মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া প্রসঙ্গে।

📕📘ইসলাম হল একটি পূর্ণাঙ্গ এবং স্বাভাবিক জীবন বিধানের নাম। এখানে বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি উভয় চরমপন্থা সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য।
আমাদের সমাজের একদল লোক মহিলাদেরকে জোরপূর্বক মসজিদে এবং ঈদগাহে নিতে চায় আরেকদল লোক হুজুর-পূর্বক বের করে দিতে চায়। দুটোই চরমপন্থা। ইসলাম সবসময় স্বাভাবিক এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন করার তাগিদ দিয়ে থাকে এবং এটাই হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নত।।

ইসলাম কারো গোত্রীয় সম্পদ নয় বরং এটি একটি সার্বজনীন জীবন বিধান!! আমার আপনার মত ও চিন্তা- চেতনার বাহিরে গেলেই কি অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে হবে? গালাগাল শুরু করতে হবে??
এ স্বভাব তো প্রকৃত মু’মিনের স্বভাব নয়।
এটা মূলতঃ মুনাফিকের স্বভাব।

আপনি আমি দ্বি- মত করুন, করতেই পারি। তবে নোংরা ভাষায় নয়? বর্তমান সময়ে এই ফেতনার যুগে মহিলারা মাসজিদ ও ঈদগাহে যাবে কি না, এটা একটি ইখতেলাফি অর্থাৎ মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা। একদল আলেম পরিপূর্ণ পর্দা পালনের শর্তে যায়েজ বলেছেন। আরেক দল আলেম নিরুৎসাহিত করেছেন।
কোনো আলেমই না জায়েজ বলেন নি। না জায়েজ বলবেন কিভাবে- স্বয়ং রাসূল সা, বলেছেন – তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে তাঁর মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না বলেছেন এবং এই কথা মজুদ আছে সহীহ মুসলিম হাদিসে।
👉👉রাসূল সাঃ যুগে নারীরা মাসজিদে যেতেন, সাহাবাগণের যুগে মাসজিদে যেতেন, এখনও মাসজিদে হারাম ও মাসজিদে নববীতে নারীরা উপস্থিত হন। সারা পৃথিবী থেকে আসা হাজার-হাজার নারীকে ঈদের জামায়াতে নামাজ পড়েন। পৃথিবীর শত-শত রাষ্ট্রে জুমু’আর দিন ও ঈদগাহে নারীরা উপস্থিত হন। এ নিয়ে সেখানে কোনো কথা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে একদল আলেম ইসলামকে তাদের গোত্রীয় সম্পদ বানিয়ে নিয়েছে। কারো কথা মনমতো না হলে চরম নিকৃষ্ট মনোভাব পোষণ করে , এবং বলতে দ্বিধা নেই যে এই কাজটি করে থাকে হানাফী মাযহাবের একটি ফিরকা সেটি হলো কওমি দেওবন্দী ও তাবলীগী ফিরিকা।
অপরদিকে আমাদের আহলে হাদিস মাযহাবের ভাইরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক খেপে গিয়ে তাদেরকে কাফের পর্যন্ত ফতোয়া দিয়ে বসে থাকে। এই হল অবস্থা।

👉👉হ্যাঁ, আমরাও নিঃসন্দেহে একমত যে, বর্তমান এই ফেতনা ফাসাদের যুগে নারীদের নামাজ মাসজিদের চেয়ে ঘরে উত্তম, ঘরের চেয়ে কুঠুরিতে উত্তম, এবং এ কথাগুলো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
কিন্তু জুমু’আ ও ঈদ এক্ষেত্রে ভিন্ন। কারণ এ দুটো ঘরে পড়ার নামাজ নয়, উপরন্তু এখানে খুতবার নাসীহা শুনা থেকে নারীরা বঞ্চিত হতে হয়। তাই তামাম পৃথিবীতে মাসজিদ সমূহে নারীদের জন্য আলাদা স্থান রাখা হয়।

আমি পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে গিয়েছি। সব দেশের মাসজিদে ছোট্ট পরিসরে হলেও “মুসাল্লান নিসা/ওইমেন প্রেয়ার রুম”- দেখছি। শুধু বাংলাদেশ ব্যতিক্রম।
তবে বাংলাদেশের বায়তুল মোকাররম মসজিদ, নিউমার্কেট মসজিদ, গুলশানের আজাদ মসজিদ, গাউসুর আজম মসজিদ সহ শুধু ঢাকা শহরেই দুই শতাধিক মসজিদে এখন মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা আছে এবং দেশে মডেল মসজিদগুলোতে মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
তবে যেহেতু নারীরা এখন বাইরে বের হয় চাকরির জন্য ও বিভিন্ন কাজে-কর্মে তাই রাস্তাঘাটের পাশে এবং শহরে ও অফিস আদালতের ধারে কাছে প্রত্যেক মসজিদেই নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রাখা এবং তাদের ফ্রেশ হওয়ার ব্যাবস্থা রাখা খুবই।

পর্দা সহ বউ হজ্জ ও ওমরায় যেতে পারে, বাংলাদেশে উল্টো ফাতওয়া দেওয়া হুজুরেরা বউ নিয়ে মাসজিদে হারামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, পর্দা সহ বউ নিয়ে মার্কেটে যায়, বাপের বাড়ি যায়, হাসপাতালে যায়, মাসতুরা তাবলীগে যায়, কোথাও উল্টো ফাতওয়া নেই!
শুধু জুমু’আ ও ঈদগাহে উল্টো ফাতওয়া কেন রে ভাই??
এখানেও কি আমাকে এখন নবী- রাসূল, সাহাবী ও আওলিয়া বিদ্বেষী বলে গালি দিবেন??
দিতে থাকেন তাতে কোন সমস্যা নেই।।
একদিকে আপনার আমাকে গালাগালি করেন অন্যদিকে আহলে হাদিস মাযহাবের বাইরেও আমাকে গালাগালি করে।।
অবশ্য নবী-রাসূলগণের সুন্নতের মধ্যে অন্যতম একটি সুন্নত হল মারপিট ও গালাগালি সহ্য করা। আল্লাহ আমাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন আমিন।
গালাগালি করেন, that’s okay।
মুখ আছে বলে যান,
কলম আছে লিখে যান- সত্য কথা বলা থেকে এক চুলও সরাতে পারবেন না। ইনশা আল্লাহ। অত্যন্ত আমার শক্তি থাকা অবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত ইনশাল্লাহ না।
মনে রাখবেন আমিও ওমর ,আলী, খালিদ সালাউদ্দিন আইয়ুবীর উত্তরসূরী।

📕📘স্বাভাবিক অবস্থায় মা বোনদের জন্য কোন নামাজ আদায়ের জন্যই মসজিদে /ঈদগাহে যাওয়া জরুরি নয় ;বরং মসজিদ অপেক্ষা ঘরে নামাজ আদায় করাই উত্তম। হ্যাঁ, একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে তারা মসজিদে যেতে পারবে এবং নামাজ পড়তে পারবে৷
তবে ঈদের জামাতে ও মসজিদে জুমার নামাজে উপস্থিত হতে পারেন এবং হওয়া উচিত দুইটি কারণে প্রথমত খুতবা শোনার জন্য দ্বিতীয়তও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সুন্নত ও ইসলামী সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য।। ইসলামী সংস্কৃতিকে সম্মান করা এবং ধরে রাখা ও বিরাট বড় নেকির কাজ।।

📘📘জুমা এবং ঈদের নামাজ ব্যতীত আর রাস্তাঘাটে অফিস আদালতে অথবা শহরে ভ্রমণ থাকা অবস্থা ব্যতীত নারীদের ঘরে নামাজ পড়া সর্বোত্তম।।
এই বিষয়ে কয়েকটি হাদিস নিচে দেওয়া হল–

উম্মে হুমাইদ আস সাআদী রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাই। নবী করীম সাঃ উত্তরে বললেন,
‘আমি ভালো করেই জানি, তুমি আমার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে নামাজ আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোনো রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের বা এলাকার মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের বা এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার পিছনে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর ঐ মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয়। এবং মৃত্যু পর্যমত সেখানেই নামাজ আদায় করতে থাকে।’ –মুসনাদে আহমাদ ৩৭/৪৫।

আরেকটি হাদীস দেখা যায়–
আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত। তিনি দেখেছেন- আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ মহিলাদের মসজিদে থেকে বের করে দিতেন। আর বলতেন যে, মসজিদের চেয়ে তোমাদের জন্য ঘরই উত্তম।
–মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫২০১,মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ, হাদীস নং-৪২৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৫৪৪১,আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫।

আমরাতা বিনতে আবদির রহমান বলেন-রাসূল সাঃ এর সহধর্মীনী হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন-যদি রাসূলুল্লাহ সাঃ মহিলাদের এখনকার অবস্থা জানতেন, তারা কি করে? তাহলে তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছে।
ইয়াহইয়া বলেন-আমি আমরাতাকে বললাম-বনী ইসরাঈলের মহিলাদের কি মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে? তিনি বললেন-হ্যাঁ।
সহিহ মুসলিম -১/১৮৩, হাদীস নং-১০২৭,সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫৬৯,মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৯৮২,মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-২৫৯,সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৫৪০

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর মৃত্যুর পর মুসলিম নারীরা এমন কিছু পোশাক পড়তেন, যার কারনে আম্মাজান হযরত আয়শা রাঃ একথা বলেছেন?
আর বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়শা রাঃ কী বলতেন?
তাই শুধু মসজিদে গেলেই হবে না। ঈদের নামাজে কিংবা জুমার নামাজে অথবা বিশেষ তারাবির নামাজে মহিলারা কোরআন শোনার জন্য নসীয়ত শোনার জন্য মসজিদে যেতেই পারেন এবং তাদেরকে সেখানে বাধা দেওয়া উচিত নয় বরং মাঝেমধ্যে নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে অবশ্যই স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে এবং শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য যেতে হবে। ফ্যাশন প্রদর্শনের জন্য কিংবা অন্য মহিলাদের সাথে গল্প গুজব করার জন্য বা বাহাদুরি করার জন্য বা নিজেদেরকে প্রদর্শন করার জন্য যাওয়া বড় রকমের গুনাহের কাজ। যা আজকাল মূলত হয়ে থাকে। আর এই জন্যই কিছু কিছু মোহাক্কেক আলেমগণ এই ফেতনার যুগে মসজিদে যেতে নিষেধ করে থাকেন এবং তাদের কথার মধ্যে যুক্তি আছে।
উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে একথা পরিস্কার যে, মহিলাদের ঈদগাহে ও মসজিদে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও এটি পছন্দনীয় নয়।

একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন যে,নবী সাঃ এর -যুগেই মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার তাগিদ তো দূরের কথা, উৎসাহও ছিল না; বরং কেবল অনুমতি ছিল। উৎসাহ কিংবা তাগিদ ছিল মর্মে কোনো একটি বর্ণনাও দেখতে পাওয়া যায় না।
তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মহিলাদের কে ঈদের নামাজে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলেছেন ঋতুপতি থাকা অবস্থায় এমনকি নিজের ওড়না না থাকলে অন্যের ওড়না ধার হলেও।
কিন্তু সেখানে প্রেক্ষাপট ছিল। তখন মুসলিমদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য তাই মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য এবং মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য আর কাফেরদের নিকট মুসলিমদের সংখ্যাকে বড় করে দেখানোর জন্য আর বিশেষ করে ইসলামের সেই প্রাথমিক যুগে নারীদেরকে ইসলামের বিষয়ে শিক্ষা দান করার জন্য সেখানে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল বলতে হয়। তাছাড়া ওই সময় আজকের দিনের মত ফিতনা ছিল না।
আজকাল তো এমন অনেক দেখা যায় যে মাহফিলে যাওয়ার নাম করে সিনেমা হলে চলে যাচ্ছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে। অথবা মসজিদে যাওয়ার নাম করে শপিং করতে যাচ্ছে কিংবা বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।

তৎকালীন সময়ে মুসলিম মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি ছিল নিম মুক্ত কয়েকটি কারণে। তবে বিশেষ করে কওমি দেওবন্দী আলেমগণ বলে থাকেন যে এই হাদীসগুলো রহিত হয়ে গেছে। আসল কথা হচ্ছে আমাদের দেশের কওমি ও দেওবন্দী আলেমদের একটি স্বভাব হল তাদের মতের বিপক্ষে গেলেই তারা হাদিসগুলোকে রোহিত হয়ে গেছে বলে ফতোয়া দিয়ে থাকে। অপরদিকে আমাদের বিশেষ করে বাংলাদেশের আহলে হাদিস মাযহাবের ভাইদের আরও একটি স্বভাব হল তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেও হাদিসগুলোকে জাল কিংবা অত্যন্ত দুর্বল বলে ফতোয়া দিয়ে থাকে।।
এভাবে উভয় দল সহি হাদিসকে অস্বীকার করে নিজেদের মত প্রতিষ্ঠার জন্য অনেকেই সংগ্রামের মধ্যে লিপ্ত হয় এমনকি বাহাস মুনাজারা করে তারা ইসলামকে বিধর্মীদের কাছে হাসির বস্তুতে পর্যন্ত পরিণত করে। এবং অনেক সময় মারামারি করে আহত নিহত হয়।।
👉ইমাম তাহাবী রহঃ বলেন, মহিলাদের ইসলামের প্রথম যুগে জামাতের উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানগণের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা।
–মায়ারিফে মাদানিয়াহ, শরহে তিরমিযী)

👉ইমাম আইনী রহঃ বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগ ফিতনা ফাসাদ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা একেবারেই বিপরীত। বর্তমান যুগ নারীদের বিরত রাখা তো দূরের কথা নিজেরাই এই সমস্ত ফিতনা-ফাসাদ থেকে বেঁচে থাকা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

👉মূলতঃ মহিলাদের মসজিদে জামাতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়ার কারণ হিসেবে তা’লীম অর্থাৎ ইলম অর্জন করাকেও উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বুখারী শারীফের ৯১৫ নং হাদিসের বর্ণনা দ্বারা।
উম্মে আতিয়া রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন আমাদেরকে বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হতো, আমরা কুমারী মেয়েদেরকে, এমনকি ঋতুবর্তী মহিলাদেরকেও নিয়ে ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের পিছনে থেকে তাদের তাকবীরের সাথে সাথে তাকবীর পড়তাম এবং তাদের দোয়ার সাথে সাথে আমরাও ঐ দিনের বরকত ও পবিত্রতা লাভের দোয়া করতাম।’

এ হাদিসে এবং অন্যান্য আরও হাদিসে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, ঋতুবর্তী মহিলাগণও ঈদগাহে উপস্থিত হতো। অথচ শরীয়তে ঋতুবর্তী মহিলাদের জন্য নামায সম্পূর্ণ হারাম।
সুতরাং তাদের ঈদগাহে বা জামাতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি যদি শুধুমাত্র নামাজের জন্য হতো, তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ ঈদগাহে উপস্থিত হতো না। মূলতঃ প্রথম যুগে নামাজসহ সকল অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, তালীম বা রাসূল সাঃ এর খুতবা থেকে এবং বিভিন্ন আলেমদের খুতবা থেকে ইলম বা জ্ঞান গ্রহন করা।
মোটকথা ওই সময় ওহী নাযিল হচ্ছিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিত্যনতুন আদেশ নিষেধ নাযিল হতো তা যেন পুরুষ মহিলা সকলে সমভাবে জানতে পারে সে কারণে তাদেরও উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল। এবং উপস্থিত হওয়া দরকার ছিল।।

তবে এই অনুমতিটাও ছিল শর্ত সাপেক্ষে।
👉পরিপূর্ণ পর্দাসহ গোটা শরীর আবৃত অবস্থায় বের হবে।
👉ঝনঝনানিপূর্ণ অলঙ্কার তথা ঘুঙ্গুর নুপুর ইত্যাদি পরে বের হতে পারবে না। এবং বেপর্দা বের হতে পারবে না তাছাড়া হাদিসে স্পষ্ট বলা আছে যদি কারো কাছে বড় ওড়না না থাকে তাহলে অন্যের কাছ থেকে ওড়না ধার নিয়ে যাবে কিন্তু বেপর্দা যেতে পারবে না
👉সাজগোজ ও সুগন্ধি সহ বের হতে পারবে না।
👉অঙ্গভঙ্গি করে চলতে পারবে না।
👉পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে রাস্তার একপাশ হয়ে চলবে।
👉 অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না।
👉সবচেয়ে মুখ্য বিষয় হল, তাদের এ বের হওয়াটা ফেতনার কারণ হতে পারবে না।
—আবু দাউদ হাদিস নং ৫৬৫, বযলুল মাজহূদ ৪/১৬১!!
উল্লেখ্য যে বর্তমান যুগেও এবং এই ফিতনা-ফাসাদের দিনে এসেও যদি এসব শর্ত পাওয়া যায় তবে মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে অনুমতি দেয়ার অবকাশ অবশ্যই আছে। এবং এই জাতীয় শর্ত পূরণ হলে তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দেওয়া মোটেও ঠিক নয় বরং উৎসাহিত করা উচিত।।
তাছাড়া মসজিদে গেলে ছোট ছোট বাচ্চারা মায়ের সাথে মসজিদে যাবে এবং সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করবে এবং মসজিদের প্রতি তাদের একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হবে এটাও একটা ভালো দিক রয়েছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা কেরামের যুগের পর যখন উক্ত শর্তগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে তখন সাহবায়ে কেরাম তা উপলব্ধি করতে পেরে মহিলাদের মসজিদে গমনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছেন অনেক এলাকাতে অনেক সাহাবী।
শুধু রাসূল সাঃ এর সময়ের প্রাথমিক যুগের আমল গুলো নিয়ে ফতোয়াবাজি করে ফেতনা সৃষ্টি করলে হবে না বরং সাহাবাগণের আমল গুলো আমাদেরকে দেখতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সাহাবাগণকে অনুসরণ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই সাহাবায়ে কেরামের প্রজ্ঞাপুর্ণ বিষয়গুলোকে আমাদের গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
এটা তো স্বতসিদ্ধ বিষয়ে যে, নবী সাঃ এর কথা কিংবা কাজ সাহবায়ে কেরামের রাঃ চাইতে বেশি কেউ বুঝেছে বলে দাবি করা কিংবা তাদেরকে আদর্শ মনে না করা নিতান্ত মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।

📘📘নিম্নে সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যসমূহ থেকে কিছু বক্তব্য উল্লেখ করা হল-

👉আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
যদি রাসুলুল্লাহ সাঃ বর্তমানকালের মহিলাদের অবস্থা দেখতেন তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন। যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনি ইসরাইলের মহিলাদেরকে।’ –সহীহ বুখারী ১/২৯৬!

👉আবু আমর শাইবানি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি.কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। (আলমুজামুল কাবির ৯৪৭৫, মজমাউযযাওয়াইদ ২/৩৫) আল্লামা হাইছামি বলেন, এই রেওয়ায়তের সকল বর্ণনা কারী সিকাহ-নির্ভরযোগ্য।

👉জুবাইর ইবন আওয়াম রাযি. তাঁর পরিবারের কোন নারিকে ঈদের জামাতে যেতে দিতেন না। — মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবাহ ৫৮৪৬।
📕📕 আসল কথা হলো মহিলাদের মসজিদে যাওয়া জায়েজ এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে মসজিদে যাওয়া উচিত। তাছাড়া আমার দেশের শহরের মসজিদগুলোতে এবং রাস্তার পাশের মসজিদগুলোতে যেখানে মানুষ দূরে জার্নি করে সেই প্রত্যেকটি মসজিদে মহিলাদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রাখা খুবই জরুরী কেননা আজকাল মহিলারা প্রায় বাইরে বের হয় বিভিন্ন প্রয়োজনে।
মহিলাদেরকে ডেকে ডেকে মসজিদে নিয়ে আসা যেমন একটি চরমপন্থা অতদ্রুপ মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করাটাও একটি চরমপন্থা বরং সামাজিক স্থিতিশীলতার দিকে লক্ষ্য রেখে এবং যাতে ফেতনা-ফাসাত সৃষ্টি না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা খুবই জরুরী।।
ঈদের নামাজের খুতবা শোনার জন্য,
জুমার নামাজের খুতবা শোনার জন্য,
ইসলামী সংস্কৃতিকে ধারণ করার জন্য।
মাঝেমধ্যে মহিলাদের উচিত বাচ্চাদের নিয়ে মসজিদে আসা। তবে অবশ্যই পর্দা ও শালীনতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর উদ্দেশ্য থাকতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সুন্নতের প্রতিষ্ঠা।।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহিহ বুঝ দান করুন।

Leave a comment