মাদ্রাসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও গ্রহণযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়।

মুসলিমদের মাদ্রাসার ইতিহাসঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
#মাদ্রাসা আরবি শব্দ এর বহুবচন মাদা-রিস।
আরবি শব্দ দারসুন থেকে এটি উদ্ভূত, এর অর্থ পাঠ। মাদ্রাসা মূলত মুসলিমদের অধ্যয়ন-অধ্যাপনা গবেষণা ইত্যাদির স্থান বা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সাধারণ অর্থে মাদ্রাসা হচ্ছে আরবি ভাষা ও ইসলামি বিষয়ে শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।
মাদ্রাসা শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান ছিল সাফা পর্বতের পাদদেশে সাহাবী যায়েদ-বিন-আরকামের বাড়িতে, যেখানে স্বয়ং রসুল (স:) ছিলেন এর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ছিলেন তাঁর কয়েকজন অনুসারীগণ কয়েকজন সাহাবী।
হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে নববি’র পূর্বপাশে স্থাপিত হয় মাদ্রাসা আহলে সুফ্ফা। শিক্ষক ছিলেন উবাদা ইবনু সামিত আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন আবু হুরাইরাই (রাঃ) মু‘আজ ইবনু জাবাল গিফারি (রাঃ) প্রমুখ আরো অনেক সাহাবি।
মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে ছিল
কুরআন,
হাদিস,
ফারায়িজ, (জমি ও জ্যামিতিক হিসাব ও বন্টন পদ্ধতি)
চিকিৎসা,
বংশ শাস্ত্র,
তাজবিদ , (প্রমিত উচ্চারণ এবং বিভিন্ন উচ্চারণ রীতি)
অশ্ব চালনা,
যুদ্ধবিদ্যা, (এই অশ্ব চালনা এত সামরিক যানবাহন পরিচালনা এবং যুদ্ধবিদ্যা বর্তমানে পৃথিবীর মূল পাঠ্য বিষয়)
হস্তলিপি বিদ্যা, (যা বর্তমানে লিপিকলা হিসেবে চিহ্নিত)
শরীর চর্চা ইত্যাদিও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।(শরীরচর্চা চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবং বর্তমানে সমস্ত দুনিয়া জুড়ে এই শরীর চর্চার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে)
উপরোক্ত বিষয়গুলো একই সাথে পাঠ্য দান করা হতো।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো ইসলামের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে মদিনা নামক ছোট্ট নগর রাষ্ট্রের মধ্যে মসজিদ ভিত্তিক যে মাদ্রাসা তথা বিদ্যালয় চালু হয়েছিল এবং সেখানে যে সকল সাবজেক্টের উপর বিদ্যা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো তা আজকাল বহু আধুনিক বড় বড় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া হয় না।

নবুওয়্যাতের প্রথম দিন থেকে উমাইয়া বংশের শাসনামলের প্রথম ভাগ পর্যন্ত প্রায় একশ বছর সময়কালকে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রথম পর্যায় ধরা হয়।

বাংলায় মাদ্রাসার প্রবর্তনঃ
বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী ১১৯৭, মতান্তরে ১২০১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার রাজধানী গৌড়ে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন।

সুলতান গিয়াসুদ্দীন একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ১২১২ খ্রিষ্টাব্দে। পরবর্তীকালে তাঁর বংশধর সুলতান দ্বিতীয় গিয়াসুদ্দীনও একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। মাদ্রাসা দুটির নাম যথাক্রমে গৌড় ও লাখনৌতী মাদ্রাসা।

হোসেন শাহ ও তাঁর পুত্র নুসরত শাহ গৌড়ে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। এসব মাদ্রাসার অনেকগুলির ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান।
ঢাকায় মাদ্রাসা স্থাপনঃ
১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে সুবাহদার শায়েস্তা খানের উদ্যোগে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে একটি মাদ্রাসা ও মাসজিদ নির্মিত হয়।
নবাব জাফর মোরশেদ আলি খান স্থাপন করেন মুর্শিদাবাদ মাদ্রাসা। যার ভবনটি কালের সাক্ষী হিসেবে এখনও অটুট রয়েছে।
১১৭৮ হিজরি সালে জমিদার মুন্সি সদরুদ্দীন আল মুসাভী বুহার গ্রামে বর্ধমান মাদ্রাসা স্থাপন করেন এবং লখনৌ ( ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী) থেকে আগত মাওলানা আব্দুল আলি বাহারুল উলুমকে শিক্ষক নিযুক্ত করেন। নওয়াবী আমলে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য সরকার এগুলির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ লাখেরাজ জমি বরাদ্দ দিত। মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য সরকার ভাতা ও বৃত্তি দিত।

Leave a comment