চিনির গল্প, Story of sugar

👉👉শুরুটা হল ক্রুসেডের সময়। উইলিয়াম অফ টাইরে কিংডম অফ জেরুসালেমে গিয়ে দেখলেন সেখানে লবনের মত সাদা একধরনের পাউডার পাওয়া যাচ্ছে। লবন নোনতা স্বাদের, কিন্তু এটা মধুর মত মিষ্টি।

হ্যা, এটা চিনির গল্প। দ্যা স্টোরি অফ সুগার, দ্যা স্টোরি অফ পিউর, হোয়াইট এন্ড ডেডলি।

চিনি উৎপাদনে খরচ ছিল আকাশছোয়া, পরিশ্রম ছিল অমানুষিক। কোন স্বাধীন নাগরিক এই পরিশ্রমে রাজি হত না। তাই আখচাষ থেকে চিনি উৎপাদনে ব্যবহার করা হত আবিসিনিয়া বা আফ্রিকার কাফ্রী গোলামদের।

জেরুসালেম, এন্টিয়কসহ ভূমধ্যসাগর তীরের বেশ কিছু শহর যখন ক্রুসেডাররা জয় করে নিল, তারা সেখানে পেয়ে গেল সাদা চিনির সন্ধান। এর আগে প্রায় চারশো বছর ধরে ইউরোপ এই চিনি উৎপাদন করে নি।

সেই যামানায় সাদা চিনি ছিল ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট ডিজায়ার্ড লাক্সারি প্রোডাক্ট। এখনকার হীরার মতই ছিল দাম এবং
প্রথম ধাক্কাটা গেল মুসলিম বন্দীদের ওপর দিয়ে, এরপর সেখান থেকে চলে গেল বিশালদেহী রাশান দাসদের কাছে। হ্যা, সে আমলে ক্রিশ্চিয়ানরাও ক্রিশ্চিয়ানদের দাস বানাতো।

কিন্তু, ঠান্ডা জলবায়ুতে জন্মানো রাশানরা মধ্যপ্রাচ্যের গরমে খুব একটা প্রোডাক্টিভ লেবার হিসেবে নিজেদের প্রমান করতে পারলো না।

এরপর হল আরেক মুশকিল, মুশকিলের নাম সুলতান আল নাসির সালাহ উদ্দীন ইউসুফ ইবন নাজমুদ্দীন আল আইয়্যুবী।

১১৭১ থেকে ১১৯৩ সালের মধ্যে ক্রুসেডাররা ফালাস্তিন অঞ্চলের অধিকাংশ রাজ্য হারিয়ে ফেললো সালাহ উদ্দীনের মোকাবিলায়। এর একশো বছরের মধ্যে তারা মুখোমুখি হল আরো সালাহ উদ্দীনের আরো বিপজ্জনক কিছু উত্তরসুরীর, রুকনুদ্দীন আয যাহির বাইবার্স এবং সুলতান আল মানসুর কালাউন আস সালিহী, যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে ক্রুসেডার রাজ্যগুলোর নাম নিশানা মুছে দেন।

জেরুসালেমের স্বাদ ভুলে গেলেও চিনির স্বাদ কিন্তু ইউরোপিয়ানরা ভুলতে পারে নি।

পর্তুগীজরা আটলান্টিক চষে বেড়াতে শুরু করলো পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে। তাদের হাতে চলে এলো আজোরস, মাদেইরা আর ক্যানারী আইল্যান্ডস।

এই দ্বীপগুলো দখল করে তারা প্রথমেই খেয়াল করলো, এখানে আছে উর্বর, রসালো জমি। বৃষ্টিও ভালই হয়, বাতাসে আছে আর্দ্রতা।
এই সুযোগ হেলায় হারানো যায় না। ক্যানারী আইল্যান্ডস আর মাদেইরাতে শুরু হয়ে গেল আখ চাষ। শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য পূর্ব ইউরোপ আর রাশিয়া থেকে ধরে নিয়ে আসা হল শক্তপোক্ত মানুষ।

পৃথিবীতে মানুষের আদিমতম নেশা হচ্ছে গ্লুকোজের নেশা। আর চিনি থেকে মানুষ ঠিক সেই জিনিসটাই পায় সরাসরি।

ক্রুসেডারদের মারফত ইউরোপে গিয়েই সাদা চিনি মাত করে দিয়েছিল বাজার। ইউরোপের অভিজাত পরিবারগুলোতে একটা স্টেইটাস সিম্বল হয়ে গেল বেশি চিনি খাওয়া। যে যত বেশি চিনি খায়, সে তত বড়লোক, এমন একটা অবস্থা।

তো, এই স্টেইটাস ধরে রাখতে গিয়ে বাড়তি চিনি খেয়ে ইউরোপিয়ান এলিটদের দাতের অবস্থার দফারফাও হচ্ছিল সমানে। মধ্যযুগের ১১০০-১৬০০ সালের ইউরোপিয়ান এলিটদের কারো দাত বের করা হাসির ছবি খুব একটা পাওয়া যায় না, কারন তাদের দাত হয়ে থাকতো কালো।

অন্যের চেয়ে আমি বেশি ক্লাসি, এই কথাটা বোঝাতে গিয়ে চিনি খাওয়ার দৌড় কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল তার একটা উদাহরন হচ্ছে ইংল্যান্ডের কিং এডওয়ার্ডসের পরিবার। ১২৮৮ সালে শুধু রাজপরিবারের খাবারের জন্যই চিনি লেগেছিল ৬০০০ পাউন্ড।

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার জন্য রানী প্রথম এলিজাবেথের সব দাতই ছিল কালো। এই চিনির সাপ্লাই এসেছিল মরোক্কোর সুলতানদের কাছ থেকে। মরোক্কান সুলতান স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধ করার জন্য এলিজাবেথের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতেন, আর এলিজাবেথকে দিতেন সুন্দর কাপড় এবং চিনি। একদিকে এলিজাবেথের অস্ত্র দিয়ে তিনি মারতেন স্প্যানিশ সৈনিক, অন্যদিকে তার দেয়া চিনি থেকে বানানো ক্যান্ডি খেয়ে নষ্ট হত ব্রিটিশ এলিটদের দাত।

কালো দাত এবং চিনি নিয়ে ইউরোপিয়ানদের পাগলামি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে কালো দাতকে মনে করা হতে থাকে আভিজাত্যের প্রতীক। মধ্যবিত্তরা নিজেদের মান মর্যাদা বাড়ানোর জন্য দাতে কালো রঙ করা শুরু করলো যাতে প্রতিবেশীরা ভাবে এদের অনেক টাকা আছে, এরা চিনি খেয়ে দাত কালো করে ফেলছে।

কিন্তু, চিনির উৎপাদন যা হত তা এলিটদের প্রয়োজন মেটানোর তুলনায় ছিল খুবই সামান্য। মাদেইরা বা ক্যানারী আইল্যান্ডস খুবই ছোট জায়গা, এখান থেকে সেভাবে বিপুল পরিমান চিনি উৎপাদন সম্ভবও ছিল না। ফলে চিনি আনা লাগতো সেই ভারত থেকে, আরব ও তুর্কী ব্যবসায়ীদের হাত হয়ে, ভেনিস-জেনোয়া ঘুরে ঐ চিনির দাম যা হত তাতে চিনি এমনকি এলিটদের কাছেও আর মিঠা থাকতো না।

এরইমধ্যে, কলম্বাস ভারত যাওয়ার পথ খুজতে বেরিয়ে পৌছে গেলেন আমেরিকা। তার কাছাকাছি সময়েই গেলেন আরো অনেকে। আমেরিগো ভেসপুচি, হেনরী আমেরিকা, জন ক্যাবট, পেদ্রো ক্যাব্রাল, গনজালো কোয়েলহো আর আলেক্সিও গার্সিয়ারা পুরো আমেরিকা চষে বেড়ালেন।

বাহামা, হিস্পানিওলা, জ্যামাইকা আর কিউবায় পা রাখার সাথে সাথেই কলম্বাস শুরু করেছিলেন আখ চাষের চিন্তাভাবনা। তার দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আখ চাষ ও চিনি উৎপাদন।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা গেল, এভাবে চলবে না। চিনি উৎপাদনের জন্য স্থানীয় আরাওয়াক, তাইনু বা গুয়ানহানিদের মত নেটিভ আমেরিকানরা একেবারেই অদক্ষ এবং এত হাড়ভাঙ্গা পাশবিক পরিশ্রমে তারা অভ্যস্তও ছিল না। তারা ছিল স্বাধীনচেতা এবং ইউরোপিয়ানদের বয়ে আনা রোগজীবানুর বিরুদ্ধে কোন ইমিউনিটিও তাদের ছিল না। পরের পঞ্চাশ বছরে ৯০% এর বেশি নেটিভ আমেরিকানরা মরে সাফ হয়ে গেল মহামারীতে।

ফলে, স্প্যানিশদের বিকল্প ভাবনা ভাবতে হল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, চিনি উৎপাদন করতে প্রয়োজনে আফ্রিকা থেকে দাস আমদানী করা হবে।

আমেরিকায় মায়া, অ্যাজটেক ও ইনকাদের লুট করে স্প্যানিশরা যে পরিমান সোনা ও রুপা পেয়েছিল, বা হয় তা দিয়ে আটলান্টিকের এপার থেকে ওপার তক ব্রিজ বানানো যেত।

কিন্তু এই সোনা-রুপার বেশিরভাগটাই তাদের ব্যয় করতে হয়েছিল উসমানী খিলাফতের সাথে যুদ্ধের খরচ মেটাতে৷

এই বাড়তি ব্যয় করা সোনা-রুপার ফলে ষোড়শ শতকের শেষদিকে এক অভুতপূর্ব ঘটনা ঘটে৷ সমস্ত ভু-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল-মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে সোনা রুপা দিয়ে ইচ্ছামত মুদ্রা বানানোর ফলে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় প্রায় দশগুন।

ফলে, আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় ঘাটি গাড়া কলোনিস্টরা ভাবলো, এবার তাদের এমন কিছু আমেরিকা থেকে রফতানি করতে হবে যা দিয়ে আসলেই ব্যবসা করা যায় এবং যা আসলে খাওয়া যায়।

এই ধরনের পন্যগুলোর মধ্যে তিনটা ছিল চাহিদার শীর্ষে। চিনি, কফি আর তামাক। এই তিনটার মধ্যে, চিনির বাজার ছিল সবচাইতে বড়, আর লাভও ছিল সবচাইতে বেশি।

নেটিভ আমেরিকানরা কথা শুনতো না, তাদের একটা নিজস্ব জীবনদর্শন ছিল। তাই তাদের খাটানো যেত না বেশি। স্প্যানিশরা তাই ভাবলো আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে প্রচুর শ্রমিক আমদানী করবে।

এই সিদ্ধান্তটা পরের তিনশো বছরে বদলে দিয়েছিল আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপের ইতিহাস।

১৬৮৩ সালের সেকেন্ড ব্যাটল অফ ভিয়েনায় উসমানী (অটোমান) সামরিক শক্তির মেরুদণ্ড গুড়িয়ে যায়, আর এর ফলেই ইউরোপিয়ান জাহাজগুলো পেয়ে যায় আফ্রিকায় অবাধে দস্যুতা চালানোর লাইসেন্স। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আফ্রিকানদের আফ্রিকা থেকে ধরে নিয়ে আমেরিকান কলোনিগুলোতে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া মানুষের সংখ্যা।

ইউরোপিয়ানরা ব্রিস্টল, লন্ডন, ম্যানচেস্টার, লিভারপুল, লিসবন, আমস্টারডাম, মালাগা, বার্সেলোনা, ভ্যালেন্সিয়া, আলজাজিরা, বিলবাও, ক্যাস্তেলোনের মত বন্দরগুলো থেকে তথাকথিত সভ্যমানুষদের জাহাজগুলো আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলোতে নামতো কামান, বন্দুক, তলোয়ার, ছুরি, ধাতুর তৈরি নানান যন্ত্রপাতি, রঙ্গিন কাপড় আর রাম নিয়ে, আর সেখান থেকে তুলে নিতো পালে পালে মানুষ।

দাস শিকারীরা তছনছ করে দিতো গ্রামের পর গ্রাম। আফ্রিকার সবুজ জলে ভরা নদীগুলো দিয়ে তারা যে গ্রামে ঢুকতো, সে গ্রাম পরিনত হত মৃত্যুপুরীতে। শক্ত-সমর্থ পুরুষদের পরিনত করা হত দাসে, প্রায় সময় নারীদেরও।

তারপর, দেড় থেকে আড়াই মাসের যাত্রাশেষে তারা পৌছুতো আমেরিকায়। কেউ দাস হিসেবে খাটতো ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে, কেউ উত্তর আমেরিকান কোন কলোনিতে আর বাকিরা ব্রাজিলে।

১৫০০-১৯০০ সাল, এই চারশো বছরে আফ্রিকা থেকে ইউরোপিয়ানরা ধরে নিয়ে গেছে অন্তত ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। এদের ধরার জন্য মারতে হয়েছে আরো অন্তত কোটিখানেক মানুষ।

তারপর, এই দাসদের দিয়ে উৎপাদন করা হয়েছে হাজার হাজার টন চিনি।

১৭০০-১৯০০ সাল ছিল মূলত চিনির ব্যবসার স্বর্নযুগ। এই সময়টা জুড়ে মসলা বা সোনা-রুপা নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক পন্য ছিল চিনি।

চিনির মূল্য কত ছিল তার উদাহরন দেয়া যায় ১৭৬৩, সালের প্যারিস চুক্তির একটা ঘটনা থেকে।

প্যারিস চুক্তির সময়ে ফ্রেঞ্চরা কানাডার প্রায় অর্ধেকটা অঞ্চল জুড়ে রাজত্ব করতো, বাকি অঞ্চলটা ছিল ব্রিটিশদের। আর ব্রিটিশদের অধিকারে ছিল মূলত ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডস।

কানাডাতে আখ চাষ করা সম্ভব ছিল না। আখ চাষ করতে হলে দরকার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ আমেরিকার। আর এদিক থেকে যে চিনি ও তামাক উৎপন্ন হবে, তা ফ্রান্সে নিয়ে আসতে প্রয়োজন ক্যারিবিয়ানের একটা ভাল বন্দর।

এই বন্দরটি ছিল গুয়াদিলোপে। গুয়াদিলোপে দ্বীপের আয়তন মাত্র ১৬০০ বর্গ কিলোমিটার। চিনির ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ১৬০০ বর্গ কিলোমিটারের বিনিময়ে ফ্রান্স ব্রিটেনের কাছে বিক্রি করে দিলো কানাডার ৩০ লাখ বর্গ কিলোমিটার জমি।

এমনকি, আজকের আমেরিকা হয়তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন হতে পারতো না যদি না ব্রিটিশরা তাদের সৈনিকদের একটা বড় অংশ রেভলুশনারী ওয়ারের সময় আমেরিকাতে না নামিয়ে ক্যারিবিয়ানে রাখতো।
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের শতকরা ৯৫% ছিল আফ্রিকা থেকে ধরে আনা দাস। বাকিরা ছিল মূলত চিনি ব্যবসায়ী। এই চিনি ব্যবসায়ীরা ছিল ব্রিটেনের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেয়, প্রায় অর্ধেক সামরিক শক্তি ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডে রাখার। বেশিরভাগ সৈন্য আমেরিকায় নামালে ভয় ছিল, দাসরা বিদ্রোহ করে সমস্ত চিনিকলগুলো দখল করে নেবে।

ফলে আমেরিকান সেনাবাহিনী খর্বশক্তির ব্রিটিশ বাহিনীকে ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে পরাজিত করে জিতে নেয় আমেরিকান ওয়ার অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স। এর বিপরীতে ব্রিটিশরা টিকিয়ে রাখে তাদের চিনির সাম্রাজ্য

👉👉উনবিংশ শতকে ব্রিটিশরা আইন করে দাসত্ব বন্ধ করলো ঠিকই, কিন্তু তার বদলে তারা রেখে দিলো বন্ডেজ সিস্টেম, অনানুষ্ঠানিক দাসত্ব। বাকি ইউরোপিয়ান সাম্রাজ্যগুলিও ধরলো ব্রিটেনের পথ। যেই লাউ সেই কদুই রয়ে গেলো অনেকটা।

শত শত বছরের দাসত্বে আখ, তামাক আর কফি চাষ ছাড়া আর কিছুই শেখানো হয় নি দাসদের এবং তাদের সন্তানদের। তাই দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে তাদের অবস্থাটা ছিল এমন যে, আখ খেতে কাজ না করতে পারলে রাহাজানি করে খাওয়া ছাড়া তাদের আর উপায় ছিল না।
কিন্তু রাহাজানির সুযোগটাও কি আসলে ছিল?? নাহ, ছিল না।

সাদারা হাতে ফ্লিন্টলক বন্দুক আর পিস্তল নিয়ে নামতো, তাদের ছিল অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী, তাদের ছিল নৌবাহিনী, তাদের ছিল পুলিস বাহিনী। আর কালোদের হাতিয়ার ছিল কুঠার, ছোরা, কোদাল এসব সেকেলে অস্ত্র।

তাই, লড়াইয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা না করে কালোরা চেয়েছে বউ ছেলেমেয়েকে খাওয়াতে। বছরের পর বছর আখক্ষেত আর চিনিকলে দাসের মতই পরিশ্রম করেছে, দাসত্ব থেকে মুক্তির পরেও, কারন তাদের বেচে থাকার আর কোন উপায় সাদারা রাখে নি।

আজকের আমেরিকার সবচেয়ে ধনী শহর নিউইয়র্কের আশপাশটা তখন ছিল নিউ ইংল্যান্ডের অংশ। নিউ ইংল্যান্ডওয়ালাদের বংশধররা আজকে পৃথিবী শাসন করছে দশকের পর দশক ধরে।

আর দক্ষিনের নিউ অর্লিন্স, সেকালের লুইজিয়ানার দাসদের শহর এখনো আছে সেই কালোদের শহর হিসেবেই, যারা সাদা ধনীদের ওপরে ওঠার সিড়ি হয়ে রয়েছে শত শত বছর ধরে।

চিনির পাপ কিন্তু ব্রিটেন বা আমেরিকাকে ছাড়ে নি। প্রতি তিনজনে একজন ব্রিটিশ/আমেরিকান আজ ওবিস। যে চিনির নেশা তাদের সম্পদের অট্টালিকার চুড়ায় তুলেছে, সেই চিনি থেকে হওয়া রোগ ডায়বেটিস, ওবিসিটি, হার্ট এটাক আর স্ট্রোক ঠেকাতে আমেরিকান সরকার এখন প্রতিবছর খরচ করে ট্রিলিয়ন ডলার।

চিনির সাদা চেহারা দেখে আমাদের চোখে এই রক্তাক্ত ইতিহাস ভেসে ওঠে না। চিনি এখন আমাদের কাছে শুধুই ভোগ্যপন্য।

কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর #ব্রিটিশ_বেনিয়া বা আফ্রিকান দাসের কাছে ব্যাপারটা তা ছিল না। তাদের কাছে চিনি ছিল জীবন অথবা মরনের প্রশ্ন, যার জবাব দিতে গিয়ে কেউ মরে বেঁচে যেত, কেউ আবার বেঁচে থাকতো প্রতিদিন মরে যাওয়ার জন্য।

Leave a comment