার পাওয়া যাচ্ছে। লবন নোনতা স্বাদের, কিন্তু এটা মধুর মত মিষ্টি।

হ্যা, এটা চিনির গল্প। দ্যা স্টোরি অফ সুগার, দ্যা স্টোরি অফ পিউর, হোয়াইট এন্ড ডেডলি।

চিনি উৎপাদনে খরচ ছিল আকাশছোয়া, পরিশ্রম ছিল অমানুষিক। কোন স্বাধীন নাগরিক এই পরিশ্রমে রাজি হত না। তাই আখচাষ থেকে চিনি উৎপাদনে ব্যবহার করা হত আবিসিনিয়া বা আফ্রিকার কাফ্রী গোলামদের।

জেরুসালেম, এন্টিয়কসহ ভূমধ্যসাগর তীরের বেশ কিছু শহর যখন ক্রুসেডাররা জয় করে নিল, তারা সেখানে পেয়ে গেল সাদা চিনির সন্ধান। এর আগে প্রায় চারশো বছর ধরে ইউরোপ এই চিনি উৎপাদন করে নি।

সেই যামানায় সাদা চিনি ছিল ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট ডিজায়ার্ড লাক্সারি প্রোডাক্ট। এখনকার হীরার মতই ছিল দাম এবং
প্রথম ধাক্কাটা গেল মুসলিম বন্দীদের ওপর দিয়ে, এরপর সেখান থেকে চলে গেল বিশালদেহী রাশান দাসদের কাছে। হ্যা, সে আমলে ক্রিশ্চিয়ানরাও ক্রিশ্চিয়ানদের দাস বানাতো।

কিন্তু, ঠান্ডা জলবায়ুতে জন্মানো রাশানরা মধ্যপ্রাচ্যের গরমে খুব একটা প্রোডাক্টিভ লেবার হিসেবে নিজেদের প্রমান করতে পারলো না।

এরপর হল আরেক মুশকিল, মুশকিলের নাম সুলতান আল নাসির সালাহ উদ্দীন ইউসুফ ইবন নাজমুদ্দীন আল আইয়্যুবী।

১১৭১ থেকে ১১৯৩ সালের মধ্যে ক্রুসেডাররা ফালাস্তিন অঞ্চলের অধিকাংশ রাজ্য হারিয়ে ফেললো সালাহ উদ্দীনের মোকাবিলায়। এর একশো বছরের মধ্যে তারা মুখোমুখি হল আরো সালাহ উদ্দীনের আরো বিপজ্জনক কিছু উত্তরসুরীর, রুকনুদ্দীন আয যাহির বাইবার্স এবং সুলতান আল মানসুর কালাউন আস সালিহী, যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে ক্রুসেডার রাজ্যগুলোর নাম নিশানা মুছে দেন।

জেরুসালেমের স্বাদ ভুলে গেলেও চিনির স্বাদ কিন্তু ইউরোপিয়ানরা ভুলতে পারে নি।

পর্তুগীজরা আটলান্টিক চষে বেড়াতে শুরু করলো পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে। তাদের হাতে চলে এলো আজোরস, মাদেইরা আর ক্যানারী আইল্যান্ডস।

এই দ্বীপগুলো দখল করে তারা প্রথমেই খেয়াল করলো, এখানে আছে উর্বর, রসালো জমি। বৃষ্টিও ভালই হয়, বাতাসে আছে আর্দ্রতা।
এই সুযোগ হেলায় হারানো যায় না। ক্যানারী আইল্যান্ডস আর মাদেইরাতে শুরু হয়ে গেল আখ চাষ। শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য পূর্ব ইউরোপ আর রাশিয়া থেকে ধরে নিয়ে আসা হল শক্তপোক্ত মানুষ।

পৃথিবীতে মানুষের আদিমতম নেশা হচ্ছে গ্লুকোজের নেশা। আর চিনি থেকে মানুষ ঠিক সেই জিনিসটাই পায় সরাসরি।

ক্রুসেডারদের মারফত ইউরোপে গিয়েই সাদা চিনি মাত করে দিয়েছিল বাজার। ইউরোপের অভিজাত পরিবারগুলোতে একটা স্টেইটাস সিম্বল হয়ে গেল বেশি চিনি খাওয়া। যে যত বেশি চিনি খায়, সে তত বড়লোক, এমন একটা অবস্থা।

তো, এই স্টেইটাস ধরে রাখতে গিয়ে বাড়তি চিনি খেয়ে ইউরোপিয়ান এলিটদের দাতের অবস্থার দফারফাও হচ্ছিল সমানে। মধ্যযুগের ১১০০-১৬০০ সালের ইউরোপিয়ান এলিটদের কারো দাত বের করা হাসির ছবি খুব একটা পাওয়া যায় না, কারন তাদের দাত হয়ে থাকতো কালো।

অন্যের চেয়ে আমি বেশি ক্লাসি, এই কথাটা বোঝাতে গিয়ে চিনি খাওয়ার দৌড় কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল তার একটা উদাহরন হচ্ছে ইংল্যান্ডের কিং এডওয়ার্ডসের পরিবার। ১২৮৮ সালে শুধু রাজপরিবারের খাবারের জন্যই চিনি লেগেছিল ৬০০০ পাউন্ড।

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার জন্য রানী প্রথম এলিজাবেথের সব দাতই ছিল কালো। এই চিনির সাপ্লাই এসেছিল মরোক্কোর সুলতানদের কাছ থেকে। মরোক্কান সুলতান স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধ করার জন্য এলিজাবেথের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতেন, আর এলিজাবেথকে দিতেন সুন্দর কাপড় এবং চিনি। একদিকে এলিজাবেথের অস্ত্র দিয়ে তিনি মারতেন স্প্যানিশ সৈনিক, অন্যদিকে তার দেয়া চিনি থেকে বানানো ক্যান্ডি খেয়ে নষ্ট হত ব্রিটিশ এলিটদের দাত।

কালো দাত এবং চিনি নিয়ে ইউরোপিয়ানদের পাগলামি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে কালো দাতকে মনে করা হতে থাকে আভিজাত্যের প্রতীক। মধ্যবিত্তরা নিজেদের মান মর্যাদা বাড়ানোর জন্য দাতে কালো রঙ করা শুরু করলো যাতে প্রতিবেশীরা ভাবে এদের অনেক টাকা আছে, এরা চিনি খেয়ে দাত কালো করে ফেলছে।

কিন্তু, চিনির উৎপাদন যা হত তা এলিটদের প্রয়োজন মেটানোর তুলনায় ছিল খুবই সামান্য। মাদেইরা বা ক্যানারী আইল্যান্ডস খুবই ছোট জায়গা, এখান থেকে সেভাবে বিপুল পরিমান চিনি উৎপাদন সম্ভবও ছিল না। ফলে চিনি আনা লাগতো সেই ভারত থেকে, আরব ও তুর্কী ব্যবসায়ীদের হাত হয়ে, ভেনিস-জেনোয়া ঘুরে ঐ চিনির দাম যা হত তাতে চিনি এমনকি এলিটদের কাছেও আর মিঠা থাকতো না।

এরইমধ্যে, কলম্বাস ভারত যাওয়ার পথ খুজতে বেরিয়ে পৌছে গেলেন আমেরিকা। তার কাছাকাছি সময়েই গেলেন আরো অনেকে। আমেরিগো ভেসপুচি, হেনরী আমেরিকা, জন ক্যাবট, পেদ্রো ক্যাব্রাল, গনজালো কোয়েলহো আর আলেক্সিও গার্সিয়ারা পুরো আমেরিকা চষে বেড়ালেন।

বাহামা, হিস্পানিওলা, জ্যামাইকা আর কিউবায় পা রাখার সাথে সাথেই কলম্বাস শুরু করেছিলেন আখ চাষের চিন্তাভাবনা। তার দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আখ চাষ ও চিনি উৎপাদন।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা গেল, এভাবে চলবে না। চিনি উৎপাদনের জন্য স্থানীয় আরাওয়াক, তাইনু বা গুয়ানহানিদের মত নেটিভ আমেরিকানরা একেবারেই অদক্ষ এবং এত হাড়ভাঙ্গা পাশবিক পরিশ্রমে তারা অভ্যস্তও ছিল না। তারা ছিল স্বাধীনচেতা এবং ইউরোপিয়ানদের বয়ে আনা রোগজীবানুর বিরুদ্ধে কোন ইমিউনিটিও তাদের ছিল না। পরের পঞ্চাশ বছরে ৯০% এর বেশি নেটিভ আমেরিকানরা মরে সাফ হয়ে গেল মহামারীতে।

ফলে, স্প্যানিশদের বিকল্প ভাবনা ভাবতে হল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, চিনি উৎপাদন করতে প্রয়োজনে আফ্রিকা থেকে দাস আমদানী করা হবে।

আমেরিকায় মায়া, অ্যাজটেক ও ইনকাদের লুট করে স্প্যানিশরা যে পরিমান সোনা ও রুপা পেয়েছিল, বা হয় তা দিয়ে আটলান্টিকের এপার থেকে ওপার তক ব্রিজ বানানো যেত।

কিন্তু এই সোনা-রুপার বেশিরভাগটাই তাদের ব্যয় করতে হয়েছিল উসমানী খিলাফতের সাথে যুদ্ধের খরচ মেটাতে৷

এই বাড়তি ব্যয় করা সোনা-রুপার ফলে ষোড়শ শতকের শেষদিকে এক অভুতপূর্ব ঘটনা ঘটে৷ সমস্ত ভু-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল-মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে সোনা রুপা দিয়ে ইচ্ছামত মুদ্রা বানানোর ফলে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় প্রায় দশগুন।

ফলে, আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় ঘাটি গাড়া কলোনিস্টরা ভাবলো, এবার তাদের এমন কিছু আমেরিকা থেকে রফতানি করতে হবে যা দিয়ে আসলেই ব্যবসা করা যায় এবং যা আসলে খাওয়া যায়।

এই ধরনের পন্যগুলোর মধ্যে তিনটা ছিল চাহিদার শীর্ষে। চিনি, কফি আর তামাক। এই তিনটার মধ্যে, চিনির বাজার ছিল সবচাইতে বড়, আর লাভও ছিল সবচাইতে বেশি।

নেটিভ আমেরিকানরা কথা শুনতো না, তাদের একটা নিজস্ব জীবনদর্শন ছিল। তাই তাদের খাটানো যেত না বেশি। স্প্যানিশরা তাই ভাবলো আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে প্রচুর শ্রমিক আমদানী করবে।

এই সিদ্ধান্তটা পরের তিনশো বছরে বদলে দিয়েছিল আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপের ইতিহাস।

১৬৮৩ সালের সেকেন্ড ব্যাটল অফ ভিয়েনায় উসমানী (অটোমান) সামরিক শক্তির মেরুদণ্ড গুড়িয়ে যায়, আর এর ফলেই ইউরোপিয়ান জাহাজগুলো পেয়ে যায় আফ্রিকায় অবাধে দস্যুতা চালানোর লাইসেন্স। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আফ্রিকানদের আফ্রিকা থেকে ধরে নিয়ে আমেরিকান কলোনিগুলোতে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া মানুষের সংখ্যা।

ইউরোপিয়ানরা ব্রিস্টল, লন্ডন, ম্যানচেস্টার, লিভারপুল, লিসবন, আমস্টারডাম, মালাগা, বার্সেলোনা, ভ্যালেন্সিয়া, আলজাজিরা, বিলবাও, ক্যাস্তেলোনের মত বন্দরগুলো থেকে তথাকথিত সভ্যমানুষদের জাহাজগুলো আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলোতে নামতো কামান, বন্দুক, তলোয়ার, ছুরি, ধাতুর তৈরি নানান যন্ত্রপাতি, রঙ্গিন কাপড় আর রাম নিয়ে, আর সেখান থেকে তুলে নিতো পালে পালে মানুষ।

দাস শিকারীরা তছনছ করে দিতো গ্রামের পর গ্রাম। আফ্রিকার সবুজ জলে ভরা নদীগুলো দিয়ে তারা যে গ্রামে ঢুকতো, সে গ্রাম পরিনত হত মৃত্যুপুরীতে। শক্ত-সমর্থ পুরুষদের পরিনত করা হত দাসে, প্রায় সময় নারীদেরও।

তারপর, দেড় থেকে আড়াই মাসের যাত্রাশেষে তারা পৌছুতো আমেরিকায়। কেউ দাস হিসেবে খাটতো ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে, কেউ উত্তর আমেরিকান কোন কলোনিতে আর বাকিরা ব্রাজিলে।

১৫০০-১৯০০ সাল, এই চারশো বছরে আফ্রিকা থেকে ইউরোপিয়ানরা ধরে নিয়ে গেছে অন্তত ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। এদের ধরার জন্য মারতে হয়েছে আরো অন্তত কোটিখানেক মানুষ।

তারপর, এই দাসদের দিয়ে উৎপাদন করা হয়েছে হাজার হাজার টন চিনি।

১৭০০-১৯০০ সাল ছিল মূলত চিনির ব্যবসার স্বর্নযুগ। এই সময়টা জুড়ে মসলা বা সোনা-রুপা নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক পন্য ছিল চিনি।

চিনির মূল্য কত ছিল তার উদাহরন দেয়া যায় ১৭৬৩, সালের প্যারিস চুক্তির একটা ঘটনা থেকে।

প্যারিস চুক্তির সময়ে ফ্রেঞ্চরা কানাডার প্রায় অর্ধেকটা অঞ্চল জুড়ে রাজত্ব করতো, বাকি অঞ্চলটা ছিল ব্রিটিশদের। আর ব্রিটিশদের অধিকারে ছিল মূলত ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডস।

কানাডাতে আখ চাষ করা সম্ভব ছিল না। আখ চাষ করতে হলে দরকার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ আমেরিকার। আর এদিক থেকে যে চিনি ও তামাক উৎপন্ন হবে, তা ফ্রান্সে নিয়ে আসতে প্রয়োজন ক্যারিবিয়ানের একটা ভাল বন্দর।

এই বন্দরটি ছিল গুয়াদিলোপে। গুয়াদিলোপে দ্বীপের আয়তন মাত্র ১৬০০ বর্গ কিলোমিটার। চিনির ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ১৬০০ বর্গ কিলোমিটারের বিনিময়ে ফ্রান্স ব্রিটেনের কাছে বিক্রি করে দিলো কানাডার ৩০ লাখ বর্গ কিলোমিটার জমি।

এমনকি, আজকের আমেরিকা হয়তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন হতে পারতো না যদি না ব্রিটিশরা তাদের সৈনিকদের একটা বড় অংশ রেভলুশনারী ওয়ারের সময় আমেরিকাতে না নামিয়ে ক্যারিবিয়ানে রাখতো।
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের শতকরা ৯৫% ছিল আফ্রিকা থেকে ধরে আনা দাস। বাকিরা ছিল মূলত চিনি ব্যবসায়ী। এই চিনি ব্যবসায়ীরা ছিল ব্রিটেনের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেয়, প্রায় অর্ধেক সামরিক শক্তি ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডে রাখার। বেশিরভাগ সৈন্য আমেরিকায় নামালে ভয় ছিল, দাসরা বিদ্রোহ করে সমস্ত চিনিকলগুলো দখল করে নেবে।

ফলে আমেরিকান সেনাবাহিনী খর্বশক্তির ব্রিটিশ বাহিনীকে ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে পরাজিত করে জিতে নেয় আমেরিকান ওয়ার অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স। এর বিপরীতে ব্রিটিশরা টিকিয়ে রাখে তাদের চিনির সাম্রাজ্য

👉👉উনবিংশ শতকে ব্রিটিশরা আইন করে দাসত্ব বন্ধ করলো ঠিকই, কিন্তু তার বদলে তারা রেখে দিলো বন্ডেজ সিস্টেম, অনানুষ্ঠানিক দাসত্ব। বাকি ইউরোপিয়ান সাম্রাজ্যগুলিও ধরলো ব্রিটেনের পথ। যেই লাউ সেই কদুই রয়ে গেলো অনেকটা।

শত শত বছরের দাসত্বে আখ, তামাক আর কফি চাষ ছাড়া আর কিছুই শেখানো হয় নি দাসদের এবং তাদের সন্তানদের। তাই দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে তাদের অবস্থাটা ছিল এমন যে, আখ খেতে কাজ না করতে পারলে রাহাজানি করে খাওয়া ছাড়া তাদের আর উপায় ছিল না।
কিন্তু রাহাজানির সুযোগটাও কি আসলে ছিল?? নাহ, ছিল না।

সাদারা হাতে ফ্লিন্টলক বন্দুক আর পিস্তল নিয়ে নামতো, তাদের ছিল অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী, তাদের ছিল নৌবাহিনী, তাদের ছিল পুলিস বাহিনী। আর কালোদের হাতিয়ার ছিল কুঠার, ছোরা, কোদাল এসব সেকেলে অস্ত্র।

তাই, লড়াইয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা না করে কালোরা চেয়েছে বউ ছেলেমেয়েকে খাওয়াতে। বছরের পর বছর আখক্ষেত আর চিনিকলে দাসের মতই পরিশ্রম করেছে, দাসত্ব থেকে মুক্তির পরেও, কারন তাদের বেচে থাকার আর কোন উপায় সাদারা রাখে নি।

আজকের আমেরিকার সবচেয়ে ধনী শহর নিউইয়র্কের আশপাশটা তখন ছিল নিউ ইংল্যান্ডের অংশ। নিউ ইংল্যান্ডওয়ালাদের বংশধররা আজকে পৃথিবী শাসন করছে দশকের পর দশক ধরে।

আর দক্ষিনের নিউ অর্লিন্স, সেকালের লুইজিয়ানার দাসদের শহর এখনো আছে সেই কালোদের শহর হিসেবেই, যারা সাদা ধনীদের ওপরে ওঠার সিড়ি হয়ে রয়েছে শত শত বছর ধরে।

চিনির পাপ কিন্তু ব্রিটেন বা আমেরিকাকে ছাড়ে নি। প্রতি তিনজনে একজন ব্রিটিশ/আমেরিকান আজ ওবিস। যে চিনির নেশা তাদের সম্পদের অট্টালিকার চুড়ায় তুলেছে, সেই চিনি থেকে হওয়া রোগ ডায়বেটিস, ওবিসিটি, হার্ট এটাক আর স্ট্রোক ঠেকাতে আমেরিকান সরকার এখন প্রতিবছর খরচ করে ট্রিলিয়ন ডলার।

চিনির সাদা চেহারা দেখে আমাদের চোখে এই রক্তাক্ত ইতিহাস ভেসে ওঠে না। চিনি এখন আমাদের কাছে শুধুই ভোগ্যপন্য।

কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর #ব্রিটিশ_বেনিয়া বা আফ্রিকান দাসের কাছে ব্যাপারটা তা ছিল না। তাদের কাছে চিনি ছিল জীবন অথবা মরনের প্রশ্ন, যার জবাব দিতে গিয়ে কেউ মরে বেঁচে যেত, কেউ আবার বেঁচে থাকতো প্রতিদিন মরে যাওয়ার জন্য।

তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে

❤️💙 আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম
বিসমিল্লাহ হিররাহমানির রাহিম ।

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থঃ আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে * আর তারাই সফলকাম।
–সূরা আল ইমরান, আয়াত ১০৪

👉👉 ইসলাম যেসব সৎকর্ম ও পূণ্যের নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রত্যেক নবী আপন আপন যুগে যে সব সৎকর্মের প্রচলন করেছেন, তা সবই আয়াতের উল্লেখিত মারুফ তথা সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত। ‘মারুফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিচিত। এসব সৎকর্ম সাধারণ্যে পরিচিত। তাই এগুলোকে ‘মারুফ’ বলা হয়। এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব অসৎকর্মরূপী কাজকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন বলে খ্যাত, তা সবই আয়াতে উল্লেখিত মুনকার’ এর অন্তর্ভুক্ত। এ স্থলে ‘ওয়াজিবাত’ অর্থাৎ জরুরী করণীয় কাজ ও ‘মা’আসী’ অর্থাৎ ‘গোনাহর কাজ’ -এর পরিবর্তে ‘মারুফ’ ও ‘মুনকার’ বলার রহস্য সম্ভবত এই যে, নিষেধ ও বাধাদানের নির্দেশটি শুধু সবার কাছে পরিচিত ও সর্বসম্মত মাসআলা-মাসায়েলের প্রযোজ্য হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন খারাপ কাজ দেখবে, সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে, আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। এটাই ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এর পরে সরিষা পরিমাণ ঈমানও বাকী নেই।
–মুসলিমঃ ৪৯, আবু দাউদঃ ১১৪০।

অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অচিরেই আল্লাহ তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি নাযিল করবেন। তারপর তোমরা অবশ্যই তাঁর কাছে দো’আ করবে, কিন্তু তোমাদের দোআ কবুল করা হবে না।
–তিরমিযীঃ ২১৬৯, মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩৯১!!

অনুরূপভাবে রাসূল সাঃ কে এক লোক জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল, কোন লোক সবচেয়ে বেশী ভাল? তিনি বললেনঃ সবচেয়ে ভাল লোক হল যে আল্লাহ্‌র তাকওয়া অবলম্বন করে, সৎকাজে আদেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখে।
—মুসনাদে আহমাদঃ ৬/৪৩১!!!

রমজান মাসে কি কবরের আজাব বন্ধ থাকে!?!

📘📕 রমজানে অর্থাৎ রোজার মাসে কবর বারযাখের আজাব বন্ধ থাকে, মূলত এটি একটি ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন কথা। অনেককেই বিশেষ করে অনেক আলেম ওলামাকে বলতে শোনা যায়, ‘রমজান মাসে কবরের আজাব মাফ থাকে’।আবার আরো একটু আগ বাড়িয়ে একথাও বলতে শোনা যায় যে, ‘দাফনের পর জুমা বা রমজান এলে কেয়ামত পর্যন্ত কবরের আজাব বন্ধ থাকে।
👉👉 আসল কথা হল,মানুষের এমন ধারণা ঠিক নয়, এটি একটি ভিত্তিহীন ধারণা। তাছাড়া অনুমান ধারণা থেকে কথা বলতে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কোরআন-সুন্নায় এ সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়নি বা কোন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি ।
তবে আল্লাহ তাআলা সবার বারযাখ অর্থাৎ কবরের আজাব মাফ করে দিতে পারেন যেকোনো সময় ।
মূলতঃ কবরের আজাব হওয়া না-হওয়ার সঙ্গে রমজানের কোনো সম্পর্ক নেই। কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ মৃত্যু পরবর্তী বারযাখি জীবনে কবরে অথবা অন্য কোথাও কোন ব্যক্তির ঈমান ও নেক আমলের সঙ্গে আজাব হওয়া না হওয়ার সম্পর্ক।

মানুষের উচিত এই জাতীয় অনুমান ও ভিত্তিহীন ধারণা অথবা কথাবার্তার দ্বারা প্রবাহিত না হয়ে, এমনসব আমল করা ও সেই সব আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া, যার মাধ্যমে মৃত্যু পরবর্তী বারযাখের জীবন তথা কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বারজাখি জীবনের আজাবকে কবরের আজাব হিসাবে উল্লেখ করা হয়; কেননা বেশিরভাগ মানুষকেই মৃত্যুর পর কবর দেওয়া হয় অর্থাৎ গ্রাউন্ডেড করা হয়। কিংবা অন্যভাবে তার লাশ ধ্বংস হলে কিংবা পুড়ে ফেললেও তা মূলত ধ্বংসাবশেষ মাটির মধ্যেই ফিরে যায় অর্থাৎ গ্রাউন্ডেড হয়ে যায়।
এইজন্য বাহ্যিক অর্থে এবং সার্বিকভাবে এটাকে কবরের আজাব বলা হয়ে থাকে। কেননা কেউ কেউ বলে থাকেন যে অনেকের তো কবর হয় না বরং তাদের পুড়ে ফেলা হয় অথবা বিভিন্ন জীবজন্তু খেয়ে ফেলে তখন তাদের আজাব হয় কি করে। মূলত তাদের এই ধারণা ও কথাবার্তা ভিত্তিহীন ও নিজের সাথেই প্রতারণার শামিল।
যাইহোক, রোজার মাসের সাথে কিংবা রোজার মাসের বরকতের সাথে কবরের আজাবের এর কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটি একটি রহমত বরকত মাগফেরাতের মাস এবং পুরো মাস ধরেই রহমত বরকত মাগফেরাত হতে থাকে। তার এরই মধ্যে যদি আল্লাহ কাউকে ক্ষমা করে দেন, তা একান্তই আল্লাহর রহমত। রমজানের বাইরেও আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করেন।

👉👉তবে হ্যা, রোজা রাখা অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। অথবা যে কোন এবাদতরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এইজন্যই আল্লাহর নিকট চাইতে হয়, হে আল্লাহ আমার মৃত্যু দান করুন অবশ্যই ঈমানের সহিত, এবাদত তত অবস্থায়, সুস্থ শরীরে এবং প্রিয়জনদের মাঝে (আমিন) । হাদিসে এসেছে, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখে এবং এ রোজা হয় তার জীবনের শেষ আমল (অর্থাৎ রোজা অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
–মুসনাদে আহমাদ ২৩৩২৪; বায়হাকি ৬৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১১৯৩৫)
এ হাদিসের আলোকে জানা যায়, রোজাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দেবেন।
কিন্তু রমজান মাসে কবরের আজাব বন্ধ থাকে, এমনটি কোথাও পাওয়া যায় না।

সম্ভবত যে কারণে মানুষ এমনটি মনে করে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-.
‘যখন রমজানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়(অবশ্য মানুষ শয়তানগুলো ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় থাকে আর এই জন্য রমজান মাসে শয়তানেও চলতে থাকে! আর তাই মানুষ শয়তান এবং জিন শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য আল্লাহ বলেছেন, তোমরা বলো- “মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাছ”আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই মানুষ শয়তান আর জ্বিন শয়তান থেকে) ।
এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়,একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরো অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। –ইবনে মাজাহ ১৬৪২; ইবনে খুযায়মা ১৮৮৩; মুসতাদরাকে হাকেম ১৫৩২।।
আর এই সকল হাদিসের মর্মার্থ হল, এই মাসে ব্যাপক কল্যাণ বর্ষিত হয় এবং অকল্যাণ থেকে মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করা হয়।।।

উপরের হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’- এখান থেকে হয়ত কারও মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, তাহলে রমজানে কবরের আযাবও বন্ধ থাকে। আর এই সকল ধারনা থেকেই মানুষ নিজে মন থেকে বানিয়ে এই সমস্ত কথা বলে থাকেন যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম থেকে এ কথা প্রমাণিত নয়।

হাদিস শাস্ত্র বিশারদ এবং বিজ্ঞ আলেমদের মতে, রমজানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে, প্রতি রাতে আল্লাহ বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং রোজাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- এগুলো বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু রমজানে কবরের আজাব বন্ধ থাকে- হাদিসের এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।