রমজান মাসে কি কবরের আজাব বন্ধ থাকে!?!

📘📕 রমজানে অর্থাৎ রোজার মাসে কবর বারযাখের আজাব বন্ধ থাকে, মূলত এটি একটি ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন কথা। অনেককেই বিশেষ করে অনেক আলেম ওলামাকে বলতে শোনা যায়, ‘রমজান মাসে কবরের আজাব মাফ থাকে’।আবার আরো একটু আগ বাড়িয়ে একথাও বলতে শোনা যায় যে, ‘দাফনের পর জুমা বা রমজান এলে কেয়ামত পর্যন্ত কবরের আজাব বন্ধ থাকে।
👉👉 আসল কথা হল,মানুষের এমন ধারণা ঠিক নয়, এটি একটি ভিত্তিহীন ধারণা। তাছাড়া অনুমান ধারণা থেকে কথা বলতে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কোরআন-সুন্নায় এ সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়নি বা কোন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি ।
তবে আল্লাহ তাআলা সবার বারযাখ অর্থাৎ কবরের আজাব মাফ করে দিতে পারেন যেকোনো সময় ।
মূলতঃ কবরের আজাব হওয়া না-হওয়ার সঙ্গে রমজানের কোনো সম্পর্ক নেই। কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ মৃত্যু পরবর্তী বারযাখি জীবনে কবরে অথবা অন্য কোথাও কোন ব্যক্তির ঈমান ও নেক আমলের সঙ্গে আজাব হওয়া না হওয়ার সম্পর্ক।

মানুষের উচিত এই জাতীয় অনুমান ও ভিত্তিহীন ধারণা অথবা কথাবার্তার দ্বারা প্রবাহিত না হয়ে, এমনসব আমল করা ও সেই সব আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া, যার মাধ্যমে মৃত্যু পরবর্তী বারযাখের জীবন তথা কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বারজাখি জীবনের আজাবকে কবরের আজাব হিসাবে উল্লেখ করা হয়; কেননা বেশিরভাগ মানুষকেই মৃত্যুর পর কবর দেওয়া হয় অর্থাৎ গ্রাউন্ডেড করা হয়। কিংবা অন্যভাবে তার লাশ ধ্বংস হলে কিংবা পুড়ে ফেললেও তা মূলত ধ্বংসাবশেষ মাটির মধ্যেই ফিরে যায় অর্থাৎ গ্রাউন্ডেড হয়ে যায়।
এইজন্য বাহ্যিক অর্থে এবং সার্বিকভাবে এটাকে কবরের আজাব বলা হয়ে থাকে। কেননা কেউ কেউ বলে থাকেন যে অনেকের তো কবর হয় না বরং তাদের পুড়ে ফেলা হয় অথবা বিভিন্ন জীবজন্তু খেয়ে ফেলে তখন তাদের আজাব হয় কি করে। মূলত তাদের এই ধারণা ও কথাবার্তা ভিত্তিহীন ও নিজের সাথেই প্রতারণার শামিল।
যাইহোক, রোজার মাসের সাথে কিংবা রোজার মাসের বরকতের সাথে কবরের আজাবের এর কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটি একটি রহমত বরকত মাগফেরাতের মাস এবং পুরো মাস ধরেই রহমত বরকত মাগফেরাত হতে থাকে। তার এরই মধ্যে যদি আল্লাহ কাউকে ক্ষমা করে দেন, তা একান্তই আল্লাহর রহমত। রমজানের বাইরেও আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করেন।

👉👉তবে হ্যা, রোজা রাখা অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। অথবা যে কোন এবাদতরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এইজন্যই আল্লাহর নিকট চাইতে হয়, হে আল্লাহ আমার মৃত্যু দান করুন অবশ্যই ঈমানের সহিত, এবাদত তত অবস্থায়, সুস্থ শরীরে এবং প্রিয়জনদের মাঝে (আমিন) । হাদিসে এসেছে, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখে এবং এ রোজা হয় তার জীবনের শেষ আমল (অর্থাৎ রোজা অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
–মুসনাদে আহমাদ ২৩৩২৪; বায়হাকি ৬৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১১৯৩৫)
এ হাদিসের আলোকে জানা যায়, রোজাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দেবেন।
কিন্তু রমজান মাসে কবরের আজাব বন্ধ থাকে, এমনটি কোথাও পাওয়া যায় না।

সম্ভবত যে কারণে মানুষ এমনটি মনে করে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-.
‘যখন রমজানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়(অবশ্য মানুষ শয়তানগুলো ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় থাকে আর এই জন্য রমজান মাসে শয়তানেও চলতে থাকে! আর তাই মানুষ শয়তান এবং জিন শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য আল্লাহ বলেছেন, তোমরা বলো- “মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাছ”আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই মানুষ শয়তান আর জ্বিন শয়তান থেকে) ।
এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়,একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরো অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। –ইবনে মাজাহ ১৬৪২; ইবনে খুযায়মা ১৮৮৩; মুসতাদরাকে হাকেম ১৫৩২।।
আর এই সকল হাদিসের মর্মার্থ হল, এই মাসে ব্যাপক কল্যাণ বর্ষিত হয় এবং অকল্যাণ থেকে মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করা হয়।।।

উপরের হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’- এখান থেকে হয়ত কারও মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, তাহলে রমজানে কবরের আযাবও বন্ধ থাকে। আর এই সকল ধারনা থেকেই মানুষ নিজে মন থেকে বানিয়ে এই সমস্ত কথা বলে থাকেন যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম থেকে এ কথা প্রমাণিত নয়।

হাদিস শাস্ত্র বিশারদ এবং বিজ্ঞ আলেমদের মতে, রমজানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে, প্রতি রাতে আল্লাহ বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং রোজাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- এগুলো বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু রমজানে কবরের আজাব বন্ধ থাকে- হাদিসের এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।

আমিন বলা প্রসঙ্গে

❤️💜আমিন শব্দের বাহ্যিক অর্থ হল “কবুল করুন”!
আমিন শব্দের আরো একটি অর্থ হল “”আমি যা বলেছি তাই যেন হয় এবং তাই করুন হে আমাদের রব””!
👉👉বিভিন্ন দোয়া এবং নামাজের সুরা ফাতিহার পর আমরা যে #আমিন বলে থাকি, সেটার অর্থ হলো—”হে আল্লাহ কবুল করুন”। আল্লাহর কাছে যখনই দোয়া করি তখনই কবুলের জন্য আমরা আমিন বলে থাকি। এটি আল্লাহর কাছে কবুলের জন্য দোয়া। মূলত ইহুদি খ্রিস্টান এবং মুসলিমগণ দোয়া ও প্রার্থনা শেষে আমীন বলে থাকে!!
ইহুদি এবং খ্রিস্টান গন কিছু কিছু আল্লাহ প্রদত্ত এবং নবী প্রদত্ত কালচার এখনো ধরে রেখেছে যা ধরে রাখা তাদের জন্য সহজ হয়েছে কিন্তু যা ধরে রাখা কঠিন তা তারা বাদ দিয়েছে এবং শিরক লিপ্ত হয়েছে।
আমিন বা আমেন শব্দটি তাওরাত এবং ইঞ্জিল তথা বাইবেলেও এসেছে। যেহেতু তাওরাত এবং ইঞ্জিল তথা বাইবেলের অরিজিনাল এসেছে সরাসরি আল্লাহর তরফ থেকে যদিও তারা পরবর্তী সময়ে প্রচুর বিকৃতি সাধন করেছে তথাপিও জান্নাত জাহান্নাম এবং এই জাতীয় প্রার্থনার আয়াতগুলো তারা ঠিক রেখেছে।
👉👉সেমেটিক মূলের মূল অর্থ যা থেকে এটি উদ্ভূত হয়েছে “দৃঢ়”, “স্থির” বা “নিশ্চিত” এবং সম্পর্কিত হিব্রু ক্রিয়াপদের অর্থ “বিশ্বস্ত হওয়া” এবং “বিশ্বস্ত হওয়া”। গ্রীক ওল্ড টেস্টামেন্ট সাধারণত আমেনকে “তাই হোক” হিসাবে অনুবাদ করে; ইংরেজি বাইবেলে এটি প্রায়শই “সত্যিই” বা “সত্যি” হিসাবে রেন্ডার করা হয়েছে।
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকায় এভাবে দেওয়া আছে—
Amen, expression of agreement, confirmation, or desire used in worship by Jews, Christians, and Muslims. The basic meaning of the Semitic root from which it is derived is “firm,” “fixed,” or “sure,” and the related Hebrew verb also means “to be reliable” and “to be trusted.” The Greek Old Testament usually translates amen as “so be it”; in the English Bible it has frequently been rendered as “verily,” or “truly.”

বিভিন্ন দোয়া,মুনাজাত, এবং আল্লাহর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে আশ্রয় বা পানাহ চাওয়ার শেষে যে ‘আ-মীন’ آمـين বলা হয় ।
তার অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি কবুল করো, ডাকে সাড়া দিন ইত্যাদি।
আরবি অভিধানে লেখা হয়েছে:
آمِينُ: (اسم) اِسْمُ فِعْلِ أمْرٍ مَبْنِيّ عَلَى الفَتْحِ بِمَعْنَى اِسْتَجِبْ

হাদিসে আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যখন ইমাম সাহেব “আমীন” বলবেন তখন তোমরাও “আমীন” বলবে। কারণ, যার “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”।
হাদীসটি বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি, এবং আবু দাউদে সরাসরি এসেছে!!

অন্য আরো একটি বর্ণনায় এসেছে—
“যখন ইমাম সাহেব غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে। কারণ, যার “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”
—-এই হাদিসটিও এসেছে বুখারী, মুসলিম এবং আবু দাউদ এর মধ্যে!

👉আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিয়ে তিনি আমাদেরকে সালাত ও সুন্নত শিক্ষা দিয়েছেন তিনি তাঁর খুৎবায় বলেন,
“যখন তোমরা সালাত আদায় করতে যাবে তখন তোমরা সালাতের সারিগুলো সোজা করে নিবে অতঃপর তোমাদের মধ্যকার যে কোনও একজন ইমামতি করবেন। যখন তিনি “আল্লাহু আকবার” বলবেন তখন তোমরাও “আল্লাহু আকবার” বলবে। আর যখন তিনি
غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
“গায়রিল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালায যাল্লীন” বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে-তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে ভালবাসবেন।”
—-এই হাদিসটি আছে সহিহ মুসলিম এবং আবু দাউদ শরীফে
👉 আমিন/আমীন শব্দের আরবি বানান, উচ্চারণ ও প্রয়োগের পার্থক্যের কারণে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ:
যখন “আ-মীন” এর আলিফকে মাদ্দ সহকারে ( লম্বা করে টেনে) পড়া হবে তখন তার অর্থ কবুল করা (যেমনটি আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি)। কিন্তু মাদ্দ ছাড়া পড়লে তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের অর্থ প্রকাশ করে। যেমন:

● আমীন أمين বা আল আমীন الأمين অর্থ: বিশ্বস্ত, আস্থা ভাজন, সৎ।
এ কথা প্রসিদ্ধ যে, নবুওয়ত প্রাপ্তির পূর্বে যুবক বয়সে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘আল আমিন’ বা বিশ্বস্ত বলে সম্বোধন করা হত।

💜❤️আল আমীন অর্থ: নিরাপদ, শান্তিময়। আল্লাহ তাআলা মক্কা নগরীকে ‘নিরাপদ বা শান্তিময় নগরী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন,
وَهَٰذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ
“এবং (শপথ) এই নিরাপদ নগরীর।” [সূরা ত্বী-ন: ৩]

👉👉মোটকথা এটি ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিম ধর্মীয় অনুশীলনে একটি সমাপ্তি সূচক শব্দ হিসাবে বা দোয়া বা প্রার্থনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আমিন/আমেন শব্দের সাধারণ ইংরেজি অনুবাদের মধ্যে রয়েছে “সত্যিই”, “সত্যি”, “এটি সত্য”, এবং “এটি হতে দিন”। দৃঢ় চুক্তি প্রকাশ করার জন্য এটি পরস্পর কথোপকথনেও ব্যবহৃত হয়। যেহেতু বান্দা যখন আল্লাহর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করে অথবা আশ্রয় চায় তখন মূলত আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপতন চলতে থাকে।

👉👉উইকিপিডিয়াতে এসেছে—

আমিন শব্দের ব্যুৎপত্তিঃ
আমেন বাইবেলের হিব্রু উৎপত্তির একটি শব্দ । এটি হিব্রু বাইবেলে বহুবার একটি নিশ্চিত প্রতিক্রিয়া হিসাবে আবির্ভূত হয়, বিশেষ করে আশীর্বাদ অনুসরণ করে। ইঞ্জিলে অর্থাৎ বাইবেলের শব্দটি ৩০ বার এসেছে। মৌলিক ত্রিকোণীয় মূল যেখান থেকে এই শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে, বাইবেলের আরামাইক সহ আফ্রোএশিয়াটিক ভাষার সেমিটিক শাখার বেশ কয়েকটি ভাষায় সাধারণ । হিব্রুতে মূলের অর্থ দৃঢ় বা নিশ্চিত হওয়া, নির্ভরযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য হওয়া, বিশ্বস্ত হওয়া, বিশ্বাস করা, বিশ্বাস করা অন্তর্ভুক্ত। শব্দটি প্রাথমিক চার্চের ইহুদি ধর্ম থেকে গ্রীক ভাষায় আমদানি করা হয়েছিল ।গ্রীক থেকে, আমেন অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় প্রবেশ করেছে। ইংরেজি শব্দের একটি প্রমিত অভিধানের ব্যুৎপত্তি অনুসারে, আমেন গ্রীক থেকে ল্যাটিন ভাষায় এবং সেখান থেকে ইংরেজিতে এসেছে।

হিব্রু থেকে, শব্দটি পরে আরবি ধর্মীয় শব্দভাণ্ডারে গৃহীত হয় এবং আরবি মূল أم ن [ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] , যা হিব্রু ভাষার অনুরূপ অর্থে সমতল করা হয়। খ্রিস্টান এবং ইসলামিক অভিধানে ইন্টারজেকশনটি ঘটে, সাধারণত প্রার্থনায়, সেইসাথে ধর্মনিরপেক্ষভাবে, যদিও কম সাধারণভাবে, যাতে সম্পূর্ণ নিশ্চিতকরণ বা সম্মান বোঝাতে পারে। ধর্মীয় গ্রন্থে, এটি বাইবেলের আরবি অনুবাদে এবং কুরআনের ঐতিহ্যগতভাবে প্রথম অধ্যায় পাঠ করার পরে ঘটে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মীয় প্রার্থনার অনুরূপ।

কিছু থিওসফিস্টদের মধ্যে জনপ্রিয় , [১২] ইতিহাসের আফ্রোকেন্দ্রিক তত্ত্বের প্রবক্তা , [১৩] এবং গুপ্ত খ্রিস্টধর্মের অনুসারী [১৪] অনুমান হল যে আমেন মিশরীয় দেবতা আমুন (যাকে কখনও কখনও আমেন বানানও বলা হয়) এর নামের একটি উৎস । . পূর্ব ধর্মের কিছু অনুসারী বিশ্বাস করেন যে আমেন হিন্দু সংস্কৃত শব্দ অম এর সাথে শিকড় ভাগ করে । [15] [16] [17] [18] এই ধরনের বাহ্যিক ব্যুৎপত্তি আদর্শ ব্যুৎপত্তিগত রেফারেন্স রচনায় অন্তর্ভুক্ত নয়। উপরে উল্লিখিত হিব্রু শব্দটি আলেফ দিয়ে শুরু হয়, যখন মিশরীয় নামটি যোদ দিয়ে শুরু হয় । [১৯]

ফরাসি ভাষায়, হিব্রু শব্দ আমেন কখনও কখনও আইন্সি সোইট-ইল হিসাবে অনুবাদ করা হয় , যার অর্থ “তাই হোক।” [২০]

ভাষাবিদ গিল’আদ জুকারম্যান যুক্তি দেন যে, হালেলুজার ক্ষেত্রে , আমেন শব্দটি সাধারণত অনুবাদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় না কারণ বক্তাদের আইকনিসিটিতে বিশ্বাসের কারণে , তাদের ধারণা যে শব্দের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে অন্তর্নিহিত কিছু আছে। সংকেতকারী (শব্দ) এবং এটি কী বোঝায় (এর অর্থ)। [২১] : ৬২
👉👉 এ শব্দটি ভূমি জরিপকারী ও কর্মচারী অর্থেও ব্যবহৃত হয়। (বাংলা ব্যবহারিক অভিধান-বাংলা একাডেমি)
👉👉আমিন অর্থ: সচিব, সেক্রেটারি, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। (আরবি-বাংলা অভিধান-ফজলুর রাহমান)

এর পরে অন্য শব্দ যুক্ত করে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
👉👉আমীনুস সানদুক أمـــين الصــندوق অর্থ: ক্যাশিয়ার।
👉👉আমিনুল মাকতাবাহ أمـــين المكتبـــة অর্থ: লাইব্রেরিয়ান।
👉👉আল আমীনুল আম الأمـــين العام অর্থ: সাধারণ সম্পাদক ইত্যাদি।
মোটকথা, বানান এবং ব্যবহারের পার্থক্যের কারণে এই আমীন বা আমিন শব্দটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে থাকে।

🟥🟪 এবার আসা যাক #ছুম্মা_আমিন বলার বিষয়ে–
ছুম্মা শব্দটির অর্থ অতঃপর অথবা আবারও এবং আমিন শব্দটির অর্থ কবুল করো বা গ্রহণ করে নাও। সাধারণত আল্লাহ্ তা’লার নিকট কোন দোয়া চাওয়ার পর আমিন বলা হয়। এর অর্থ- হে আল্লাহ্ কবুল করে নাও। আবার কখনো কখনো দোয়ার শেষে আল্লাহ্ তা’লার কাছে অধিক আকুতির সাথে আমিন-ছুম্মা আমিন কথাটি বলা হয়।

তবে বিষয়ে প্রত্যেকটি আল্লাহ খুব ভালোভাবে অবগত এবং আল্লাহ আমাদের যে কোন বিষয়ে যতটুকু জ্ঞান দান করেছেন আমরা কেবল সেখান থেকে কথা বলতে পারি।

শবে মেরাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, করনীয় এবং বর্জনীয়।।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহীল কারীম।
আম্মা বাদ।
কালাল্লাহি তায়ালা ,
আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
سبحان الذي اسرى بعبده ليلا من المسجد الحرام الى المسجد الاقصى الذي باركنا هو له لنوره لنور يهو من اياتنا،انه هو السميع البصير….
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালার কাছে জন্য যিনি আমাদেরকে আজকের এই দিন পর্যন্ত জীবিত রেখেছেন এবং আজকের এই আলোচনা করার তৌফিক দান করেছেন, এজন্য আবারও আমরা আল্লাহর শোকর আদায় করি, আলহামদুলিল্লাহ।
উপরোক্ত আয়াতটি সূরা বনী ইসরাইল অথবা ইসরা এর প্রথম আয়াত।
পবিত্র কোরআনে ইসরা বা ভ্রমণ সম্পর্কে এই একটি আয়াতই ব্যক্ত করা হয়েছে। এবং উর্ধা আকাশের কিছু বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সূরা নুজমে।
সূরা বনী ইসরাঈলে প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন–
“”তিনি পবিত্র (আল্লাহ) যিনি তার বান্দাকে রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’

এই হলো আয়াতের মোটামুটি বাংলা তর্জমা বা অনুবাদ।।
সূরা বনী ইসরাইলে শুধু মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত একরাত্রিতে ভ্রমণের কথা উল্লেখ আছে এবং আয়াতের শেষে বলে দেওয়া হয়েছে যে, তিনি তাঁকে এই জন্য ভ্রমণ করাচ্ছেন এই জন্য, যাতে তিনি আল্লাহর নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারেন।।।
অতঃপর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে উর্ধ আকাশে গমন করেন এবং এই ব্যাপারে কমপক্ষে 25 জন জলিল ও কদর সাহাবীর বর্ণনা করা হাদিস উল্লেখ আছে বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে।
মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল নবুওয়তের ১১তম বছরের ২৭ রজবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স ৫১ বছর। মেরাজ হয়েছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। মেরাজের বিবরণ পবিত্র কোরআনের সুরা নাজমে ও সুরা ইসরায় বিবৃত হয়েছে। হাদিসের কিতাব বোখারি , মুসলিম ও সিহাহ সিত্তাসহ অন্যান্য কিতাবে মেরাজের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য বিশুদ্ধ সূত্রে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সকালবেলা যখন বলা শুরু করলেন যে আমি গতরাতে বায়তুল মোকাদ্দাস গিয়েছি এবং সেখান থেকে আকাশের ভ্রমণ করে এসেছি তখন মক্কার কাফেররা ঠাট্টা বিদ্রুপ করা শুরু করলেন।

অতঃপর এই ব্যাপারে আল্লাহ আয়াত নাযিল করেন।

সূরা নাজমে ১ থেকে ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন–
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা বিলীন হয়। তোমাদের সাথী (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি। আর তিনি নিজে থেকে কোনো কথা বলেন না। (বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি (ভিন্ন অন্য কিছু) নয়। তাকে শিখিয়েছেন মহাশক্তিধর (জিবরাইল আ.)। সে (জিবরাইল আ.) পাখাবিশিষ্ট, সে স্থিত হয়েছে দূর ঊর্ধ্বে। অতঃপর নিকটবর্তী হলো, পরে নির্দেশ করল। তারপর হলো দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট। পুনরায় তিনি ওহি করলেন তার বান্দার প্রতি যা তিনি ওহি করেছেন। ভুল করেনি অন্তর যা দেখেছে। তোমরা কি সন্দেহ করছ তাকে, যা তিনি দেখেছেন সে বিষয়ে। আর অবশ্যই দেখেছেন তিনি তাকে দ্বিতীয় অবতরণ স্থলে; সিদরাতুল মুনতাহার কাছে; তার নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া। যখন ঢেকে গেল সিদরা যা ঢেকেছে; না দৃষ্টিভ্রম হয়েছে আর না তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন; অবশ্যই তিনি দেখেছেন তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ।’

মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। মূলতঃ মেরাজ হলো, মহানবী মুহাম্মাদ সাঃ কর্তৃক সশরীরে ও সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় জিবরাইল আঃ ও মিকাল আঃ সাথে বিশেষ কুদরতি একপ্রকার বাহনের মাধ্যমে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা এবং সেখান থেকে বিশেষ এক প্রকার কুদরতি সিঁড়ির মাধ্যমে প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন করেন।

👉👉এখানে বলে রাখা ভালো যে অনেকেই বলে থাকেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বোরাকের মাধ্যমে এবং “রফরফ” নামক বাহনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন।।
এবং “বোরকা” নামক প্রাণীটিকে চিত্রাহিত করা হয়েছে একজন সুন্দরী মহিলার মাথা বিশিষ্ট একটি পাখাওয়ালা ঘোড়া’র আকৃতি দিয়ে।
নাউজুবিল্লাহ।
এ জাতীয় বহু ছবি ও চিত্র এঁকে শিয়া এবং ইহুদীরা প্রচার করেছে এবং করছে ইসলামকে বিভ্রান্ত করার জন্য।

👉 মেরাজ সংক্রান্ত সকল হাদিস একত্রে বিশ্লেষণ করে প্রখ্যাত আলেম-উলামাদের সিদ্ধান্তও এটি যে, রাসুল সাঃ সে রাতে সিঁড়িতে করে আসমানে গিয়েছেন। বুরাকে করে নয়।

সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুফাসসির ইমাম ইবন কাসির(র) তাঁর তাফসির গ্রন্থে সুরা বনী ইস্রাঈলের ১নং আয়াতের তাফসির] ইসরা-মিরাজ সংক্রান্ত বিভিন্ন হাদিস উল্লেখ করে শেষ অংশে উল্লেখ করেছেন যে, রাসুল সাঃ সে রাতে বুরাকে করে বাইতুল মুকাদ্দাসে গিয়েছেন। এরপর এক প্রকার মইতে বা সিঁড়িতে করে প্রথম আসমানে গিয়েছেন, এরপর অবশিষ্ট আসমানগুলোতে গিয়েছেন। 

 

 

অর্থঃ “রাসুলুল্লাহ() যখন বাইতুল মুকাদ্দাসের কাজ শেষ করলেন তখন তাঁর জন্য মিরাজ (সিঁড়ি) আনা হল এবং এতে করে তিনি আসমানে গমন করেন। বুরাকে করে যাননি। যেমন কতিপয় মানুষ তা ধারণা করে থাকে। বরং বুরাক বাইতুল মুকাদ্দাসের দরজায় সাথে বাঁধা ছিল যেন তাতে করে তিনি আবার মক্কায় ফিরে আসতে পারেন।” [21]

এ সংক্রান্ত সকল হাদিসের আলোকে এটিই তাঁর অভিমত। তিনি তাঁর ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,

 

 


👉তাফসির মা’আরিফুল কুরআনেও সুরা বনী ইস্রাঈলের ১নং আয়াতের তাফসিরে ও ইবনে কাসিরের মতটিকেই সমর্থন করা হয়েছে। তাঁর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসুল সাঃ মেরাজের রাতে সিঁড়িতে করে আসমানে গিয়েছেন , কোন রফরফ বা বোরাকে করে নয় ।

👉জালালুদ্দিন সুয়ুতী রহঃ বলেছেন,
“বিশুদ্ধ মত যা সহীহ হাদিস থেকে স্থিরকৃত হয়েছে, ঊর্ধ্বগমন মিরাজ বা সিঁড়ি জাতীয় এক ধরণের বস্তুর মাধ্যমে হয়েছিল, বোরাকের মাধ্যমে নয়।

আল্লাহর কি সিঁড়ির এত অভাব পড়েছে, বা বিভিন্ন যানবাহনের এত অভাব পড়েছে যে , রাসূলকে একটি মহিলা মার্কা পাখা ওয়ালা ঘোড়া দিয়ে আসমানে নিতে হবে?? মূলত এমন কোন বিষয় নেই যেখানে ইহুদিরা ইসলামকে বিকৃত করেনি!!

👉অনেকেই বলে থাকেন যে সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আল্লাহর সাথে দেখা করেছেন। কিন্তু এই কথার কোন দলিল নাই। বরং হাদিসের দলিল অনুযায়ী এটি একটি মিথ্যা বানোয়াট কথা।।
বুখারী শরীফের মেরাজ অধ্যায়ে একটি হাদিসে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে যে, আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন, যে ব্যক্তি বলবে যে রাসূলের সাথে আল্লাহ দেখা করেছেন সাক্ষাত করেছেন সে আল্লাহর প্রতি অপবাদ দিল।
(বুখারী শরীফের মেরাজ অধ্যায় হাদীসটি দেখে নেওয়া যেতে পারে)
রাসূল সাঃ কে উপরে নিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো আল্লাহর নিদর্শনসমূহ স্বচক্ষে দেখানো যাতে তিনি উম্মতকে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারেন!!
আর এ সমস্ত কথাগুলো বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের হাদিস সমূহে এভাবেই বর্ণনা করা আছে।

সূরা বনী ইসরায়েলে প্রথম আয়াত দিয়ে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর রাত্রিকালীন ভ্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন। ইসরা অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ। রাসুলুল্লাহ সাঃ মেরাজ রাত্রিকালে হয়েছিল বলে এটিকে ইসরা বলা হয়।
বিশেষত বায়তুল্লাহ অর্থাৎ মসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয় ।
সূরা ইসরার অর্থাৎ বনি ইসরাইলের সেই আয়াতটি প্রথমেই বর্ণনা করা হয়েছে।

মেরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ জান্নাত-জাহান্নাম দেখানো হয়েছে।
সেখানে রাসূল সাঃ কে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি দেখানো হয়।
এ রাতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ ঘোষণা করা হয়।
এ রাতে আরো কিছু বিষয়ের সতর্কের তার ব্যাপারে বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। যেমন–
👉আল্লাহকে ছাড়া কারও ইবাদত করবে না,
👉 পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে,
👉নিকট স্বজনদের তাদের অধিকার দাও;
👉মিসকিনদের ও পথসন্তানদের (তাদের অধিকার দাও);
👉অপচয় করো না, অপচয়কারী শয়তানের ভাই,
👉কৃপণতা করো না,
👉সন্তানদের হত্যা করবে না,
👉 ব্যভিচারের নিকটেও যেও না,
👉 বিনা কারণে মানব হত্যা করো না,
👉 এতিমের সম্পদের কাছেও যেয়ো না,
👉 প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো,
👉মাপে পূর্ণ দাও,
👉 ওইসবের অনুসরণ করো না যাতে তোমার জ্ঞান নেই,
👉 পৃথিবীতে অহংকার করে চলাফেরা না করা । এ সবই মন্দ, তোমার রবের কাছে অপছন্দ।
আর এই সমস্ত বিষয়গুলো সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে সূরা বনী ইসরাইলের 22 থেকে 44 নম্বর আয়াত সমূহে যা তাফসীর থেকে পড়ে নেওয়া যেতে পারে।

শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে বেশ কিছু প্রচলনসহ বিশেষ নামাজ ও রোজা রাখার প্রথাও প্রচলিত রয়েছে। শবে মেরাজ উপলক্ষে কোনো নামাজ বা রোজার বিধান কি আসলেই ইসলামে রয়েছে? বলে?

অনেককে শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হতে দেখা যায়। বহু নারীও সেই রাতে নামাজ আদায় করার পদ্ধতি কী জানতে চান। বহু মুসলমান এই রাত উপলক্ষে মেরাজের রোজা রাখতে চান বা রাখার বিধান জানতে চান। নামাজ আদায় করা ও রোজা রাখা অবশ্যই পুণ্যের কাজ। কিন্তু শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো নামাজ ও রোজার বিধান ইসলামি শরিয়তে নেই। এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) তৎপ্রণীত লাতায়েফ ও মাআরেফ গ্রন্থে বলেন, ‘রজব মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ কোনো নামাজ নেই। রজব মাসের প্রথম জুমায় সালাতুর রাগায়েব প্রসঙ্গে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।’

অধিকাংশ আলেমের মতে, শবে মেরাজ উপলক্ষে নামাজ বিদআত। পরবর্তী যুগের আলেমগণের মধ্যে যারা এই মত ব্যক্ত করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু ইসমাঈল আনসারি, আবু বকর সামআনি, আবুল ফযল ইবনে নাসির ও আবুল ফারায ইবনে জাওযি (রহ.)সহ আরও অনেক আলেম। শবে মিরাজ উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো নামাজ আল্লাহর রাসুলের হাদিসের মাধ্যমে অথবা সাহাবিদের আমলের মাধ্যমে অথবা তাবেয়িদের আমলের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। এ রাতের কোনো ইবাদত আল্লাহর রাসুলের কোনো হাদিসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। ভিন্ন কোনো নামাজ, বিশেষ কোনো নামাজ আদায় করার কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যান্য রাতের মতোই এ রাতে নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। সেটা স্বাভাবিক নিয়ানুযায়ী আগে যেভাবে আদায় করতেন সেভাবেই আদায় করবেন।

অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা শবে মেরাজ উপলক্ষে ১২ /২০/৪০/১০০ রাকাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করেন। ইসলামি শরিয়তেও শবে মেরাজের নামাজ বলে কোন নামাজ নেই।
নফল নামাজ পড়া নেকীর কাজ, কিন্তু শবে মেরাজ উপলক্ষে নফল নামাজ আদায়ের কোনো ভিত্তি ও প্রমাণ ইসলামে নেই। কাজেই শবে মেরাজের নামে নফল নামাজ আদায় করা এবং এর ব্যবস্থা প্রণয়ন করা মানে ইসলামি শরিয়তে নিজের পক্ষ থেকে কিছু সংযোজন করা। আর এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল বলেছেন, যে আমাদের ধর্মে এমন কিছু সংযুক্ত বা উদ্ভাবন করবে, যা তার শরিয়তের অংশ নয়, বরং তা প্রত্যাখ্যাত হবে। -সহিহ বোখারি।

আমাদের অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা শবে বরাত ও শবে কদরের সঙ্গে মিলিয়ে শবে মেরাজেও নফল রোজা রেখে থাকেন। একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য- নফল রোজা যখন ইচ্ছা তখন রাখা যায় কিন্তু কোনো উপলক্ষে নফল রোজা রাখতে হলে অবশ্যই আগে জেনে নিতে হবে, আমি বা আমরা যে উপলক্ষে নফল রোজা রাখছি শরিয়ত সেটাকে অনুমতি দিয়েছে কিনা।

শবে মেরাজ উপলক্ষে নফল রোজা রাখার কোনো বর্ণনা কোরআন-হাদিসের কোথাও নেই। আল্লাহর রাসুল ও তার অনুসারীরা এই দিনে বিশেষভাবে কোনো রোজা রেখেছেন এমনে কোনো বর্ণনা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এই দিনে শবে মেরাজ উপলক্ষে রোজা রাখা কোনো ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। সুতরাং শবে মেরাজ উপলক্ষে আলাদা বিশেষ নামাজ-রোজা আদায় করা থেকে বিরত থাকা উচিত
👉👉 এক কথায় বলতে গেলে সবে বেরাজ বা মেরাজের রাত্রিতে কিংবা দিনে কোন অতিরিক্ত আমল নেই। যদি অতিরিক্ত কিছু করা হয় তবে তা বেদআত বলি গণ্য হবে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে নফল এবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদত হল শেষ রাত্রিতে জেগে এবাদত করা কেননা ওই সময় আল্লাহ দোয়া কবুল করেন।
আর নফল রোজা গুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো
১/ আরাফার দিনের রোজা।
২/ আশুরার দুই রোজা।
৩/ শাওয়াল মাসের ছয় রোজা।
অর্থাৎ বছরে এই নয়টি রোজা যে ব্যক্তি রাখবেন তার পূর্বের এক বছরের এবং পরের এক বছরের রোজা রাখার সওয়াব আল্লাহ আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে দেবেন এবং পূর্বের এক বছরের ও পরের এক বছরের সকল গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন ইনশাআল্লাহ।
তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মাঝেমধ্যেই বৃহস্পতিবার এবং সোমবারে রোজা রাখতেন।
তাছাড়া মাঝেমধ্যে রাসূল সাঃ প্রতি মাসের অর্থাৎ চন্দ্র মাসের ১৩-১৪ এবং ১৫ তারিখে তিনটি রোজা রাখতেন।
আর এই রোজাগুলো বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
কিন্তু সবে মেরাজের কোন রোজার কথা কোথাও উল্লেখ নেই কিংবা কোন অতিরিক্ত আমল করার কথা উল্লেখ নেই।
অপরদিকে সবাই বরাত এর কোন আমল বা রোজার কথাও উল্লেখ নেই বরং যা আছে সব মিথ্যা ও বানোয়াট হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়েছে।।
আল্লাহ আমাদের সঠিক জিনিস সঠিকভাবে জেনে বিশুদ্ধভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন।
আল্লাহ আমাদের শিরক বিদআত কুফর এবং নেফাক এর মত ভয়ংকর গুনাহ থেকে হেফাজত করুন।।
আল্লাহ আমাদের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত সুস্থ সুন্দর থাকার ও নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।
আর আল্লাহ আমাদের অবশ্যই মৃত্যু দান করুন ঈমানের সহিত, সুস্থ শরীরে, এবাদতরত অবস্থায় এবং প্রিয়জনদের মাঝে।
আর আমাদেরকে এবং কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের বংশধরগণকে সঠিক ইসলামের উপর ইস্তেকামাত রাখুন।
ওমা তৌফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
ও আখেরি জামানা অনিল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা, আশহাদু আনল্লা ইলাহা ইল্লা আংতা আস্তাগ ফিরকা ওতুবূ ইলাইক।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।।।

হাট্টিমাটিম টিম মূলত একটি বাহান্ন লাইনের পূর্ণ ছড়া

হাট্টিমাটিম’ আসলে ৫২ লাইনের একটি ছড়া, যার শেষের চার লাইন আমাদের প্রায় সকলকেই শিখানো হয়েছিল আমাদের ছোটবেলায়।। বাঙালিরা ছোটবেলায় পড়া এই ছড়াটি কোনওদিনই ভুলবেন না হয়তো কেউ। কারণ এই জাতীয় উদ্ভট অজনক কথাবার্তা ও ঘটনার কথা সকলের মনে থাকে।। গরুর চারটি ঠ্যাং আছে ও একটি লেজ আছে এটি হয়তো ভুলে যেতে পারে কিন্তু হাট্টিমাটিম টিম নামক অদেখা অচেনা এক পাখি জাতীয় প্রাণী যার শিং আছে আবার ডিমও পারে এই প্রাণীর কথা কেউ বলবে না।।

কারণ কবিতার মাধ্যমে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে এমন এক ফালতু চিন্তা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে এই বিষয় নিয়ে সব বাচ্চারা চিন্তা করতে বাধ্য হত।

আমি নিজেই বহুদিন পর্যন্ত চিন্তা করেছি, শিংওয়ালা প্রাণীর ডিম পারে কিভাবে?? কারণ আমাদের চোখের সামনে কোন শিংওয়ালা প্রাণী ডিম পাড়তে দেখিনি।।
তাছাড়া ছোটবেলায় চিড়িয়াখানা গিয়েও খুঁজে দেখতাম কোথাও হাট্টিমাটিম টিম প্রাণীটি আছে কিনা!

🔰🔰শরীফ আর শরিফার কাহিনী সৃষ্টিকারী এবং এমন অসংখ্য মিথ্যা ভুল ও বানোয়াট কাহিনী দিয়ে কারিকুলাম সাজানো শিক্ষা কমিশন শুধু বর্তমানেই নয় বরং ইতিপূর্বেও হয়েছিল এবং এরাও একই পথ ধরেছে। কথায় আছে, “শিশুদের সাথে কখনোই মিথ্যা কথা বলতে হয় না”। অথচ শিশুদের প্রাথমিক ও প্রথম শিক্ষা শুরু হয় মিথ্যা কথার ছড়া দিয়ে!!
বাঙালি অবুঝ শিশুদের জন্য তৎকালীন কারিকুলাম তৈরি কারক ছড়াটি মোটেই মাত্র চার লাইনের নয়।
মোটামুটি কথা ফুটলেই বাঙালি শিশুদের যে কয়েকটি ছড়া কণ্ঠস্থ করানো হয়, তার মধ্যে হাট্টিমাটিম ছড়াটি অন্যতম।।
ছড়াটি ছিল—-
“হাট্টিমাটিম টিম’।
তারা মাঠে পাড়ে ডিম,
তাদের খাড়া দুটো শিং,
তারা হাট্টিমাটিম টিম”।
এর চেয়ে বেশি তথ্য শতকরা ৯৯ জন বাঙালির কাছে নেই!! সাহিত্য কবিতা ছড়া নিয়ে যারা গবেষণা করে শুধুমাত্র তারাই এই ব্যাপারটি সম্পর্কে জানে!!
মূলত ছড়াটি মোটেই ৪ লাইনের নয়।
এটি ছড়াকার #রোকনুজ্জামান_খানের লেখা একটি ৫২ লাইনের সম্পূর্ণ ছড়া।

🔰🔰রোকনুজ্জামান খান জন্মেছিলেন ১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল বর্তমান ফরিদপুর জেলায়। বাংলাদেশে তিনি ‘দাদাভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। তৎকালীন দেশের জনপ্রিয় দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদপত্রের শিশু-কিশোরদের বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তিনি বহু বছর।
তাঁর রচনার বেশিরভাগই শিশু-কিশোরদের জন্য। হাট্টিমাটিম সম্ভবত তাঁর রচনাগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
১৯৬২ সালে রচিত হয় ছড়াটি। ১৯৬৮ সালে #বাংলা_একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাঁকে। ১৯৯৯ সালে মারা যান রোকনুজ্জামান।
সেই 52 লাইনের আসল ছড়াটা এইরকম –

টাট্টুকে আজ আনতে দিলাম
বাজার থেকে শিম
মনের ভুলে আনল কিনে
মস্ত একটা ডিম।

বলল এটা ফ্রি পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।

সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো
দিচ্ছে ডিমে তা
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা।

উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাড়ি
আজব দু’পা বেড়ায় ঘুরে
গাঁয়ের যত বাড়ি।

সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হল দুই হাত
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে
যখন নামে রাত।

উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে
করে ঘরের কাম
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।

চোখ না থাকায় এ দুর্গতি
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলায়
ঘর করে বোঝাই।

বাসন মেজে সামলে রাখে
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে
কাণ্ড দেখে টাট্টু বাড়ি
নিজের মাথায় মারে।

শিঙের দেখা মিলল ডিমে
মাস খানিকের মাঝে
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসলো বিচার সাঁঝে।

গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে
বলল বিচার শেষ
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না
তবেই হবে বেশ।

মনের দুখে ঘর ছেড়ে ডিম
চলল একা হেঁটে
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেলো হায় ফেটে।

গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব;
সবাই ভয়ে হিম
ডিম ফেটে যা বের হল তা
হাট্টিমাটিম টিম।

হাট্টিমাটিম টিম-
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।

🔰🔰 পোস্টমর্টেমঃ একথা সর্বজন বিদিত যে, রোকনুজ্জামান খান একজন জনপ্রিয় ছড়াকার ,সাহিত্যিক, ও সাংবাদিক ছিলেন।
কেউ আকাশচুম্বী জনপ্রিয় হয়ে গেলেই তিনি অনুসরণীয় আদর্শ হয়ে যান না। একজন মুসলিম হিসাবে রোকনুজ্জামান খানের উচিত হয়নি মিথ্যা কথা দিয়ে সাজানো কবিতা লিখে বাচ্চাদেরকে উপহার দেওয়া। তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন এবং মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন।।
মুসলিম অর্থ আত্মসমর্পণকারী এবং মুসলিমের প্রথম ও প্রধান কাজ হল সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া।।
সেখানে তিনি প্রথমেই বাচ্চাদেরকে অর্থাৎ মুখে কথা ফোটার পর বাচ্চাদেরকে যে কথা শিক্ষা দেওয়া হবে সেটি তিনি সাজিয়েছেন শুধু মিথ্যা নয় বরং উদ্ভট অজানা এক জন্তুর নামে যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিল না, নাই, এবং কোনদিন হবে না।
এটি উনার ভুল ছিল না বরং রীতিমতো একটি অন্যায় কর্ম। কেননা মানুষকে বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে মিসগাইড করা একটি বড় রকমের ক্রাইম।।
আর একজন মুসলিমের জন্য তো সেটি হল বিরাট বড় একটি অন্যায় যার শাস্তি জাহান্নাম।।।
দুনিয়াতে এত সুন্দর সুন্দর ও আজব প্রাণী থাকতে এবং এত নবী-রাসূল ও সৎ লোক থাকা অবস্থায় একটি উদ্ভট প্রাণীর ইমেজ উপস্থাপন করে কবিতা লিখতে হবে কেন???
ইবলিশ যখন মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং মানুষ যখন নবী-রাসূলদের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের মন মস্তিষ্ক অনুযায়ী চলতে থাকে তখন মানুষের মগজ থেকে এই জাতীয় ফালতু কথা বের হয়।।।
শয়তানের কাজ হল মানুষের সামনে খারাপ জিনিস গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা।। এবং এভাবেই সে মানুষকে বিপথগামী করে।।
শয়তান মূলত দুই প্রকার।
একটি হলো “জ্বীন শয়তান” এবং দ্বিতীয় টি হল “মানুষ শয়তান”।
এজন্যই আল্লাহ সূরা নাসে উভয় প্রকার শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট পানা বা আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।
“মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস” অর্থাৎ (আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই) মানুষ শয়তান এবং জিন শয়তান থেকে।
সত্য জনপ্রিয়তার মানদন্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় না বরং একই সাথে একটি বিশাল দল বা জামাত কিংবা একটি দেশের পুরো লোক মিথ্যাবাদী থাকতে পারে এবং মিথ্যার অনুসারী হতে পারে।।
তৎকালীন ইরাকের #নিমরদ বা #নমরুদের পুরো দেশের সব লোক ছিল মিথ্যাবাদী শুধু ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ছাড়া। অবশেষে তিনি হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মিশরের পুরো ফেরাউন কওমের সবাই ছিল মিথ্যাবাদী এবং সেখান থেকে একমাত্র সত্যবাদী মূসা আলাইহিস সালাম হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

অতএব কোন একজন কবি বা সাহিত্যিক জনপ্রিয় হলেই তিনি ভালো হয়ে যাবেন, কিংবা সত্যবাদী হয়ে যাবেন, অথবা তিনি অনুসরণযোগ্য হয়ে যাবেন, এমনটি চিন্তা করা বোকামি।
তাই আমাদের উচিত অর্থাৎ প্রত্যেকের উচিত সত্যের সাক্ষ্যদানকারী হয়ে যাওয়া, সত্যকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করা, এবং সকল প্রকার মিথ্যাকে চিহ্নিত করে তার বিরোধিতা করা।
কেননা মিথ্যার ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকলে মিথ্যা ডালপালা প্রসারিত করে সমাজকে কোনো সুখি করে ফেলে।।
যেমন এই মিথ্যা কবিতাটি সেই শৈশবে অর্থাৎ শিশুকালেই আমাদের মন মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়ার ফলে আমাদের শিশু মেধার অপচয় হয়েছে ব্যাপক হারে এবং একটি ফালতু প্রাণীকে নিয়ে কোটি কোটি শিশুর শৈশব কেটেছে অহেতুক চিন্তা ভাবনায়।
আর এর জন্য দায়ী এই রোকনুজ্জামান খানের মতো মিথ্যা সাক্ষ্য দানকারী এবং উদ্ভট ও মিথ্যা প্রচারকারী কবিগণ।
কাব্য শাশ্বত সুন্দর।
একটি কবিতা দিয়ে মনের ভাব সংক্ষিপ্ত আকারে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা যায়।
ছোট্ট একটি কবিতার মাধ্যমে বিশাল একটি ইতিহাস তুলে ধরা যায়।
কিন্তু একটি মিথ্যা কবিতা বা ছড়ার মাধ্যমে পুরো একটি জাতিকে বিপথগামী করে দেওয়া যায়।
আল্লাহ আমাদের সঠিক জিনিস সঠিকভাবে বুঝার তৌফিক দান করুন আমিন।

👉👉অনেকেই বলেন,””কাবার ওপর দিয়ে_প্লেন,পাখি ওড়ে না””👉👉কারণ কাবার ওপর দিয়ে উড়লে প্লেনে আগুন লেগে যায় ও পাখি পড়ে যায় ।আসলেই কি তাই⁉️👉👉কাবার উপর দিয়ে প্লেন বা পাখি উড়েনা এইটা একটা পুরো ভুল কথা । এটি কিছু মূর্খ কাঠ মোল্লা ও পীরদের  বানানো একটা মিথ্যা মাত্র ।কাবার উপর দিয়ে পাখি বিশেষ করে প্রচুর কবুতর উড়ে । কাবার ছাদে  কবুতর পায়খানাও করে । কাবা ও বার বার ধ্বংস হয়েছে, বন্যাতে ডুবেছে, ইমাম মাহদী দাবিদার শিয়াদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়েছে, আবার পরে তা নির্মান করা হয়েছে ।আর কাবার ওপর দিয়ে প্লেন না ওড়ার কারণ হলো  মক্কার আকাশ “#নো_ফ্লাই_জোন”। তাছাড়া অন্য আর কোনো কারণ নেই। যেহেতু কাবা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং কাবায়  অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ তাই এর আকাশ সীমানাতেও যেনো কেউ প্রবেশ না করে তাই মক্কার আকাশকে নো ফ্লাই জোন হিসেবে রাখা হয়েছে।তাছাড়া কাবায় সারাক্ষণ লক্ষ লক্ষ মুসলীম তওয়াফ করে । নিরাপত্তার বিষয়টি এখানে প্রধান । যে কোন সময় যে কোন বদমাশ লোক বিমান নিয়ে গিয়ে একটি কুকর্ম করতে পারে । “নো ফ্লাই জোন” হওয়াতে তা সহজজে সম্ভব নয় ।কাবার উপর দিয়ে সৌদি নিরাপত্তাবাহিনীর হেলিকপ্টার প্রায়ই চলাচল করে।মূর্খতা বশত বাংলাদেশের একদল বিশেষ করে কওমী শিক্ষিত মোল্লা কাবাকে এমনভাবে দেখায়  যে সেটা উপাসনার একটি বস্তু! বস্তুতঃ কাবা আল্লাহর হুকুমে ইব্রাহিম আঃ এর দ্বারা নির্মিত একটি ইবাদত গৃহ বা আল্লাহর ঘর । কাবার দিকে ফিরে নামাজ পড়ার জন্য আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তাই আমরা ঐ দিকে ফিরে নামাজ পড়ি এবং আজীবন ইনশাল্লাহ পড়ব । প্রতিবছর কাবা পরিষ্কার করা বা গিলাফ পরিবর্তনের সময় কাবার ছাদে ওঠে অনেকেই। এমন তো না যে কাবার ওপরে ওঠা নিষেধ!#আল্লাহর_ঘর পবিত্র কাবা ছাড়াও  পৃথিবীতে ১০/১২টি #No_Fly_Zoon ” #নো_ফ্লাই_জোন” আছে ।পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে এমন নিষেধাজ্ঞা। সার্বিক নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষার্থে নেওয়া হয়েছে এমন ব্যবস্থা। কারণ এসব অঞ্চলে যদি কখনো কোনো কারণে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে বিমানের পাশাপাশি সেই অঞ্চলের এত বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে যা এককথায় অপূরণীয়। এর কয়েকটি হলো-

১// #মক্কার_কাবাঃ
মুসলমানদের তীর্থ স্থান মক্কার উপর দিয়ে আপনি কখনও কোনো যাত্রীবাহী বিমান উড়ে যেতে দেখবেন না। কেন সেখান দিয়ে কোনো বিমান ওড়ে না তার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু এর অধিকাংশেরই কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই। প্রথম যে ব্যাখ্যাটি পাওয়া যায়, সেটি হলো, মক্কার ভূ চৌম্বকত্ব এতই প্রবল যে, সেখান দিয়ে কোনো বিমান উড়ে গেলে বিমানের কম্পাস বিচ্ছিন্ন আচরণ করতে থাকে। তাই বিমান চালকের পক্ষে দিক ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আরেকটি ব্যাখ্যামতে, মক্কার অঞ্চলে পৃথিবীর অভিকর্ষজ টান বেশি হওয়ায় বিমানের পক্ষে সেখানে নিজের উচ্চতা বজায় রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এগুলো যে খুব একটা প্রমাণিত কথা, তেমনটা নয়। বরং হজের মৌসুমে এবং অন্যান্য সময়ে নিরাপত্তার জন্য মক্কার আকাশে হেলিকপ্টারগুলোকে স্বাচ্ছন্দ্যেই উড়তে দেখা যায়।
তবে মূল কথা হলো, মক্কায় বিমান ওঠা-নামা করার জন্য কোনো বিমানবন্দর নেই। যদিও সেখানে প্রতি বছর শতকোটি মুসল্লি জমায়েত হয়, তবুও কাবার সার্বিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় রেখে সেখানে কোনো বিমানবন্দর তৈরি করা হয়নি। যেহেতু মক্কায় কোনো বিমানবন্দর নেই, তাই মক্কার আকাশে বিমান উড়তে দেখা যাবে, এমন আশা করাও উচিত নয়।

২// #আগ্রার_তাজমহলঃ

১৯৮৩ সালে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া এই নির্মাণশৈলী তৈরি করতে সময় লেগেছিলো পুরো ২১ বছর। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে ১৬৩২ থেকে ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দ সময়ব্যাপী যমুনার পাড়ে নির্মাণ করেন এই ভালোবাসার নিদর্শন। বর্তমানে এই নিদর্শনকে টিকিয়ে রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে ভারত সরকার। তাজমহলের অঞ্চলটি এতটাই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে যে, সেখানকার ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করতে পারে না। যান্ত্রিকতার সাথে মিশে গিয়ে মূল তাজ মহলের যাতে কোনোপ্রকার ক্ষতি না হয়, সেজন্য এ ব্যবস্থা। তার চেয়েও বড় কথা, ২০০৬ সাল থেকে তাজমহলের ওপর দিয়ে বিমান চলাচলও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আগ্রায় কোনো প্রকার বিমান দুর্ঘটনা হলে, তাজমহল এবং অন্যান্য স্থাপনার ওপর তার সরাসরি প্রভাব পড়বে। সেরকম কোনো সম্ভাবনা যাতে না থাকে, সেজন্য আগ্রার ওপর দিয়ে বিমান চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

৩// #তিব্বতঃ
দেশটির অধিকাংশ অঞ্চল প্রাকৃতিক কারণেই নো ফ্লাই জোন হিসেবে পরিচিত। বিশাল আকৃতির সব পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এই দেশটি বিমান ওঠানামা করার জন্য বেশ কঠিন একটি জায়গা। বিমান চালককে প্রায়ই বিমানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। তিব্বতের পাহাড়-পর্বতগুলোর গড় উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ১৬,০০০ ফুট ওপরে। এই উচ্চতা দিয়ে অধিকাংশ বাণিজ্যিক বিমান স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারলেও, জরুরি অবতরণ করতে হলে পাহাড়ের উপর তো আর বিমান নামানো সম্ভব না। এখানে বিমান চলাচলের চেয়েও যাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়াটা বেশি জরুরি। এজন্য পুরো তিব্বতে পাঁচটি বিমানবন্দরের অঞ্চল বাদে আর কোথাও বিমান চলাচল করতে দেখা যায় না।

৩// #বাকিংহাম_প্যালেসঃ
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হলো এই বাকিংহাম প্যালেস। রানীর বাসভবন এবং তার সকল সরকারি কর্মকর্তার অফিস এই এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাকিংহাম প্যালেস থেকেই পরিচালিত হয়। তাই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই অঞ্চলে যাতায়াত করে থাকেন। এই অঞ্চলটি এতটাই নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয় যে, ব্রিটেনের সর্বসাধারণের জন্যও এখানের বেশক’টি সড়ক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেবল বিশেষ দিনগুলোতে এই সড়কগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এই অঞ্চলের গুরুত্ব বিবেচনা করে সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা করা এবং সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে এখান দিয়ে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।

৩// #পেরুর_মাচু_পিচুঃ
ইনকা সভ্যতার সকল অবশিষ্ট ভবন ও নির্মাণশৈলী নিয়ে গভীর জঙ্গল এবং পাহাড়-পর্বতের মাঝে গড়ে ওঠা মাচু পিচু হলো পেরুর অন্যতম সংরক্ষিত অঞ্চল। ইউনেস্কো এই অঞ্চলকে বিশেষ স্বীকৃতি দেয়ার পর ২০০৬ সাল থেকে পেরু সরকার এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে সকল প্রকার বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কারণ এই অঞ্চলটিতে বর্তমানে আধুনিক সভ্যতার তেমন কোনো ছোঁয়া নেই বললেই চলে। অত্যন্ত সুরক্ষিত এই অঞ্চলটিতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় সকল জীব-জন্তুর বসবাস। যদি কখনও এই অঞ্চলে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে তা সরাসরি ইনকা সভ্যতার অবশিষ্ট ভবনগুলোতে আঘাত করবে। এর ফলে সভ্যতার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যাবে। আর যদি জঙ্গলে বিমান আছড়ে পড়ে, তাহলে পশু-পাখির বসবাসের নীরব পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। আর সবচেয়ে খারাপ হতে পারে জঙ্গলে দাবানল লেগে যাওয়া। এসকল বিষয় বিবেচনা করে পেরু সরকার মাচু পিচু অঞ্চলের উপর দিয়ে বিমান চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

৪// #প্যারিসঃ
আপনি যদি কখনো প্যারিসে ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে প্রশ্ন করতেই পারেন, সেখানে তো বিমান উড়তে দেখেছেন। তাহলে এই শহরের নাম এই তালিকায় কেন? একটা শহরে চারটি বিমানবন্দর থাকার পরেও কেন সেখানে বিমান উড়তে পারে না? এখানে একটি শর্ত আছে। প্যারিসে কোনো বিমান উড়তে হলে সেগুলোকে ৬,৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে উড়তে হবে। এর নিচে কোনো বিমান সেখানে উড়তে পারবে না। এজন্য প্যারিসে সাধারণত কোনো বিমান দেখা যায় না।

৫// #কিউবাঃ
কিউবার ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। এমন নয় যে এখানে নিরাপদ অবতরণ নিয়ে কোনো সমস্যা আছে কিংবা কোনো সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষার্থে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিউবার ভেতরে আঞ্চলিক বিমানগুলো সহজেই যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু বিশেষ নিয়ম হলো আন্তর্জাতিক বিমানগুলোর বেলায়। আপনি যদি বাণিজ্যিক বিমান নিয়ে কিউবাতে অবতরণের জন্য প্রবেশ করেন, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু ভিনদেশী কোনো বিমান যদি কিউবার আকাশসীমা ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তাদের নিতে হবে কিউবা সরকারের বিশেষ অনুমতি। অবশ্যই আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় আপনি কিউবা সরকারের কাছে আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন না। কিউবার আকাশসীমা যদি আপনার ব্যবহার করার দরকারই পড়ে, তাহলে আগে থেকেই সেখানকার সরকারের অনুমতি নিতে হবে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই আবেদন নাকচ হয়ে ফিরে আসে।

এই সকল অঞ্চলের পাশাপাশি আরও অনেক অঞ্চলেই ভৌগোলিক কিংবা রাজনৈতিক কারণে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই ১১টি অঞ্চলে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ।

আবু_দাহদাহ (রাঃ)-এর দানশীলতা

মদীনা ছিল খেজুর বৃক্ষ সমৃদ্ধ অঞ্চল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হিজরতের পর একে ‘মদীনাতুন্নবী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মদীনার চতুষ্পার্শেব খেজুর বাগান ও গাছের এত আধিক্য ছিল যে, বৃষ্টির কারণে কোন খেজুর নিচে পড়লে তা নির্ণয় করা কঠিন হত যে, এটা কোন গাছের খেজুর। এরূপ বাগানকে কেন্দ্র করে ছাহাবীগণের মধ্যেও কোন কোন সময় বিতর্কের সৃষ্টি হ’ত। সমাধানের জন্য তাঁরা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে যেতেন এবং সঠিক সমাধান পেতেন। এক্ষেত্রে ছাহাবীগণ তাঁকে সহযোগিতা করতেন। আবু দাহদাহ (রাঃ) তার ছয়শ’ খেজুর গাছের বাগান দান কারার মাধ্যমে এরূপ এক বিবাদের সমাধান করেছিলেন।

আবু_দাহদাহ (রাঃ)-এর পরিচয় : তাঁর আসল নাম ছাবেত ইবনু দাহদাহ। তবে তিনি আবু দাহদাহ নামে সমধিক পরিচিত। তিনি একজন উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ছাহাবী ছিলেন। মদীনায় মুছ‘আব ইবনু ওমায়ের (রাঃ)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর দানশীলতার কথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি ওহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। ওয়াক্বেদী আব্দুল্লাহ ইবনু আমের থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ওহুদের যুদ্ধের দিন যখন মুসলমানেরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদে দিশেহারা হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল, তখন আবু দাহদাহ (রাঃ) বলেছিলেন, বলে ওঠেন,

يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ،إنْ كَانَ مُحَمّدٌ قَدْ قُتِلَ فَإِنّ اللهَ حَيّ لَا يَمُوتُ! فَقَاتِلُوا عَنْ دِينِكُمْ، فَإِنّ اللهَ مُظْهِرُكُمْ وَنَاصِرُكُمْ

‘হে আনছারগণ! যদি মুহাম্মাদ নিহত হয়ে থাকেন, তবে আল্লাহ জীবিত আছেন, তিনি মরেন না। তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপরে যুদ্ধ করো। কেননা আল্লাহ তোমাদের বিজয় দানকারী ও সাহায্যকারী’। … তার একথা শুনে একদল আনছার উঠে দাঁড়াল এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে ছাবিত সরাসরি খালিদ ইবনে ওয়ালীদের বাহিনীর উপরে হামলা চালালেন, পরে খালিদের বর্শার আঘাতে তিনি শহীদ হন। সঙ্গীরাও শহীদ হয়ে যান (ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ১/৬১৬; ওয়াক্বেদী, মাগাযী ১/২৮১; আর-রাহীকুল মাখতূম ১/২৪১)

দানশীলতারঅনুপমদৃষ্টান্ত : মদীনার বাগান সমূহের মধ্যে এক ইয়াতীম বাচ্চার একটি বাগান ছিল। তার বাগানের সাথে অন্য এক লোকেরও একটি বাগান ছিল। যার নাম ছিল আবু লুবাবা। ইয়াতীম চিন্তা করল, আমি জমির সীমানা বরাবর প্রাচীর নির্মাণ করে বাগানটি আদালা করে নেব। যাতে প্রত্যেকের অংশ পৃথক হয়ে যায়। যখন প্রাচীর দিতে শুরু করল তখন দেখা গেল তার প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ সীমানার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। যার কারণে প্রাচীরটি সোজা হচ্ছে না। তাই সে তার প্রতিবেশীর নিকট গিয়ে বলল, আপনার বাগানে অনেক খেজুর গাছ। আমি একটি প্রাচীর দিতে চাচ্ছি, কিন্তু আপনার একটি খেজুর গাছের কারণে প্রাচীরটি সোজা হচ্ছে না। ঐ গাছটি আমাকে দিয়ে দিন তাহ’লে আমার দেওয়ালটি সোজা হয়ে যাবে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমি খেজুর গাছটি দান করব না। ইয়াতীম ছেলেটি বলল, ভাই আপনার তো কোন ক্ষতি হবে না। হয় আপনি গাছটি দান করুন আর না হয় আমার কাছ থেকে এর মূল্য নিয়ে নিন। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি এর কোনটাই করব না। ইয়াতীম ছেলেটি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করল। প্রতিবেশীর অধিকারের কথা বলল। কিন্তু সে ছিল দুনিয়াপ্রেমিক। তাই না সে ইয়াতীমের অসহায়ত্বের প্রতি লক্ষ্য করল, আর না প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি। ইয়াতীম বলল, তাহ’লে কি আমি প্রাচীর দিব না এবং তা সোজা করব না? প্রতিবেশী লোকটি বলল, এটা তোমার ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই। ইয়াতীম যখন তার কথায় নিরাশ হ’ল তখন সে চিন্তা করল যে, এমন একজন ব্যক্তি আছেন যদি তিনি সুপারিশ করেন, তাহ’লে হয়ত আমার কাজ হ’তে পারে। একথা মনে করে সে মসজিদে নববীর দিকে রওয়ানা হ’ল।

ঐ ইয়াতীম মসজিদে নববীতে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার বাগান অমুক ব্যক্তির বাগানের সাথে মিশে আছে। আমি এর মাঝে প্রাচীর দিতে চাচ্ছি। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত প্রাচীর সোজা হচ্ছে না যতক্ষণ না আমার প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ আমার দখলে আসবে। আমি তার মালিককে বলেছি যে, এটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও। আমি তাকে যথেষ্ট বুঝানোরও চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে তা অস্বীকার করছে। হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার জন্য তার নিকট একটু সুপারিশ করুন যাতে সে আমাকে ঐ খেজুর গাছটি দিয়ে দেয়। তিনি বললেন, যাও! তাকে ডেকে নিয়ে এসো।

ঐ ইয়াতীম তার নিকট গিয়ে বলল, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আপনাকে ডেকেছেন। সে মসজিদে নববীতে আসল। নবী করীম (ছাঃ) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, সে বেড়া দিয়ে তোমার বাগান থেকে তার বাগান পৃথক করতে চায়। তোমার একটি খেজুর গাছের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তুমি তোমার ভাইকে ঐ খেজুর গাছটি দিতে নাকি অস্বীকার করেছ?

লোকটি বলল, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, গাছটি তোমার ভাইকে দিয়ে দাও।

সে বলল, আমি দিব না। তিনি তাকে কয়েকবার বলার পরেও যখন রাযী হ’ল না তখন তিনি তাকে বললেন, তোমার ভাইকে ঐ খেজুর গাছটি দিয়ে দাও। আমি তোমার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছের যিম্মাদার হব। ঐ লোকটি এ কথা শুনেও বলল, না আমি তা দিব না। তিনি তখন চুপ হয়ে গেলেন। এর চেয়ে বেশী তিনি তাকে আর কী বলতে পারেন!

ছাহাবীগণ নিশ্চুপ থেকে কথাবার্তা শুনছিলেন। উপস্থিত লোকদের মধ্যে আবু দাহদাহ (রাঃ)ও ছিলেন। মদীনায় তার খুব সুন্দর একটি বাগান ছিল। সেখানে ৬০০ খেজুর গাছ ছিল। সুস্বাদু খেজুরের কারণে বাগানটি খুবই প্রসিদ্ধ ছিল। এর খেজুর ছিল খুব উন্নতমানের এবং বাজারে তার যথেষ্ট চাহিদাও ছিল। মদীনার বড় বড় ব্যবসায়ী এ কামনা করত যদি এ বাগানটি আমার হ’ত। আবু দাহদাহ (রাঃ) ঐ বাগানের মধ্যে খুব সুন্দর করে স্বীয় ঘর নির্মাণ করেছিলেন। স্বপরিবারে তিনি সেখানে বসবাস করতেন। মিষ্টি পানির কূপ এ বাগানের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করেছিল। আবু দাহদাহ (রাঃ) যখন রাসূল (ছাঃ)-এর কথা শুনছিলেন তখন মনে মনে ভাবছিলেন যে, এ দুনিয়া কি? আজ নয় তো কাল মৃত্যুবরণ করতেই হবে। এরপর শুরু হবে চিরস্থায়ী জীবন। যা স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে, না দুঃখে ভরপুর হবে তা কে জানে? যদি জান্নাতে একটি খেজুর গাছ পাওয়া যায়, তাহ’লে আর কি চাই? সামনে এসে আবু দাহদাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যে কথা আপনি বললেন, এটা কি শুধু তার জন্যই খাছ? আমি যদি ঐ ব্যক্তির কাছ থেকে ঐ খেজুর গাছটি ক্রয় করে এ ইয়াতীমকে দিয়ে দেই তাহ’লে আমিও কি জান্নাতে খেজুর গাছের মালিক হব?

রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তোমার জন্যও জান্নাতে খেজুর গাছ থাকবে। আবু দাহদাহ (রাঃ) ভাবতে লাগলেন, এমন কি সম্পদ আছে যা আমি ঐ ব্যক্তিকে দিয়ে খেজুর গাছটি ক্রয় করব। তিনি ভেবে দেখলেন, মদীনায় তার একটি বাগান আছে। যেখানে ছয়শ’ খেজুর গাছ, পানির কূপ ও একটি বাড়ি আছে। এগুলোর বিনিময়ে ঐ গাছটি কিনে ইয়াতীমকে দিয়ে দিব। তিনি ঐ ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বললেন, শোন! তুমি আমার বাগান সম্পর্কে অবগত আছ, যেখানে ৬০০ খেজুর গাছ আছে, সাথে ঘর ও কুয়াও আছে? সে বলল, মদীনাতে এমন কে আছে যে আপনার বাগান সম্পর্কে জানে না? তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি আমার ঐ সম্পূর্ণ বাগান গ্রহণ করে তোমার একটি খেজুর গাছ আমাকে দিয়ে দাও।

ঐ ব্যক্তি তা বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে আবু দাহদাহ (রাঃ)-এর দিকে ফিরে তাকাল। অতঃপর লোকজনের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা লক্ষ্য কর, আবু দাহদাহ কি বলছে? লোকজন যখন তার কথার ব্যাপারে সাক্ষী হ’ল, তখন সে বলল, হ্যাঁ আমি তোমার খেজুর গাছের বাগান গ্রহণ করলাম এবং ঐ খেজুর গাছটি তোমাকে দিয়ে দিলাম। যখন তিনি ঐ খেজুর গাছের মালিক হয়ে গেলেন তখন ঐ ইয়াতীমকে বললেন, এখন থেকে ঐ খেজুর গাছটি তোমার। আমি তা তোমাকে উপহার হিসাবে দিলাম। এখন তোমার দেয়াল সোজা করতে আর কোন বাঁধা নেই। এরপর আবু দাহদাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এখন আমি কি জান্নাতে খেজুর গাছের মালিক হ’লাম? তিনি বলেন,

كَمْ مِنْ عِذْقِ رَدَاحٍ لِأَبِي الدَّحْدَاحِ فِي الْجَنَّةِ

‘আবু দাহদাহর জন্য জান্নাতে এখন কত বিশাল বিশাল খেজুরের বাগান অপেক্ষা করছে’!

বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, এ শব্দটি তিনি এক, দুই বা তিনবার বলেননি; বরং খুশী হয়ে বারংবার বলেছেন।

শেষে আবু দাহদাহ (রাঃ) সেখান থেকে বের হ’লেন। জান্নাতে বাগানের সুসংবাদ পেয়ে নিজের বর্তমান বাগানের পথে রওয়ানা হ’লেন। মনে মনে বললেন, নিজের ব্যবহারিক কিছু কাপড় এবং কিছু যরূরী জিনিসপত্র তো ওখান থেকে নিতে হবে। তিনি বাগানের দরজায় এসে ভিতরে বাচ্চাদের কণ্ঠ শুনতে পেলেন। স্ত্রী তখন ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিল আর বাচ্চারা খেলাধূলা করছিল। ভিতরে গিয়ে তিনি স্ত্রীকে সংবাদ দিতে চাইলেন। কিন্তু তিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডাক দিলেন, হে উম্মে দাহদাহ!

উম্মে দাহদাহ অত্যন্ত অবাক হ’লেন যে, আজকে আবু দাহদাহ বাগানের বাইরে দরজায় কেন দাঁড়িয়ে আছেন? ভিতরে আসছেন না কেন? আবারও আওয়াজ আসল! উম্মে দাহদাহ! উত্তর আসল, আমি উপস্থিত হে আবু দাহদাহ! বাচ্চাদেরকে নিয়ে এ বাগান থেকে বের হয়ে আস। ঊম্মে দাহদাহ (রাঃ) বললেন, আমি বাগান হ’তে বের হয়ে আসব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি এ বাগান বিক্রি করে দিয়েছি। উম্মে দাহদাহ (রাঃ) বললেন, আপনি কার নিকট এটা বিক্রি করেছেন? কে কত দাম দিয়ে এটা ক্রয় করেছে? আবু দাহদাহ (রাঃ) বললেন, আমি জান্নাতে একটি খেজুর বাগানের বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিয়েছি। উম্মে দাহদাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহু আকবার। হে আবু দাহদাহ (রাঃ)! আপনি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা করেছেন। জান্নাতের একটি বৃক্ষ, যার নিচে অশ্বারোহী একশত বছর পর্যন্ত চলার পরেও তার ছায়া শেষ হবে না (বুখারী হা/৩২৫১)। কী সৌভাগ্য আমাদের যে, আমরা জান্নাতে এমন একটি গাছ পাব। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৫৭৯১-৯৩; হাকেম হা/২১৯৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯৬৪; মু‘জামুল কাবীর হা/৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৪৫১)।

উপসংহার :

আবু দাহদাহ এবং উম্মে দাহদাহ (রাঃ)-এর এ দান কোন সাধারণ দান ছিল না। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর আশা পূরণের জন্য ও একজন ইয়াতীমকে সহায়তা করার জন্য নিজের সবচেয়ে মূল্যবান বস্ত্ত তারা আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছিলেন। স্বীয় বাসস্থান, মূল্যবান বাগান, কূপ ছেড়ে দিয়ে মানব জাতির জন্য দানের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন। এটাই হল সত্যিকারের নবীপ্রেম। আবু দাহদাহ ও তাঁর পরিবারের প্রতি আল্লাহ অবিরত ধারায় রহমত বর্ষণ করুন! এবং আমাদেরকে অনুরূপ দানশীল হওয়ার তাওফীক দান করুন।-আমীন!

আবু_দাহদাহ (রাঃ)-এর দানশীলতা

মদীনা ছিল খেজুর বৃক্ষ সমৃদ্ধ অঞ্চল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হিজরতের পর একে ‘মদীনাতুন্নবী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মদীনার চতুষ্পার্শেব খেজুর বাগান ও গাছের এত আধিক্য ছিল যে, বৃষ্টির কারণে কোন খেজুর নিচে পড়লে তা নির্ণয় করা কঠিন হত যে, এটা কোন গাছের খেজুর। এরূপ বাগানকে কেন্দ্র করে ছাহাবীগণের মধ্যেও কোন কোন সময় বিতর্কের সৃষ্টি হ’ত। সমাধানের জন্য তাঁরা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে যেতেন এবং সঠিক সমাধান পেতেন। এক্ষেত্রে ছাহাবীগণ তাঁকে সহযোগিতা করতেন। আবু দাহদাহ (রাঃ) তার ছয়শ’ খেজুর গাছের বাগান দান কারার মাধ্যমে এরূপ এক বিবাদের সমাধান করেছিলেন।

আবু_দাহদাহ (রাঃ)-এর পরিচয় : তাঁর আসল নাম ছাবেত ইবনু দাহদাহ। তবে তিনি আবু দাহদাহ নামে সমধিক পরিচিত। তিনি একজন উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ছাহাবী ছিলেন। মদীনায় মুছ‘আব ইবনু ওমায়ের (রাঃ)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর দানশীলতার কথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি ওহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। ওয়াক্বেদী আব্দুল্লাহ ইবনু আমের থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ওহুদের যুদ্ধের দিন যখন মুসলমানেরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদে দিশেহারা হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল, তখন আবু দাহদাহ (রাঃ) বলেছিলেন, বলে ওঠেন,

يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ،إنْ كَانَ مُحَمّدٌ قَدْ قُتِلَ فَإِنّ اللهَ حَيّ لَا يَمُوتُ! فَقَاتِلُوا عَنْ دِينِكُمْ، فَإِنّ اللهَ مُظْهِرُكُمْ وَنَاصِرُكُمْ

‘হে আনছারগণ! যদি মুহাম্মাদ নিহত হয়ে থাকেন, তবে আল্লাহ জীবিত আছেন, তিনি মরেন না। তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপরে যুদ্ধ করো। কেননা আল্লাহ তোমাদের বিজয় দানকারী ও সাহায্যকারী’। … তার একথা শুনে একদল আনছার উঠে দাঁড়াল এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে ছাবিত সরাসরি খালিদ ইবনে ওয়ালীদের বাহিনীর উপরে হামলা চালালেন, পরে খালিদের বর্শার আঘাতে তিনি শহীদ হন। সঙ্গীরাও শহীদ হয়ে যান (ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ১/৬১৬; ওয়াক্বেদী, মাগাযী ১/২৮১; আর-রাহীকুল মাখতূম ১/২৪১)

দানশীলতারঅনুপমদৃষ্টান্ত : মদীনার বাগান সমূহের মধ্যে এক ইয়াতীম বাচ্চার একটি বাগান ছিল। তার বাগানের সাথে অন্য এক লোকেরও একটি বাগান ছিল। যার নাম ছিল আবু লুবাবা। ইয়াতীম চিন্তা করল, আমি জমির সীমানা বরাবর প্রাচীর নির্মাণ করে বাগানটি আদালা করে নেব। যাতে প্রত্যেকের অংশ পৃথক হয়ে যায়। যখন প্রাচীর দিতে শুরু করল তখন দেখা গেল তার প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ সীমানার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। যার কারণে প্রাচীরটি সোজা হচ্ছে না। তাই সে তার প্রতিবেশীর নিকট গিয়ে বলল, আপনার বাগানে অনেক খেজুর গাছ। আমি একটি প্রাচীর দিতে চাচ্ছি, কিন্তু আপনার একটি খেজুর গাছের কারণে প্রাচীরটি সোজা হচ্ছে না। ঐ গাছটি আমাকে দিয়ে দিন তাহ’লে আমার দেওয়ালটি সোজা হয়ে যাবে। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমি খেজুর গাছটি দান করব না। ইয়াতীম ছেলেটি বলল, ভাই আপনার তো কোন ক্ষতি হবে না। হয় আপনি গাছটি দান করুন আর না হয় আমার কাছ থেকে এর মূল্য নিয়ে নিন। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি এর কোনটাই করব না। ইয়াতীম ছেলেটি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করল। প্রতিবেশীর অধিকারের কথা বলল। কিন্তু সে ছিল দুনিয়াপ্রেমিক। তাই না সে ইয়াতীমের অসহায়ত্বের প্রতি লক্ষ্য করল, আর না প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি। ইয়াতীম বলল, তাহ’লে কি আমি প্রাচীর দিব না এবং তা সোজা করব না? প্রতিবেশী লোকটি বলল, এটা তোমার ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই। ইয়াতীম যখন তার কথায় নিরাশ হ’ল তখন সে চিন্তা করল যে, এমন একজন ব্যক্তি আছেন যদি তিনি সুপারিশ করেন, তাহ’লে হয়ত আমার কাজ হ’তে পারে। একথা মনে করে সে মসজিদে নববীর দিকে রওয়ানা হ’ল।

ঐ ইয়াতীম মসজিদে নববীতে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার বাগান অমুক ব্যক্তির বাগানের সাথে মিশে আছে। আমি এর মাঝে প্রাচীর দিতে চাচ্ছি। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত প্রাচীর সোজা হচ্ছে না যতক্ষণ না আমার প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ আমার দখলে আসবে। আমি তার মালিককে বলেছি যে, এটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও। আমি তাকে যথেষ্ট বুঝানোরও চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে তা অস্বীকার করছে। হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার জন্য তার নিকট একটু সুপারিশ করুন যাতে সে আমাকে ঐ খেজুর গাছটি দিয়ে দেয়। তিনি বললেন, যাও! তাকে ডেকে নিয়ে এসো।

ঐ ইয়াতীম তার নিকট গিয়ে বলল, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আপনাকে ডেকেছেন। সে মসজিদে নববীতে আসল। নবী করীম (ছাঃ) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, সে বেড়া দিয়ে তোমার বাগান থেকে তার বাগান পৃথক করতে চায়। তোমার একটি খেজুর গাছের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তুমি তোমার ভাইকে ঐ খেজুর গাছটি দিতে নাকি অস্বীকার করেছ?

লোকটি বলল, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, গাছটি তোমার ভাইকে দিয়ে দাও।

সে বলল, আমি দিব না। তিনি তাকে কয়েকবার বলার পরেও যখন রাযী হ’ল না তখন তিনি তাকে বললেন, তোমার ভাইকে ঐ খেজুর গাছটি দিয়ে দাও। আমি তোমার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছের যিম্মাদার হব। ঐ লোকটি এ কথা শুনেও বলল, না আমি তা দিব না। তিনি তখন চুপ হয়ে গেলেন। এর চেয়ে বেশী তিনি তাকে আর কী বলতে পারেন!

ছাহাবীগণ নিশ্চুপ থেকে কথাবার্তা শুনছিলেন। উপস্থিত লোকদের মধ্যে আবু দাহদাহ (রাঃ)ও ছিলেন। মদীনায় তার খুব সুন্দর একটি বাগান ছিল। সেখানে ৬০০ খেজুর গাছ ছিল। সুস্বাদু খেজুরের কারণে বাগানটি খুবই প্রসিদ্ধ ছিল। এর খেজুর ছিল খুব উন্নতমানের এবং বাজারে তার যথেষ্ট চাহিদাও ছিল। মদীনার বড় বড় ব্যবসায়ী এ কামনা করত যদি এ বাগানটি আমার হ’ত। আবু দাহদাহ (রাঃ) ঐ বাগানের মধ্যে খুব সুন্দর করে স্বীয় ঘর নির্মাণ করেছিলেন। স্বপরিবারে তিনি সেখানে বসবাস করতেন। মিষ্টি পানির কূপ এ বাগানের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করেছিল। আবু দাহদাহ (রাঃ) যখন রাসূল (ছাঃ)-এর কথা শুনছিলেন তখন মনে মনে ভাবছিলেন যে, এ দুনিয়া কি? আজ নয় তো কাল মৃত্যুবরণ করতেই হবে। এরপর শুরু হবে চিরস্থায়ী জীবন। যা স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে, না দুঃখে ভরপুর হবে তা কে জানে? যদি জান্নাতে একটি খেজুর গাছ পাওয়া যায়, তাহ’লে আর কি চাই? সামনে এসে আবু দাহদাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যে কথা আপনি বললেন, এটা কি শুধু তার জন্যই খাছ? আমি যদি ঐ ব্যক্তির কাছ থেকে ঐ খেজুর গাছটি ক্রয় করে এ ইয়াতীমকে দিয়ে দেই তাহ’লে আমিও কি জান্নাতে খেজুর গাছের মালিক হব?

রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তোমার জন্যও জান্নাতে খেজুর গাছ থাকবে। আবু দাহদাহ (রাঃ) ভাবতে লাগলেন, এমন কি সম্পদ আছে যা আমি ঐ ব্যক্তিকে দিয়ে খেজুর গাছটি ক্রয় করব। তিনি ভেবে দেখলেন, মদীনায় তার একটি বাগান আছে। যেখানে ছয়শ’ খেজুর গাছ, পানির কূপ ও একটি বাড়ি আছে। এগুলোর বিনিময়ে ঐ গাছটি কিনে ইয়াতীমকে দিয়ে দিব। তিনি ঐ ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বললেন, শোন! তুমি আমার বাগান সম্পর্কে অবগত আছ, যেখানে ৬০০ খেজুর গাছ আছে, সাথে ঘর ও কুয়াও আছে? সে বলল, মদীনাতে এমন কে আছে যে আপনার বাগান সম্পর্কে জানে না? তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি আমার ঐ সম্পূর্ণ বাগান গ্রহণ করে তোমার একটি খেজুর গাছ আমাকে দিয়ে দাও।

ঐ ব্যক্তি তা বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে আবু দাহদাহ (রাঃ)-এর দিকে ফিরে তাকাল। অতঃপর লোকজনের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা লক্ষ্য কর, আবু দাহদাহ কি বলছে? লোকজন যখন তার কথার ব্যাপারে সাক্ষী হ’ল, তখন সে বলল, হ্যাঁ আমি তোমার খেজুর গাছের বাগান গ্রহণ করলাম এবং ঐ খেজুর গাছটি তোমাকে দিয়ে দিলাম। যখন তিনি ঐ খেজুর গাছের মালিক হয়ে গেলেন তখন ঐ ইয়াতীমকে বললেন, এখন থেকে ঐ খেজুর গাছটি তোমার। আমি তা তোমাকে উপহার হিসাবে দিলাম। এখন তোমার দেয়াল সোজা করতে আর কোন বাঁধা নেই। এরপর আবু দাহদাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এখন আমি কি জান্নাতে খেজুর গাছের মালিক হ’লাম? তিনি বলেন,

كَمْ مِنْ عِذْقِ رَدَاحٍ لِأَبِي الدَّحْدَاحِ فِي الْجَنَّةِ

‘আবু দাহদাহর জন্য জান্নাতে এখন কত বিশাল বিশাল খেজুরের বাগান অপেক্ষা করছে’!

বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, এ শব্দটি তিনি এক, দুই বা তিনবার বলেননি; বরং খুশী হয়ে বারংবার বলেছেন।

শেষে আবু দাহদাহ (রাঃ) সেখান থেকে বের হ’লেন। জান্নাতে বাগানের সুসংবাদ পেয়ে নিজের বর্তমান বাগানের পথে রওয়ানা হ’লেন। মনে মনে বললেন, নিজের ব্যবহারিক কিছু কাপড় এবং কিছু যরূরী জিনিসপত্র তো ওখান থেকে নিতে হবে। তিনি বাগানের দরজায় এসে ভিতরে বাচ্চাদের কণ্ঠ শুনতে পেলেন। স্ত্রী তখন ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিল আর বাচ্চারা খেলাধূলা করছিল। ভিতরে গিয়ে তিনি স্ত্রীকে সংবাদ দিতে চাইলেন। কিন্তু তিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডাক দিলেন, হে উম্মে দাহদাহ!

উম্মে দাহদাহ অত্যন্ত অবাক হ’লেন যে, আজকে আবু দাহদাহ বাগানের বাইরে দরজায় কেন দাঁড়িয়ে আছেন? ভিতরে আসছেন না কেন? আবারও আওয়াজ আসল! উম্মে দাহদাহ! উত্তর আসল, আমি উপস্থিত হে আবু দাহদাহ! বাচ্চাদেরকে নিয়ে এ বাগান থেকে বের হয়ে আস। ঊম্মে দাহদাহ (রাঃ) বললেন, আমি বাগান হ’তে বের হয়ে আসব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি এ বাগান বিক্রি করে দিয়েছি। উম্মে দাহদাহ (রাঃ) বললেন, আপনি কার নিকট এটা বিক্রি করেছেন? কে কত দাম দিয়ে এটা ক্রয় করেছে? আবু দাহদাহ (রাঃ) বললেন, আমি জান্নাতে একটি খেজুর বাগানের বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিয়েছি। উম্মে দাহদাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহু আকবার। হে আবু দাহদাহ (রাঃ)! আপনি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা করেছেন। জান্নাতের একটি বৃক্ষ, যার নিচে অশ্বারোহী একশত বছর পর্যন্ত চলার পরেও তার ছায়া শেষ হবে না (বুখারী হা/৩২৫১)। কী সৌভাগ্য আমাদের যে, আমরা জান্নাতে এমন একটি গাছ পাব। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৫৭৯১-৯৩; হাকেম হা/২১৯৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯৬৪; মু‘জামুল কাবীর হা/৭৬৩; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৪৫১)।

উপসংহার :

৬০০আবু দাহদাহ এবং উম্মে দাহদাহ (রাঃ)-এর এ দান কোন সাধারণ দান ছিল না। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর আশা পূরণের জন্য ও একজন ইয়াতীমকে সহায়তা করার জন্য নিজের সবচেয়ে মূল্যবান বস্ত্ত তারা আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছিলেন। স্বীয় বাসস্থান, মূল্যবান বাগান, কূপ ছেড়ে দিয়ে মানব জাতির জন্য দানের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন। এটাই হল সত্যিকারের নবীপ্রেম। আবু দাহদাহ ও তাঁর পরিবারের প্রতি আল্লাহ অবিরত ধারায় রহমত বর্ষণ করুন! এবং আমাদেরকে অনুরূপ দানশীল হওয়ার তাওফীক দান করুন।-আমীন!

এপিজে আবদুল কালাম হিন্দু ছিলেন।

🟢🔵#ভারতের প্রয়াত সাবেক #রাষ্ট্রপতি #এপিজেআব্দুলকালাম কৃষ্ণ ভক্ত, মুর্তি পুজারি ও হিন্দু ছিলেন। তিনি নিয়মিত শিবের পূজা করতেন।

🟤🟣#বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামকে নিয়ে।
আরএসএস বলছে আব্দুল কালাম হিন্দু ছিলেন। সংগঠনটির নেতাদের মধ্যে সামাজিক মিডিয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের আকস্মিক প্রয়াণে ‘এ প্যাসেজ টু বিহার’ খ্যাত ‘দ্য বিহার টাইমস’-এ প্রকাশিত প্রভাবশালী স্টেটসম্যান পত্রিকার পাটনা প্রতিনিধি নলীন ভার্মা’র নিবন্ধ ‘বিলিভ ইট অর নট: কালাম ইজ এ হিন্দু, সেইজ আরএসএস’ বিতর্কের ঝড় তুলেছে।
পাশাপাশি তাতে যুক্ত হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে এপিজে আব্দুল কালামের নিয়োগ অর্জনের এক অজানা তথ্য। এতে তাকে গীতা পাঠক, নিরামিষভোজী, কৃষ্ণের ভক্ত এবং অগ্নি ও #সূর্য_পূজক চিত্রিত করে বলা হয়েছে- বিজেপি’র অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০২ সালের ২৫ জুলাই তাকে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দেয়। প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ওই বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চে গুজরাটে চলে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা এবং স্বভাবতই মুসলিমরা হয় ক্ষিপ্ত। আর তা প্রশমিত করতে শুরুতেই এই রাষ্ট্রপতির বক্তব্য ছিল- ‘মাই মিশন ওয়াজ নট টু লুক এট হোয়াট হ্যাড হেপেন্ড, নট টু লুক এট হোয়াট ওয়াজ হেপেনিং, বাট টু ফোকাস অন হোয়াট শুড বি ডান’। অর্থাৎ কী ঘটেছে বা ঘটছে তা আমার জানার লক্ষ্য নয়, বরং কী করা দরকার সেটার প্রতিই রয়েছে আমার আগ্রহ।
এরপর পর্যায়ক্রমিক ২০০৭ ও ২০১২ সালে বিজেপি তাকে আবারও রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ দিতে চাইলে কংগ্রেসের বিরোধীতায় সম্ভব হয়ে ওঠেনি। একইভাবে ওই আলোচনায় উঠে এসেছে ভারতের দুই সাবেক মুসলিম রাষ্ট্রপতি যথাক্রমে জাকির হুসাইন ও ফখরুদ্দীন আলীসহ প্রধান বিচারপতি আজিজ মুবাশশির-এর কথা। ওই রাষ্ট্রপতিদ্বয় নাকি ছিলেন নেহেরুভক্ত এবং সমাজতান্ত্রিক ও নাস্তিক এবং প্রধান বিচারপতি ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই তাদের নিয়োগ কোনো ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা উদারতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ঘটেনি, বরং বিচক্ষণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঘটেছে এবং সে কারণে উল্লসিত হবারও কিছু নেই।
তবে নলীন ভার্মা’র ওই নিবন্ধের সূচনায় বলা হয়েছে- ‘প্রেসিডেন্ট এপিজে আব্দুল কালাম রিডস দ্য গীতা অ্যান্ড ট্রিটস দ্য কান্ট্রি এজ হিজ মাদার, সো হি ইজ এ হিন্দু’। অর্থাৎ তিনি গীতা পাঠ করেন এবং দেশ তার কাছে মাতৃতুল্য, তাই তিনি হিন্দু।অচঔথঅনফঁষকধষধসথডড়ৎংযরঢ়২
এতে পর্যায়ক্রমিক আরো বলা হয়Ñ ওই মন্ত্রটাই আরএসএস তাদের তরুণ ক্যাডারদের প্রাতঃকালীন সম্মিলনে শিখিয়ে থাকে। সেটা নিবন্ধকার নিজেই প্রত্যক্ষ করেছেন একজন আরএসএস শিক্ষক তার স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্দেশ্য করে বলছেন- ‘প্রেসিডেন্ট একজন হিন্দু, গীতার প্রতি তার ভালবাসা দেশপ্রেম থেকেই উৎসারিত’। সে সময় ১২-১৫ বছর বয়সী এই কিশোরেরা সূর্য দেবতার প্রার্থনা, শারীরিক কসরত এবং দেশপ্রেমের দীক্ষা ধারণে নিমগ্ন ছিল। দেশপ্রেমের অনুভূতি জাগাতে রাজ্যে সেটা সকাল সাড়ে ৫টায় ঘটে। কেন্দ্রীয় বিহার ও ঝাড়খন্ডের আরএসএস সদর দপ্তর পাটনার রাজেন্দ্র নগরের বিজয় নিকেতনে এ সম্মিলনটি হয়।
এরপরই ওই নিবন্ধে আরএসএস কেন ডক্টর কালামকে একজন হিন্দু আখ্যায়িত করেছে, তার যৌক্তিক বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে আরএসএস শিক্ষা প্রচারক রাজেসের প্রশ্ন হচ্ছে- ‘রাষ্ট্রের প্রথম নাগরিককে হিন্দু বলায় দোষের কী আছে’? তার স্বগতোক্তি- হিন্দু শব্দের সঙ্গে ধর্ম ও জাত-পাতের কোনো সম্পর্ক নেই। সরাসরি তার ভাষ্যানুযায়ী- ‘অল দোজ হু আর পেট্রয়েটস অ্যান্ড ট্রিট ইন্ডিয়া এজ দেয়ার মাদার আর হিন্দুজ’। অর্থাৎ যারা দেশপ্রেমী এবং ভারতকে মায়ের পরিচর্যায় দেখে তারা সকলেই হিন্দু। কিন্তু ড. কালাম কোরআন পড়েন এবং নামাজ আদায় করেন, এমন প্রশ্নের জবাবেও তার উত্তর হচ্ছে, ‘তাতে কিছু যায় আসে না; হিন্দু হলেও তাতে কোনো বাধা নেই’। তার যুক্তি হচ্ছে- আপনি যে কোনো ধর্মগ্রন্থ পাঠ বা উপাসনা পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন, কিন্তু আপনি যখন গীতা পাঠসহ দেশকে মাতৃতুল্য পরিচর্যায় দেখবেন, তখনই আপনি হিন্দু।
ওই নিবন্ধের শেষে এই শিক্ষা প্রচারক আরো নিশ্চিত করেছেন যে, বিহারের দরভাঙ্গা, মোজাফফরপুরসহ অপরাপর আরএসএস শিক্ষায়তনের দীক্ষাটি হচ্ছে- ‘প্রেসিডেন্ট কালাম ইজ এ হিন্দু’। এটা এমন নয় যে পাটনায় যা শিক্ষা দেওয়া হয়, তা দরভাঙ্গা কিংবা অন্যত্র ভিন্ন। মূলতঃ এই সকল শিক্ষায়তনের সম্মিলনগুলো প্রভাবশালী মধ্যবিত্ত পরিবার সদস্যরা পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক কিশোরেরা এই পরিবারগুলো থেকে যোগ দেয়। শুধুমাত্র পড়াশোনা পরিচালনায় অক্ষম পরিবারের দরিদ্র কিশোরেরাই তাতে অধিক সংখ্যায় যোগ দিয়ে থাকে।

অবশ্যই মুসলিমগণ মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানের আনুগত্য করা ফরজ, কিন্তু শাসক যদি ইসলামিক না হয়??

🟦🟥ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকের আনুগত্য থেকে মুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে জাহেলি মৃত্যু হয়। এখন প্রশ্ন হল, ইসলামী রাষ্ট্র না থাকলে অর্থাৎ রাষ্ট্রই যদি ইসলাম বহির্ভূত জাহেলি রাষ্ট্র হয়, সে ক্ষেত্রে এমন রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা না করে বরং এ জাহেলিয়াতের উপর সন্তুষ্টি থেকে মৃত্যুবরণ করলে কি সেটা জাহেলি মৃত্যু নয়?
👉👉এ বিষয়ে সকালেই একমত যে, কোনো ব্যক্তি যদি ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকের আনুগত্য বর্জন করে এবং মুসলিম জামায়াত ত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তার মৃত্যু হয় জাহেলিয়াতের মৃত্যু। কিন্তু প্রশ্ন হল, ইসলামী রাষ্ট্র না থাকলে অর্থাৎ রাষ্ট্রই যদি ইসলাম বহির্ভূত জাহেলি রাষ্ট্র হয়, সে ক্ষেত্রে এমন রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা না করে বরং এ জাহেলিয়াতের উপর সন্তুষ্টি থেকে মৃত্যুবরণ করলে কি সেটা জাহেলি মৃত্যু নয়? অবশ্যই জাহেলি মৃত্যু বলে গণ্য হবে। আর এই জাহেলি মৃত্যুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে রাষ্ট্রে এমন শাসক নির্বাচন করতে হবে, যিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে জাহেলি বিধান অপসরণ করে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করবেন। আর এটি কোনো নফল বা মুস্তাহাব বিষয় নয় বরং এটি মুসলিমদের উপর গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কাজ।

ইমাম শানকীতি (রাহঃ) বলেনঃ
من الواضح المعلوم من ضرورة الدين إن المسلمين يجب عليهم نصب امام تجتمع به الكلمة وتنفذ به احكام الله في ارضه.
“এ কথা সুস্পষ্ট যে, দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়গুলো মধ্যে একটি হলোঃ মুসলিমদের জন্য একজন (রাষ্ট্রের) ইমাম নিযুক্ত করা ফরয। যার নেতৃত্বে মুসলিমগণ ঐক্যবদ্ধ হবে, তিনি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করবেন।” (তাফসীরে আদওয়াউল বায়ান ১/২৩)

ইমাম কুরতুবী রাহঃ সূরা বাকারার ৩০ নং আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেনঃ
هذه الاية اصل في نصب امام وخليفة يسمع له ويطاع لتجتمع به الكلمة وتنفذ به احكام الخليفة ولاخلاف في وجوب ذلك بين الامة و لا بين الاءمة.
“এই আয়াতটি মুসলিমদের একজন ইমাম বা খলিফা নিযুক্ত করার ব্যাপারে মূলভিত্তি। খলিফার কথা শুনতে হবে এবং তার নির্দেশ মানতে হবে। তার নেতৃত্বে মুসলিম জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। তিনি আল্লাহর খলিফা হিসাবে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কার্যকর করবেন। এজন্যই মুসলিম জাতির জন্য খলিফা নিযুক্ত করা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।” (তাফসীরে কুরতুবী ১/২৬০)

আল্লামা ইবনে কাসীর রাহঃ বলেনঃ
وقد استدل القرطبي وغيره بهذه الآية على وجوب نصب الخليفة গ بين الناس فيما اختلفوا فيه ويقطع تنازعهم وينتصر لمظلومهم من ظالمهم ويقيم الحدود ويزجر عن تعاطي الفواحش إلى غير ذلك من الامور المهمة التي لا تمكن إقامتها إلا بالإمام وما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب.
“ইমাম কুরতুবী রাহঃ সহ প্রভৃতি মনীষীগণ এ (সূরা বাকারা ৩০ নং) আয়াত হতে দলিল গ্রহণ করেছেন যে, রাষ্ট্রের খলিফা নিযুক্ত করা ওয়াজিব। তিনি মতবিরোধের মীমাংসা করবেন, ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দিবেন, অত্যাচারী হতে অত্যাচারিত ব্যক্তির প্রতিশোধ নিবেন, ‘হুদুদ’ কায়েম করবেন, অন্যায় ও পাপের কাজ হতে জনগণ বিরত রাখবেন ইত্যাদি বড় বড় কাজগুলো যার সমাধান ইমাম ছাড়া হতে পারে না। এসব কাজ ওয়াজিব এবং ইমাম ছাড়া পুরো হতে পারে না। আর যা ছাড়া কোন ওয়াজিব পুরো হয় না, ওটাও ওয়াজিব। সুতরাং খলিফা নিযুক্ত করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো”।(তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা বাকারাঃ ২/৩০)

ইমামুল হারামাইন আবুল মাআলী জুওয়াইনী (রাহঃ) এর বলেন,
ولا يشك احد من علماء المسلمين في وجوب نصب الامام- بل قد روي الاجماع علي وجوب ذلك كل نن تكلم في هذه المسألة من العلماء-
“মুসলিম আলেমদের এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ নেই যে, মুসলিমদের (রাষ্ট্রীয়) ইমাম নিযুক্ত করা ফরয। বরং এ ব্যাপারে যারাই কথা বলেছেন তারা সকলে ইজমা ‘ঐক্যমত’ পোষণ করেছেন।” (غياث الامم في التياث الظلم، الباب الأول في وجوب نصب الأءمة وقادة الأمة)

মোল্লা আলী কারী (রাহঃ) লিখেছেন,
فقد أجمعوا على وجوب نصب الإمام.
ইমাম – ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালক নিয়োগ করা সর্বসম্মতিক্রমে আবশ্যক। (শারহে ফিকহুল আকবর, পৃ. ১৭৯)
ইমাম নিয়োগের কাজ যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে গিয়ে তিনি আরো বলেন,
ولإن لصحابة جعلوا أهم المهمات نصب الإمام حتى قد موه على دفنه صلعم.
সাহাবায়ে কিরামও ইমাম নিয়োগকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এমনকি নবী (ﷺ) কে দাফন করার পূর্বেই তারা ইমাম নিয়োগের কাজ সুসম্পন্ন করেছেন। (শারহে ফিকহুল আকবর, পৃ. ১৭৯)

ইসলামী রাষ্ট্রে ইমাম নিয়োগ ছাড়া আল্লাহর আইন ও বিধান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই ইসলামী রাষ্ট্র বা ইমারত প্রতিষ্ঠা করা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহঃ) এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেছেনঃ
ان ولاية امر الناس اعظم واجبات الدين بل لاقيام للدين الا بها ولان الله تعالي اوجب الامر بالمعروف و النهي عن المنكر ولايتم ذلك الا بقوة وإمارة ونصرة المظلوم وكذلك ساءر ما اوجبه من الجهاد والعدل واقامة الحدود لا تتم الا بالقوة والامارة.
“জনগণের যাবতীয় ব্যাপার সুসম্পন্ন করা তথা শাসন-ব্যবস্থা কায়েম করা দ্বীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বিষয় বরং শাসন-ব্যবস্থা (রাষ্ট্র) এমন এক অপরিহার্যতা যা ছাড়া দ্বীন প্রতিষ্ঠা হতেই পারে না। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ এবং মজলুমদের সাহায্য করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এ ওয়াজিব পালন রাষ্ট্র ও শাসন ছাড়া সম্ভব নয়। এ ভাবে তিনি জিহাদ, ইনসাফ ও আইন-শাসন প্রভৃতি যেসব কাজ ওয়াজিব করে দিয়েছেন তা রাষ্ট্রশক্তি ও শাসন-ব্যবস্থা ছাড়া কিছুতেই হতে পারে না।” (আস-সিয়াসাতুশ শরইয়্যাহ, শরীয়াহর নীতি, পৃষ্ঠাঃ ১৬১-১৬২)
বিঃদ্রঃ ওয়াজিব বলতে এখানে ফিকহের ভাষায় ফরজের পরবর্তী স্তর ‘ওয়াজিব’ বুঝানো হয়নি বরং এখানে ওয়াজিব বলতে ‘ফরজ’ বুঝানো হয়েছে।

সারকথাঃ মুসলিম আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে এ বিষয়ে একমত যে, রাষ্ট্রে এমন একজন ইমাম নিযুক্ত করা ফরয, যার নেতৃত্বে মুসলিমগণ ঐক্যবদ্ধ হবে, তিনি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন/বিধান কায়েম করবেন। আর দ্বীন কায়েমের এ কাজ একা একা কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ-
তোমরা (ঐক্যবদ্ধ ভাবে) দ্বীন কায়েম কর এবং এতে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা শুরা: ৪২/১৩)
ইকামতে দ্বীনের এ কাজকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর নবী (ﷺ) এর জন্যেও সাহাবীদের নির্বাচন করেছেন। আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবীদের সংগঠিত করে ইকামাতে দ্বীনের কাজ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে বলেন,
اخْتَارَهُمُ اللَّهُ لِصُحْبَةِ نَبِيِّهِ وَلِإِقَامَةِ دِينِهِ رَوَاهُ رزين.
“আল্লাহ তাঁদের বাছাই করে নিয়েছেন তাঁর নবী (ﷺ) এর সাথী হওয়ার জন্য এবং তাঁর দ্বীন কায়েম করার জন্য।” (মিশকাত, হাদীস নং ১৯৩; হিলইয়াহ ১/৩০৫-৩০৬; ইবনে আব্দুল বার ২/৯৭)

তাহলে ইকামতে দ্বীনের যে কাজ করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই সাহাবীদের সংগঠিত করেছিলেন, সেই কাজ সংগঠন ছাড়া সুসম্পন্ন কিভাবে সম্ভব হতে পারে? শায়েখ আহমাদুল্লাহ নিজেই বলেছেন,
“ইসলামী কোনো কাজকে গোছালো ভাবে করার জন্য সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। সেই হিসেবে সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়া ভালো কাজ।…. কিন্তু এসব সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়া ফরজ, না হলে জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে – এটা একেবারেই মূর্খতা সূলভ কথা।” নাউজুবিল্লাহ, আল্লাহ শায়েখকে সহীহ বুঝ দান করুন!

শায়েখ এখানে স্ববিরোধী বক্তব্য পেশ করেছেন। সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়াকে তিনি ভালো কাজ বললেও এর গুরুত্বকে অস্বীকার করেছেন। ইসলামী কোনো কাজ (যেমন ইকামাতে দ্বীনের কাজ) গোছালো ভাবে করার জন্য যদি সংগঠনের বিকল্প কিছু না থাকে তাহলে ইকামতে দ্বীনের ফরজ কাজ সংগঠন ছাড়া করবেন কিভাবে? যেহেতু সংগঠন ছাড়া ইকামাতে দ্বীনের ফরজ কাজ সুসম্পন্ন হয় না, সুতরাং দ্বীন কায়েমের জন্য সংগঠনে যুক্ত হওয়াও ফরজ। আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন,
وما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب.
“আর যা ছাড়া কোন ওয়াজিব/ফরজ পুরো হয় না, ওটাও ওয়াজিব/ফরজ।”

যেসব দেশে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত নেই বরং জাহেলি বিধান কার্যকর রয়েছে সেইসব দেশে যারা জাহেলি বিধান অপসারণ করে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে সংগঠন গড়ে তোলেনি অথবা সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়নি কিংবা সমর্থনও করেনি, তারা নিশ্চয় জাহেলি বিধানে সন্তুষ্ট ও সমর্থনকারী। আর যারা জাহেলি বিধান সমর্থন করে মৃত্যুবরণ করে তাদের মৃত্যু জাহেলি মৃত্যু বলেই গণ্য হবে। এমনকি শায়েখ আহমাদুল্লাহ নিজেও যদি ইকামাতে দ্বীনের কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত না হয় কিংবা সমর্থন না করে, তাহলে প্রমাণিত হবে যে, তিনি জাহেলি বিধানে সন্তুষ্ট। এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে, তার মৃত্যুও জাহেলিয়াতের মৃত্যু বলে গণ্য হবে।

নো-ফ্লাই জোন

🟪🟥 চীনের #তিব্বত হলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় এলাকা যুক্ত #নোফ্লাইজোন অর্থাৎ আকাশযান চলাচল নিষিদ্ধ এলাকা। বিমান বা আকাশযান চলাচল করার জন্য খোলা এবং বাধামুক্ত এলাকা লাগে। তিব্বতের #পামিরমালভূমি হল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমি যাকে #পৃথিবীর_ছাদ বলা হয়। মূলত তিব্বত পুরোটাই একটি মালভূমি যার গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 5 হাজার মিটার অর্থাৎ ৫ কিলোমিটার এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখরগুলির আবাসস্থল ।

👉👉এখানে প্রশ্ন জাগে যে,তাহলে এর সাথে বিমানের কি সম্পর্ক আছে?
আধুনিক যাত্রীবাহী বিমানের কেবিনগুলো চাপে রাখা হয়। যখন এই চাপ ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি দেখা দেয়, তখন যাত্রীদের শ্বাস নিতে দেওয়ার জন্য প্রথমে অক্সিজেন মাস্কগুলি সক্রিয় করা হয়। যাইহোক, অক্সিজেন সিস্টেমের ক্ষমতা 15-20 মিনিটের জন্যই যথেষ্ট।
তাই কেবিন প্রেসার সিস্টেমে ব্যর্থতা দেখা দিলে পাইলটগণ এরোপ্লেনকে 3 হাজার মিটার উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাধ্য হন যাতে করে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রাকৃতিক অক্সিজেন সরবরাহ হয় বা প্রাকৃতিক অক্সিজেন সরবরাহের এলাকায় চলে আসে।
তিব্বত অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশে, উচ্চতা 3 হাজার মিটারের উপরে অর্থাৎ বেশিরভাগ পর্বত শিখর গুলোর উচ্চতা ৩ কিলোমিটার এরও বেশি। তাই যাত্রীবাহী অথবা বাণিজ্যিক বিমান গুলো কোন সমস্যায় পড়লে তারা নিচে নেমে আসতে পারবে না।
এছাড়া তিব্বতে এমন কোনো পরিবেশ নেই যেখানে জরুরি পরিস্থিতিতে বিমান নিরাপদে অবতরণ করতে পারে।
তাছাড়া টুইন-ইঞ্জিন বিমানের অর্থাৎ ২ ইঞ্জিন বিশিষ্ট এরোপ্লেনের একটি ইঞ্জিন ব্যর্থ বা কোন কারণে অকার্যকর হলে, নিরাপদে উড়তে বিমানটিকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় নামতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, তিব্বতের ভৌগোলিক কাঠামোর কারণে এটি সম্ভব নয়। এসব কারণে তিব্বতের ওপর দিয়ে কোনো বিমান উড়ে না।
উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর বেশির ভাগ এরোপ্লেনগুলো দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট অর্থাৎ যাত্রীবাহী বাণ্যবাহী প্রায় ৮০% এরোপ্লেন ইং দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট হয়ে থাকে। আর প্লেনের ইঞ্জিন গুলো থাকে পাখার নিচে। (ছোটবেলায় এই ইঞ্জিন গুলোকে আমরা প্লেনের লাইট মনে করতাম)!
তবে কিছু কিছু এরোপ্লেনের দুই ইঞ্জিনের পাশাপাশি লেজের উপরে আরো একটি ইঞ্জিন থাকে অর্থাৎ তিনটি ইঞ্জিন থাকে। তবে বড় বড় যাত্রীবাহী ও বন্যবাহী এরোপ্লেনে এবং ডাবল ডেকার এরোপ্লেনে চারটি অথবা লেজের উপর একটি শহর পাঁচটি ইঞ্জিন থাকে।।।

🟥🟪 #মৃত্যু একটি সোনার চাবি , যা নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট প্রসাদের দার উন্মুক্ত করে।👉👉উপরের এই কথাটি আমি পড়েছিলাম একটি দেয়ালে । তাও আজ থেকে ৩৮ বছর পূর্বে যখন আমি সবেমাত্র হাইস্কুলে উঠেছি। এই লিখাটা আমি প্রায় প্রতিদিন দেখতাম এবং বিভিন্ন এলোমেলো চিন্তা করতাম মৃত্যু নিয়ে।আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়ায় বলেছেন–“”প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে ।আমি তোমাদের ভালো ও খারাপ অবস্থা দিয়ে পরীক্ষা করি । আর আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে ।— সূরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ৩৫

🟥🟪 #মৃত্যু একটি সোনার চাবি , যা নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট প্রসাদের দার উন্মুক্ত করে।
👉👉উপরের এই কথাটি আমি Mahabubur Rahman পড়েছিলাম একটি দেয়ালে । তাও আজ থেকে ৩৮ বছর পূর্বে যখন আমি সবেমাত্র হাইস্কুলে উঠেছি। এই লিখাটা আমি প্রায় প্রতিদিন দেখতাম এবং বিভিন্ন এলোমেলো চিন্তা করতাম মৃত্যু নিয়ে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরা আম্বিয়ায় বলেছেন–
“”প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে ।
আমি তোমাদের ভালো ও খারাপ অবস্থা দিয়ে পরীক্ষা করি । আর আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে ।
— সূরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ৩৫

🟥🟪 সবাই মৃত্যু থেকে পালায়।
মানুষ মৃত্যু থেকে পালাতে চায় কিন্তু টুডে ওর টুমরো তাকে মৃত্যুর কাছে ধরা দিতেই হয়। মোটকথা মৃত্যুর নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন মৃত্যু থেকে কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারে না।
শুধু মানুষ নয় বরং প্রত্যেকটা প্রাণী মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত।
কোন হিংস্র জন্তু বা সাপ দেখলে আমরা দৌড়ে পালিয়ে যাই। কোন বিপদের সম্ভাবনা দেখলে আমরা ওই এলাকা এড়িয়ে যাই। বজ্রপাত হলে আমরা ভয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেই। এবং যেকোনো অসুখ হলে আমরা ডাক্তার এবং ঔষধ এর শরণাপন্ন হই। ঔষধ খাই আমরা এজন্য যে, ওসব ভালো না হলে আমরা মরে যাব। মোটকথা এই যে আমাদের তৎপরতা সবগুলো মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। মৃত্যু আমাদের সকল প্রচেষ্টা আত্ম অহমিকা, মেধা মনন, ও জীবনের সবকিছুকে প্লান করে দেয়।
কখন আসবে কেউ তা জানে না।
জানেন শুধু একমাত্র আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা।
পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, কেউ জানে না আগামীকাল সে কি করবে আর কেউ জানে না কখন কোথায় কিভাবে তার মৃত্যু হবে”!

🟥🟪কয়েকদিন আগে ভাইরাল হওয়া একটি ঘটনা–
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির একটা ছেলের মারা যাওয়ার খবর দেখে হুট করেই মনে হলো, মৃত্যু ছাড়া আমাদের আসলে নিজের বলতে আছেটা কী?

এই ছেলেটা গ্র্যাজুয়েশন করেছে। বিয়ে করেছে। দুইটা বাচ্চা আছে। বৌ আছে। ৪১ তম বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছে। ৪৩ তমর ভাইবাও দিয়ে ফেলেছে।

এই এতো এতো স্ট্রাগল, এতো এতো পরিশ্রম এক মুহূর্তে শূণ্য হয়ে গেল, ছেলেটার তাহলে নিজের বলে থাকলো কী?

ভালো ক্যারিয়ার, অসম্ভব পরিশ্রম করে তিলে তিলে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার, এই ক্যারিয়ারটাও কি আসলে আমার নিজের? না তো। এই ক্যারিয়ারে মায়ের ভাগ আছে, বাপের ভাগ আছে, ভাইয়ের লেখাপড়া আছে, বোনের বিয়ে আছে, বৌ এর শখ আছে, বাচ্চার দুধ আর খেলনাও আছে।

এবং এই একটা ক্যারিয়ার বানানোর জন্য মানুষরে সবকিছুই ছাড়তে হয়। লিটারালি সবকিছুই। টাকার ব্যাপারটা তো আছেই, সময়ের ব্যাপারটাও খুব ভাইটাল। চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে বহু ছেলেমেয়ে ট্যুর দেওয়া ছেড়ে দেয়, বই পড়া ছেড়ে দেয়, প্রেম করা ছেড়ে দেয়, রেস্টুরেন্টে খাওয়া ছেড়ে দেয়, এমনকি অনেকে তো ইবাদত পর্যন্ত করতে পারে না।

একবার এক ভাইরে রাতের বেলা অনেক নামাজ পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করে জানছিলাম, সারাদিন ল্যাবে কাজের ঠেলায় নামাজটা পর্যন্ত পড়তে পারেন নাই। খাওয়া তো দূরের কথা। মলিন হাসি মুখে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি ধনী হইতে চাই না ভাই, শুধু এতোটুকু অবসর চাই, যতটুকু অবসর পাইলে আমি একটু শান্তিমতো নামাজটা পড়তে পারি।

কেউ সরারাত ফোন নিয়ে রাতে দাঁড়াইয়া থাকে, বাপ অসুস্থ, বাপের কাছে যাইতে পারে না। শুধুমাত্র একটা ক্যারিয়ারের জন্য। একটা ব্রাইট ফিউচারের জন্য।

সমস্যা হলো, ফিউচার প্ল্যানে আমরা সবকিছুই ইনক্লুড করি, শুধু #মৃত্যুটছাড়া। আমাদের প্ল্যানে পরিবার থাকে, প্রেমিকা থাকে, গাড়ি থাকে, বাড়ি থাকে, বাট #মৃত্যুটাথাকে_না।

অথচ মৃত্যুটাকে প্ল্যানে রাখতে পারলেই কিন্তু আমার আপনার অনেক প্রায়োরিটি লিস্ট চেঞ্জ হয়ে যাবে। সেন্টমার্টিন ট্যুরটা দিয়ে ফেলা যাবে, ওয়্যার এন্ড পিসটা পড়ে ফেলার সময় হবে, তাহাজ্জুদ পড়ার সময়টাও বের করে ফেলতে পারবেন। কারণ, আপনি জানেন, মৃত্যু ওয়েট করতেসে। আপনার হাতে খুব বেশি সময় নাই।

না, আমি নিজে বোহেমিয়ান টাইপ মানুষ না, আপনাকেও বাউন্ডুলে হতে বলতেসি না। বরং পরিবারকে আমরা ওউন করবো, ভালোবাসবো, দায়িত্ব পালন করবো, সবটাই করবো।

সাথে সাথে ওউন করে নিবো আমাদের দুর্বলতাকেও, আমাদের #মৃত্যুকেও।

তখন দেখবেন, কিছু কাজ যেইটা আপনি একান্তই আপনার বলে অবহেলায় ফেলে রেখেছেন, কাজটা আপনার করা হয়ে যাবে। মৃত্যু আপনার পরিবারের পাশাপাশি আপনাকেও আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।

জীবন নিয়ে প্ল্যান করার সময় একটা জিনিস মাথায় রাইখেন, জীবনটা আপনার না। এইখানে আপনার ভাগ কম। আপনার জীবন আপনার চোখের সামনেই ভাগ করে নেবে আপনার পরিবার, আপনার বন্ধু বা আপনার আত্মীয়রা।

কিন্তু #মৃত্যুটা আপনার #একান্তই_নিজের। আপনার মৃত্যুর ভাগটা কেউ নেবে না, ঐটা আপনাকেই নিতে হবে। তাই, যে কোন প্ল্যানে জীবনের আগে মৃত্যুর কথাটা থাকা চাই। কষ্ট করতে করতে নিজেরে যন্ত্র করে ফেলার আগে মনে থাকা চাই কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের লেখা দুইটা লাইন,

“মৃত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই,
জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয় খুব প্রকাশ্যেই।”
জীবমাত্রই মৃত্যু রয়েছে। আল্লাহর ভাষায়, كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ۗ ‘ প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করবে’- সুরা আলে ইমরান ১৮৫। কী আস্তিক, আর কী নাস্তিক কেউ তা অস্বীকার করে না।

পার্থক্য হলো, আস্তিক মৃত্যু পরবর্তী জীবন বিশ্বাস করে এবং সেই আলোকে সে দুনিয়ার জীবনটা পরিচালনা করে। মৃত্যু এজন্যই, যাতে নেক ও বদ আমলের বিনিময়ে মানুষ জান্নাত বা জাহান্নাম ভোগ করতে পারে।

অনিবার্য সত্যের মুখোমুখি
মৃত্যু এ দুনিয়ার সকল আনন্দ, ভোগ-বিলাস মুহূর্তেই শেষ করে দেয়। মৃত্যুর কথা স্মরণ হলে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। একজন কাফিরের জন্য মৃত্যু যতখানি ভয়ের, মুমিনের জন্য ততখানি নয়।

এ দুনিয়ায় মুমিনের নামাজ-রোজা ও সকল নেক আমলের পেছনে একটিই লক্ষ্য, মৃত্যুর পরে সে যেন আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত পায়। জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব সম্পর্কে সে পুরোপুরি অবহিত; তাই মৃত্যুকে নয়, জাহান্নামের আজাবকে সে ভয় পায়।

মুমিনের মৃত্যু মানে রবের সান্নিধ্যে
মুমিন হয় সাহসী, চলার পথে সব ধরনের সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে সে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে এগিয়ে যায় এবং সে জানে মৃত্যুর বিষয়টি একান্তই আল্লাহর হাতে। আল্লাহর বাণী, ۗ وَاللَّهُ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ আল্লাহ জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা- সূরা আলে-ইমরান:১৫৬ । সে আরো জানে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রোগ-মহামারি কোনো কিছুই তাকে মৃত্যু দিতে পারে না, যদি আল্লাহ না চান এবং মৃত্যুর সময় সুনির্দিষ্ট। আল্লাহর কথা,

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتٰبًا مُّؤَجَّلًا ۗ وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الْءَاخِرَةِ نُؤْتِهِۦ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِى الشّٰكِرِينَ -আর কোন প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারা যায় না, তা নির্দিষ্টভাবে লিখিত আছে। আর যে দুনিয়ার প্রতিদান চায়, আমি তা থেকে তাকে দিয়ে দেই, আর যে আখিরাতের বিনিময় চায়, আমি তা থেকে তাকেও দেই এবং আমি অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেব। সূরা আলে-ইমরান:১৪৫

সুরা আল ইমরানের বেশ কিছু আয়াত আমি এখানে উদ্ধৃত করেছি। মূলত এই অংশটি ওহুদ যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অবতীর্ণ এবং এসব আয়াতে সেই যুদ্ধেরই পর্যালোচনা করা হয়েছে। আল্লাহপাক আমাদের তাঁরই সৃষ্ট এক অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছেন। সেই যুদ্ধের সৈনিক হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ডাক্তার-নার্স, ত্রাণকর্মী-স্বেচ্ছাসেবক এবং তাদের সহযোগী হলেন দেশের জনগণ।

বিপদ মানুষের পাপের প্রতিফলন
মহামারি, ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস বা বিপদ- মুসিবত যাই বলি, তা নিজ থেকে আসে না, আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।আল কুরআনে, مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَمَن يُؤْمِنۢ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُۥ ۚ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ-সূরা আত-তাগাবুন:১১।

আল্লাহর ভাষায়, এসবই আমাদের হাতের কামাই। মানুষ যখন সীমালঙ্ঘন করে এবং জমিনে অশ্লীলতা ও পাপাচার বেড়ে যায় তখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য নানাবিধ বালা-মুসিবত দিয়ে থাকেন। করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই লাখের কাছে মানুষ মারা গেছেন। মানুষ তার জ্ঞান-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এটিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, এই বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে, তাই বৈষয়িক সকল ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের আল্লাহরই কাছে ফিরে আসতে হবে।

রবের পক্ষ থেকে সতর্কতা
প্রশ্ন উঠতে পারে, মহামারি যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে, সেহেতু সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে আমরা আল্লাহর কাছে ধর্ণা দিতে পারি এবং নামাজ, রোজা ও দোয়া-দরুদের মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করতে পারি। কিন্তু এটি আল্লাহর সুন্নাহর (নিয়ম) বিপরীত। মানুষ তো আল্লাহরই প্রতিনিধি।

তাকে জ্ঞান-বুদ্ধি ও যোগ্যতা দিয়ে সকল সৃষ্টির ওপর ক্ষমতাবান করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজন তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা। পৃথিবীতে যত রোগ-ব্যাধি আছে, আল্লাহ তার আরোগ্যেরও ব্যবস্থা রেখেছেন। সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টার পাশাপাশি যারা নিজেদেরকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে পারবে তারাই সফলকাম এবং তারাই হবে সৌভাগ্যের অধিকারী।

করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক ব্যাধি। ফলে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। কোনো বাসায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার সকল প্রিয়জন তার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে; এমন কি দাফন-কাফনেও শরীক হতে রাজী হচ্ছে না। আখিরাতের সেই চিত্রই যেন পরিস্ফুট হচ্ছে। সেদিন আপনজনরা একে অপর থেকে পালাবে। এই করোনা ভাইরাস আল্লাহর অনেক বান্দাকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে ফিরিয়ে এনেছে এবং অনেকে মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করে নেকির পাল্লাকে ভারি করতে সক্ষম হয়েছে।

বিপদে অগ্রগামীদের মৃত্যু
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও সেবা-যত্ন এবং ত্রাণ বিতরণ সবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ বলেই সেখানে গেলে কি কারো মৃত্যু অনিবার্য? মোটেই না, মৃত্যুর ফয়সালাটা সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ۗ قُل لَّوْ كُنتُمْ فِى بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ إِلٰى مَضَاجِعِهِمْ ۖ وَلِيَبْتَلِىَ اللَّهُ مَا فِى صُدُورِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِى قُلُوبِكُمْ ۗ ‘তোমরা যদি তোমাদের ঘরে থাকতে তাহলেও যাদের ব্যাপারে নিহত হওয়া অবধারিত রয়েছে, অবশ্যই তারা তাদের নিহত হওয়ার স্থলের দিকে বের হয়ে যেত।

আর যাতে তোমাদের মনে যা আছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহে যা আছে তা পরিষ্কার করেন। আর আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত’-সূরা আলে-ইমরান:-১৫৪। আল্লাহ আরো বলেন, الَّذِينَ قَالُوا لِإِخْوٰنِهِمْ وَقَعَدُوا لَوْ أَطَاعُونَا مَا قُتِلُوا ۗ قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ যারা তাদের ভাইদেরকে বলেছিল এবং বসেছিল, ‘যদি তারা আমাদের অনুকরণ করত, তারা নিহত হত না’। বল, ‘তাহলে তোমরা তোমাদের নিজ থেকে মৃত্যুকে দূরে সরাও যদি তোমরা সত্যবাদী হও’-সূরা আলে-ইমরান:১৬৮। মৃত্যু সম্পর্কে আল্লাহর স্পষ্ট উল্লেখ, এটি একান্তই তাঁর ইচ্ছাধীন। এখানে অন্য কারো কোনো অংশ নেই। তাই নিজেদের পক্ষ থেকে সাধ্যমত সুরক্ষা গ্রহণ করেই এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।

আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণে যারা এগিয়ে আসবে তাদের সুরক্ষা দানের দায়িত্ব একান্তই আল্লাহর। কারণ রব হিসেবে সমগ্র সৃষ্টির লালন- পালন ও পরিচর্চার দায়িত্ব আল্লাহর এবং তাঁর পক্ষে যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারা যথার্থই তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি।

🟥🟪 সবাই মৃত্যু থেকে পালায়।
মানুষ মৃত্যু থেকে পালাতে চায় কিন্তু টুডে ওর টুমরো তাকে মৃত্যুর কাছে ধরা দিতেই হয়। মোটকথা মৃত্যুর নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন মৃত্যু থেকে কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারে না।
শুধু মানুষ নয় বরং প্রত্যেকটা প্রাণী মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত।
কোন হিংস্র জন্তু বা সাপ দেখলে আমরা দৌড়ে পালিয়ে যাই। কোন বিপদের সম্ভাবনা দেখলে আমরা ওই এলাকা এড়িয়ে যাই। বজ্রপাত হলে আমরা ভয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেই। এবং যেকোনো অসুখ হলে আমরা ডাক্তার এবং ঔষধ এর শরণাপন্ন হই। ঔষধ খাই আমরা এজন্য যে, ওসব ভালো না হলে আমরা মরে যাব। মোটকথা এই যে আমাদের তৎপরতা সবগুলো মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। মৃত্যু আমাদের সকল প্রচেষ্টা আত্ম অহমিকা, মেধা মনন, ও জীবনের সবকিছুকে প্লান করে দেয়।
কখন আসবে কেউ তা জানে না।
জানেন শুধু একমাত্র আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা।
পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, কেউ জানে না আগামীকাল সে কি করবে আর কেউ জানে না কখন কোথায় কিভাবে তার মৃত্যু হবে”!

🟥🟪কয়েকদিন আগে ভাইরাল হওয়া একটি ঘটনা–
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির একটা ছেলের মারা যাওয়ার খবর দেখে হুট করেই মনে হলো, মৃত্যু ছাড়া আমাদের আসলে নিজের বলতে আছেটা কী?

এই ছেলেটা গ্র্যাজুয়েশন করেছে। বিয়ে করেছে। দুইটা বাচ্চা আছে। বৌ আছে। ৪১ তম বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছে। ৪৩ তমর ভাইবাও দিয়ে ফেলেছে।

এই এতো এতো স্ট্রাগল, এতো এতো পরিশ্রম এক মুহূর্তে শূণ্য হয়ে গেল, ছেলেটার তাহলে নিজের বলে থাকলো কী?

ভালো ক্যারিয়ার, অসম্ভব পরিশ্রম করে তিলে তিলে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার, এই ক্যারিয়ারটাও কি আসলে আমার নিজের? না তো। এই ক্যারিয়ারে মায়ের ভাগ আছে, বাপের ভাগ আছে, ভাইয়ের লেখাপড়া আছে, বোনের বিয়ে আছে, বৌ এর শখ আছে, বাচ্চার দুধ আর খেলনাও আছে।

এবং এই একটা ক্যারিয়ার বানানোর জন্য মানুষরে সবকিছুই ছাড়তে হয়। লিটারালি সবকিছুই। টাকার ব্যাপারটা তো আছেই, সময়ের ব্যাপারটাও খুব ভাইটাল। চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে বহু ছেলেমেয়ে ট্যুর দেওয়া ছেড়ে দেয়, বই পড়া ছেড়ে দেয়, প্রেম করা ছেড়ে দেয়, রেস্টুরেন্টে খাওয়া ছেড়ে দেয়, এমনকি অনেকে তো ইবাদত পর্যন্ত করতে পারে না।

একবার এক ভাইরে রাতের বেলা অনেক নামাজ পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করে জানছিলাম, সারাদিন ল্যাবে কাজের ঠেলায় নামাজটা পর্যন্ত পড়তে পারেন নাই। খাওয়া তো দূরের কথা। মলিন হাসি মুখে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি ধনী হইতে চাই না ভাই, শুধু এতোটুকু অবসর চাই, যতটুকু অবসর পাইলে আমি একটু শান্তিমতো নামাজটা পড়তে পারি।

কেউ সরারাত ফোন নিয়ে রাতে দাঁড়াইয়া থাকে, বাপ অসুস্থ, বাপের কাছে যাইতে পারে না। শুধুমাত্র একটা ক্যারিয়ারের জন্য। একটা ব্রাইট ফিউচারের জন্য।

সমস্যা হলো, ফিউচার প্ল্যানে আমরা সবকিছুই ইনক্লুড করি, শুধু #মৃত্যুটছাড়া। আমাদের প্ল্যানে পরিবার থাকে, প্রেমিকা থাকে, গাড়ি থাকে, বাড়ি থাকে, বাট #মৃত্যুটাথাকে_না।

অথচ মৃত্যুটাকে প্ল্যানে রাখতে পারলেই কিন্তু আমার আপনার অনেক প্রায়োরিটি লিস্ট চেঞ্জ হয়ে যাবে। সেন্টমার্টিন ট্যুরটা দিয়ে ফেলা যাবে, ওয়্যার এন্ড পিসটা পড়ে ফেলার সময় হবে, তাহাজ্জুদ পড়ার সময়টাও বের করে ফেলতে পারবেন। কারণ, আপনি জানেন, মৃত্যু ওয়েট করতেসে। আপনার হাতে খুব বেশি সময় নাই।

না, আমি নিজে বোহেমিয়ান টাইপ মানুষ না, আপনাকেও বাউন্ডুলে হতে বলতেসি না। বরং পরিবারকে আমরা ওউন করবো, ভালোবাসবো, দায়িত্ব পালন করবো, সবটাই করবো।

সাথে সাথে ওউন করে নিবো আমাদের দুর্বলতাকেও, আমাদের #মৃত্যুকেও।

তখন দেখবেন, কিছু কাজ যেইটা আপনি একান্তই আপনার বলে অবহেলায় ফেলে রেখেছেন, কাজটা আপনার করা হয়ে যাবে। মৃত্যু আপনার পরিবারের পাশাপাশি আপনাকেও আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।

জীবন নিয়ে প্ল্যান করার সময় একটা জিনিস মাথায় রাইখেন, জীবনটা আপনার না। এইখানে আপনার ভাগ কম। আপনার জীবন আপনার চোখের সামনেই ভাগ করে নেবে আপনার পরিবার, আপনার বন্ধু বা আপনার আত্মীয়রা।

কিন্তু #মৃত্যুটা আপনার #একান্তই_নিজের। আপনার মৃত্যুর ভাগটা কেউ নেবে না, ঐটা আপনাকেই নিতে হবে। তাই, যে কোন প্ল্যানে জীবনের আগে মৃত্যুর কথাটা থাকা চাই। কষ্ট করতে করতে নিজেরে যন্ত্র করে ফেলার আগে মনে থাকা চাই কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের লেখা দুইটা লাইন,

“মৃত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই,
জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয় খুব প্রকাশ্যেই।”
জীবমাত্রই মৃত্যু রয়েছে। আল্লাহর ভাষায়, كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ ۗ ‘ প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করবে’- সুরা আলে ইমরান ১৮৫। কী আস্তিক, আর কী নাস্তিক কেউ তা অস্বীকার করে না।

পার্থক্য হলো, আস্তিক মৃত্যু পরবর্তী জীবন বিশ্বাস করে এবং সেই আলোকে সে দুনিয়ার জীবনটা পরিচালনা করে। মৃত্যু এজন্যই, যাতে নেক ও বদ আমলের বিনিময়ে মানুষ জান্নাত বা জাহান্নাম ভোগ করতে পারে।

অনিবার্য সত্যের মুখোমুখি
মৃত্যু এ দুনিয়ার সকল আনন্দ, ভোগ-বিলাস মুহূর্তেই শেষ করে দেয়। মৃত্যুর কথা স্মরণ হলে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। একজন কাফিরের জন্য মৃত্যু যতখানি ভয়ের, মুমিনের জন্য ততখানি নয়।

এ দুনিয়ায় মুমিনের নামাজ-রোজা ও সকল নেক আমলের পেছনে একটিই লক্ষ্য, মৃত্যুর পরে সে যেন আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত পায়। জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব সম্পর্কে সে পুরোপুরি অবহিত; তাই মৃত্যুকে নয়, জাহান্নামের আজাবকে সে ভয় পায়।

মুমিনের মৃত্যু মানে রবের সান্নিধ্যে
মুমিন হয় সাহসী, চলার পথে সব ধরনের সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে সে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে এগিয়ে যায় এবং সে জানে মৃত্যুর বিষয়টি একান্তই আল্লাহর হাতে। আল্লাহর বাণী, ۗ وَاللَّهُ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ আল্লাহ জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা- সূরা আলে-ইমরান:১৫৬ । সে আরো জানে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রোগ-মহামারি কোনো কিছুই তাকে মৃত্যু দিতে পারে না, যদি আল্লাহ না চান এবং মৃত্যুর সময় সুনির্দিষ্ট। আল্লাহর কথা,

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتٰبًا مُّؤَجَّلًا ۗ وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الْءَاخِرَةِ نُؤْتِهِۦ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِى الشّٰكِرِينَ -আর কোন প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারা যায় না, তা নির্দিষ্টভাবে লিখিত আছে। আর যে দুনিয়ার প্রতিদান চায়, আমি তা থেকে তাকে দিয়ে দেই, আর যে আখিরাতের বিনিময় চায়, আমি তা থেকে তাকেও দেই এবং আমি অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেব। সূরা আলে-ইমরান:১৪৫

সুরা আল ইমরানের বেশ কিছু আয়াত আমি এখানে উদ্ধৃত করেছি। মূলত এই অংশটি ওহুদ যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অবতীর্ণ এবং এসব আয়াতে সেই যুদ্ধেরই পর্যালোচনা করা হয়েছে। আল্লাহপাক আমাদের তাঁরই সৃষ্ট এক অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছেন। সেই যুদ্ধের সৈনিক হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ডাক্তার-নার্স, ত্রাণকর্মী-স্বেচ্ছাসেবক এবং তাদের সহযোগী হলেন দেশের জনগণ।

বিপদ মানুষের পাপের প্রতিফলন
মহামারি, ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস বা বিপদ- মুসিবত যাই বলি, তা নিজ থেকে আসে না, আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।আল কুরআনে, مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَمَن يُؤْمِنۢ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُۥ ۚ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ-সূরা আত-তাগাবুন:১১।

আল্লাহর ভাষায়, এসবই আমাদের হাতের কামাই। মানুষ যখন সীমালঙ্ঘন করে এবং জমিনে অশ্লীলতা ও পাপাচার বেড়ে যায় তখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য নানাবিধ বালা-মুসিবত দিয়ে থাকেন। করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই লাখের কাছে মানুষ মারা গেছেন। মানুষ তার জ্ঞান-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এটিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, এই বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে, তাই বৈষয়িক সকল ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের আল্লাহরই কাছে ফিরে আসতে হবে।

রবের পক্ষ থেকে সতর্কতা
প্রশ্ন উঠতে পারে, মহামারি যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে, সেহেতু সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে আমরা আল্লাহর কাছে ধর্ণা দিতে পারি এবং নামাজ, রোজা ও দোয়া-দরুদের মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করতে পারি। কিন্তু এটি আল্লাহর সুন্নাহর (নিয়ম) বিপরীত। মানুষ তো আল্লাহরই প্রতিনিধি।

তাকে জ্ঞান-বুদ্ধি ও যোগ্যতা দিয়ে সকল সৃষ্টির ওপর ক্ষমতাবান করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজন তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা। পৃথিবীতে যত রোগ-ব্যাধি আছে, আল্লাহ তার আরোগ্যেরও ব্যবস্থা রেখেছেন। সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টার পাশাপাশি যারা নিজেদেরকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে পারবে তারাই সফলকাম এবং তারাই হবে সৌভাগ্যের অধিকারী।

করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক ব্যাধি। ফলে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। কোনো বাসায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার সকল প্রিয়জন তার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে; এমন কি দাফন-কাফনেও শরীক হতে রাজী হচ্ছে না। আখিরাতের সেই চিত্রই যেন পরিস্ফুট হচ্ছে। সেদিন আপনজনরা একে অপর থেকে পালাবে। এই করোনা ভাইরাস আল্লাহর অনেক বান্দাকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে ফিরিয়ে এনেছে এবং অনেকে মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করে নেকির পাল্লাকে ভারি করতে সক্ষম হয়েছে।

বিপদে অগ্রগামীদের মৃত্যু
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও সেবা-যত্ন এবং ত্রাণ বিতরণ সবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ বলেই সেখানে গেলে কি কারো মৃত্যু অনিবার্য? মোটেই না, মৃত্যুর ফয়সালাটা সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ۗ قُل لَّوْ كُنتُمْ فِى بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ إِلٰى مَضَاجِعِهِمْ ۖ وَلِيَبْتَلِىَ اللَّهُ مَا فِى صُدُورِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِى قُلُوبِكُمْ ۗ ‘তোমরা যদি তোমাদের ঘরে থাকতে তাহলেও যাদের ব্যাপারে নিহত হওয়া অবধারিত রয়েছে, অবশ্যই তারা তাদের নিহত হওয়ার স্থলের দিকে বের হয়ে যেত।

আর যাতে তোমাদের মনে যা আছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহে যা আছে তা পরিষ্কার করেন। আর আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত’-সূরা আলে-ইমরান:-১৫৪। আল্লাহ আরো বলেন, الَّذِينَ قَالُوا لِإِخْوٰنِهِمْ وَقَعَدُوا لَوْ أَطَاعُونَا مَا قُتِلُوا ۗ قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ যারা তাদের ভাইদেরকে বলেছিল এবং বসেছিল, ‘যদি তারা আমাদের অনুকরণ করত, তারা নিহত হত না’। বল, ‘তাহলে তোমরা তোমাদের নিজ থেকে মৃত্যুকে দূরে সরাও যদি তোমরা সত্যবাদী হও’-সূরা আলে-ইমরান:১৬৮। মৃত্যু সম্পর্কে আল্লাহর স্পষ্ট উল্লেখ, এটি একান্তই তাঁর ইচ্ছাধীন। এখানে অন্য কারো কোনো অংশ নেই। তাই নিজেদের পক্ষ থেকে সাধ্যমত সুরক্ষা গ্রহণ করেই এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।

আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণে যারা এগিয়ে আসবে তাদের সুরক্ষা দানের দায়িত্ব একান্তই আল্লাহর। কারণ রব হিসেবে সমগ্র সৃষ্টির লালন- পালন ও পরিচর্চার দায়িত্ব আল্লাহর এবং তাঁর পক্ষে যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারা যথার্থই তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি।