রমজান মাসে কি কবরের আজাব বন্ধ থাকে!?!

📘📕 রমজানে অর্থাৎ রোজার মাসে কবর বারযাখের আজাব বন্ধ থাকে, মূলত এটি একটি ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন কথা। অনেককেই বিশেষ করে অনেক আলেম ওলামাকে বলতে শোনা যায়, ‘রমজান মাসে কবরের আজাব মাফ থাকে’।আবার আরো একটু আগ বাড়িয়ে একথাও বলতে শোনা যায় যে, ‘দাফনের পর জুমা বা রমজান এলে কেয়ামত পর্যন্ত কবরের আজাব বন্ধ থাকে।
👉👉 আসল কথা হল,মানুষের এমন ধারণা ঠিক নয়, এটি একটি ভিত্তিহীন ধারণা। তাছাড়া অনুমান ধারণা থেকে কথা বলতে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কোরআন-সুন্নায় এ সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়নি বা কোন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি ।
তবে আল্লাহ তাআলা সবার বারযাখ অর্থাৎ কবরের আজাব মাফ করে দিতে পারেন যেকোনো সময় ।
মূলতঃ কবরের আজাব হওয়া না-হওয়ার সঙ্গে রমজানের কোনো সম্পর্ক নেই। কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ মৃত্যু পরবর্তী বারযাখি জীবনে কবরে অথবা অন্য কোথাও কোন ব্যক্তির ঈমান ও নেক আমলের সঙ্গে আজাব হওয়া না হওয়ার সম্পর্ক।

মানুষের উচিত এই জাতীয় অনুমান ও ভিত্তিহীন ধারণা অথবা কথাবার্তার দ্বারা প্রবাহিত না হয়ে, এমনসব আমল করা ও সেই সব আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া, যার মাধ্যমে মৃত্যু পরবর্তী বারযাখের জীবন তথা কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বারজাখি জীবনের আজাবকে কবরের আজাব হিসাবে উল্লেখ করা হয়; কেননা বেশিরভাগ মানুষকেই মৃত্যুর পর কবর দেওয়া হয় অর্থাৎ গ্রাউন্ডেড করা হয়। কিংবা অন্যভাবে তার লাশ ধ্বংস হলে কিংবা পুড়ে ফেললেও তা মূলত ধ্বংসাবশেষ মাটির মধ্যেই ফিরে যায় অর্থাৎ গ্রাউন্ডেড হয়ে যায়।
এইজন্য বাহ্যিক অর্থে এবং সার্বিকভাবে এটাকে কবরের আজাব বলা হয়ে থাকে। কেননা কেউ কেউ বলে থাকেন যে অনেকের তো কবর হয় না বরং তাদের পুড়ে ফেলা হয় অথবা বিভিন্ন জীবজন্তু খেয়ে ফেলে তখন তাদের আজাব হয় কি করে। মূলত তাদের এই ধারণা ও কথাবার্তা ভিত্তিহীন ও নিজের সাথেই প্রতারণার শামিল।
যাইহোক, রোজার মাসের সাথে কিংবা রোজার মাসের বরকতের সাথে কবরের আজাবের এর কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটি একটি রহমত বরকত মাগফেরাতের মাস এবং পুরো মাস ধরেই রহমত বরকত মাগফেরাত হতে থাকে। তার এরই মধ্যে যদি আল্লাহ কাউকে ক্ষমা করে দেন, তা একান্তই আল্লাহর রহমত। রমজানের বাইরেও আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করেন।

👉👉তবে হ্যা, রোজা রাখা অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। অথবা যে কোন এবাদতরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এইজন্যই আল্লাহর নিকট চাইতে হয়, হে আল্লাহ আমার মৃত্যু দান করুন অবশ্যই ঈমানের সহিত, এবাদত তত অবস্থায়, সুস্থ শরীরে এবং প্রিয়জনদের মাঝে (আমিন) । হাদিসে এসেছে, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখে এবং এ রোজা হয় তার জীবনের শেষ আমল (অর্থাৎ রোজা অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
–মুসনাদে আহমাদ ২৩৩২৪; বায়হাকি ৬৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১১৯৩৫)
এ হাদিসের আলোকে জানা যায়, রোজাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দেবেন।
কিন্তু রমজান মাসে কবরের আজাব বন্ধ থাকে, এমনটি কোথাও পাওয়া যায় না।

সম্ভবত যে কারণে মানুষ এমনটি মনে করে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-.
‘যখন রমজানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়(অবশ্য মানুষ শয়তানগুলো ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় থাকে আর এই জন্য রমজান মাসে শয়তানেও চলতে থাকে! আর তাই মানুষ শয়তান এবং জিন শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য আল্লাহ বলেছেন, তোমরা বলো- “মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাছ”আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই মানুষ শয়তান আর জ্বিন শয়তান থেকে) ।
এ মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়,একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরো অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। –ইবনে মাজাহ ১৬৪২; ইবনে খুযায়মা ১৮৮৩; মুসতাদরাকে হাকেম ১৫৩২।।
আর এই সকল হাদিসের মর্মার্থ হল, এই মাসে ব্যাপক কল্যাণ বর্ষিত হয় এবং অকল্যাণ থেকে মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করা হয়।।।

উপরের হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’- এখান থেকে হয়ত কারও মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, তাহলে রমজানে কবরের আযাবও বন্ধ থাকে। আর এই সকল ধারনা থেকেই মানুষ নিজে মন থেকে বানিয়ে এই সমস্ত কথা বলে থাকেন যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম থেকে এ কথা প্রমাণিত নয়।

হাদিস শাস্ত্র বিশারদ এবং বিজ্ঞ আলেমদের মতে, রমজানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে, প্রতি রাতে আল্লাহ বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং রোজাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- এগুলো বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু রমজানে কবরের আজাব বন্ধ থাকে- হাদিসের এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।

Leave a comment