রাবেতা আলমে আল ইসলামি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

রাবেতা আলমে আল ইসলামিয়া’র লগো।

📕📘 সৌদি আরবের প্রাণকেন্দ্র মক্কা এবং মদিনার মধ্যবর্তী একটি সুন্দর উপত্যকায় অবস্থিত “রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী” মুসলিম বিশ্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও দাতব্য সংগঠন। ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার ও সভ্যতা প্রচার-প্রসার, ইসলামের ওপর আরোপিত সন্দেহ ও সংশয়ের অবসান, মুসলিম বিশ্বে সৃষ্ট সংকট নিরসন এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য মানবিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে ১৮ মে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি।
সৌদি আরবের তৎকালীন যুবরাজ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ এবং পরে তিনি বাদশাহ হন এবং তারই উদ্যোগে মক্কা জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী এবং পবিত্র নগরীতেই তার প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। তবে পৃথিবীর একাধিক রাষ্ট্রে সংগঠনটির অফিস ও কেন্দ্র রয়েছে।

রাবেতার সম্মেলন কক্ষ

২২টি সদস্য দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করা রাবেতার বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৪০ এবং পৃথিবীর ৩৮টি দেশে ৫৩টি শাখা অফিস রয়েছে এর।
রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর প্রধান লক্ষ্য ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা; বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ইসলামের বিশ্বাস, বিধান, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানো; বিশেষত মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়া সংশয়, বিভ্রান্তি ও চিন্তার ব্যাধিগুলো দূর করে উম্মাহকে সুরক্ষা দেওয়া। পৃথিবীব্যাপী শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সুরক্ষা, অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং মুসলিম বিশ্বে সৃষ্ট সংকট নিরসনে কাজ করছে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী। পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার বিস্তার, মুসলিম দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয়, মসজিদ-মাদরাসা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা, সামাজিক সচেতনতা তৈরি, অমুসলিমদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহর অগ্রগতি সাধন সংগঠনটির অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

সাংগঠনিক কাঠামোতে মহাসচিবই রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। সংগঠনের সাধারণ সভায় সদস্য দেশের প্রতিনিধি, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের ভোটে নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমান মহাসচিব মুহাম্মদ দিন আবদুল করিম ঈসা। তিনি সৌদি আরবের সাবেক আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রী।

তবে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর নীতিনির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে ৬০ সদস্যের সংগঠনের উচ্চতর কমিটি। মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত উচ্চতর কমিটির সিদ্ধান্তই সংগঠনের নির্বাহী আদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা রাবেতা ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বাস্তবায়ন করে। উচ্চতর কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সৌদি আরবের প্রধান মুফতি। এই কমিটির কোনো সদস্য মারা গেলে বা সদস্য পদ শূন্য হলে কমিটির অন্যান্য সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে নতুন সদস্য গ্রহণ করা হয়।
গত বহু বছর ধরে শুরু করে আজ পর্যন্ত (এপ্রিল ২০২৪) এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রখ্যাত আলেম ও বিজ্ঞ ফকিহ, ভারতীয় উপমহাদেশের আলেমদের শিরোমনি সৈয়দ কামাল উদ্দিন জাফরী।
রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হলো ‘আল মুতামারিল ইসলামিল আম’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
এই সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরা মুসলিম উম্মাহর সমকালীন বিভিন্ন সংকটের সমাধান এবং আগামী দিনের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।
রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর একটি বহুল প্রশংসিত কার্যক্রম হলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদ নির্মাণ করা। ১৯৭৫ সালে স্বাক্ষরিত সংগঠনের নীতিমালার আলোকে একটি উচ্চতর কমিটি এই কার্যক্রম পরিচালনা করে।

📕📘এ ছাড়া রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর সাহিত্য ও সংস্কৃতি,
ফিকহুল ইসলামী (ইসলামী আইন),
সিরাত (নবী-রাসুলদের জীবনচরিত),
হিফজুল কোরআন,
ত্রাণ ও সহযোগিতা বিষয়ক পৃথক কমিটি রয়েছে। সদস্য দেশগুলোতে নিজ নিজ লক্ষ্য বাস্তবায়নে এসব কমিটি কাজ করে থাকে।

📘📕 তবে বর্তমান সত্য হলো, এত আশা ভরসা ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটির কার্যক্রম এখন শুধু পবিত্র কোরআন ছাপানো আর পৃথিবীর কোথাও কিছু মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা।

মুসলিম বিশ্বের ও মুসলমানদের স্বার্থ এখানে খুব কম দেখা হয় বর্তমানে। বর্তমান সৌদি প্রশাসন ও রাজতন্ত্র যেহেতু মাদখালি মতবাদে বিশ্বাসী ও সেই অনুযায়ী চলে তাই রাবেতা আলমে আল ইসলামিয়া ও সেই একই পন্থা অবলম্বন করে চলতে বাধ্য হয়। কারণ বাইরে সদস্য রাষ্ট্রগুলো এবং সেখানকার প্রতিনিধিরা তেমন কিছু বলতে পারেনা সৌদি আরবের দাপটের জন্য।

যে রাবেতা আলমে আল ইসলামিয়া তৈরি হয়েছিল একটি ইসলামিক সংস্কৃতি ও ইসলামিক অর্থনীতি ব্যবস্থা বিশ্ববাসীকে উপহার দেওয়ার জন্য, সেই ইসলামী সংস্কৃতির পায়ে কুঠারাঘাত করে খোদ সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিনেমা হল এবং সুদি ব্যাংক।

Leave a comment